২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

তওবাকারী আল্লাহর বন্ধু

তওবাকারী আল্লাহর বন্ধু - মুফতি জাকারিয়া মাসউদ - ফাইল ছবি

যখন কোনো ব্যক্তি গুনাহ করার পরে আল্লাহর কাছে তওবা করে ফিরে আসে ওই ব্যক্তি তখন আল্লাহর বন্ধু হয়ে যায়। বিশ^নবী সা: বলেন, তোমরা যদি গুনাহ না করো তবে আল্লাহ তোমাদেরকে সরিয়ে দেবেন এবং তোমাদের স্থলে আল্লাহ তায়ালা অন্য এমন জাতিকে সৃষ্টি করবেন যারা গুনাহ করবে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করবে আর আল্লাহও তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। (মুসলিম)

মানুষমাত্রই গুনাহ করে। গুনাহ করা যেহেতু মানুষের স্বভাব তাই গুনাহ হতেই পারে। কিন্তু গুনাহ হওয়ার পরে তওবা না করা এবং সেই গুনাহের কাজে অটল থাকা হলো মারাত্মক অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা সবসময় বান্দার দিকে চেয়ে থাকেন কখন তাঁর বান্দা গুনাহ করার পরে তার অন্যায় স্বীকার করবে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে যাবে আর আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তওবাকারী এবং যারা অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাকে তাদের পছন্দ করেন। (সূরা বাকারা ২২২)
আল্লাহ তায়ালা তওবাকারীদের জন্য ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন পবিত্র কুরআন পাকে। ইরশাদ হচ্ছে, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মনে কী আছে তা ভালোই জানেন। যদি তোমরা সৎ হও, তবে তিনি তওবাকারীদের জন্য ক্ষমাশীল। (বনি ঈসরাইল ২৫)

মহান আল্লাহ তায়ালা তওবাকারীদের জন্য সুসংবাদ দিয়ে ইরশাদ করেন, তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোজার, দুনিয়ার সাথে সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকু ও সেজদাকারী, সৎ কাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃত্তকারী এবং আল্লাহর দেয়া সীমাসমূহের হেফাজতকারী। বস্তুত সুসংবাদ দাও ঈমানদারদেরকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি তওবা কবুলকারী পরম দয়ালু। ( সূরা আল বাকারা ১৬০)

কোনো মানুষ যখন অপরাধ করার পরে ভুল বুঝতে পেরে তওবা করে এবং কৃত ভুল থেকে ফিরে আসে তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর তওবা কবুল করে নেন। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, অতঃপর যে তওবা করে স্বীয় অত্যাচারের পর এবং সংশোধিত, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর তওবা কবুল করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা আল মায়িদাহ ৩৯)

সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানব বিশ^নবী হজরত মুহাম্মদ সা: থেকেও তওবার অনেক গুরুত্ববহ বাণী পাওয়া যায়। বিশ্বনবী সা: বলেন, আদম সন্তান সবাই অপরাধ করে। অপরাধীদের মধ্যে উত্তম তারাই যারা তওবা করে। (তিরমিজি) শুধু তাই নয়, বরং তওবার দ্বারা আল্লাহর দরবারে সম্মান বৃদ্ধি হয়। সে কারণেই রাসূলুল্লাহ সা:-এর আমলের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায় যে, তাঁর জীবনে কোনো গুনাহ না থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০-১০০ বার ইস্তেগফার পাঠ করতেন।

গুনাহ দুই ধরনের। একটা হলো ছোট গুনাহ যার শাস্তি লঘু। অপরটি বড় গুনাহ যার শাস্তি শরিয়ত নির্ধারণ করেছে, যেমন নেশা করা, ব্যভিচার করা, সুদ খাওয়া ইত্যাদি। দুই ধরনের গুনাহ থেকেই তওবা করা যায়। তওবা কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হলো : ১. সংশ্লিষ্ট গুনাহের কাজটিকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা। ২. কৃত অপরাধের কারণে লজ্জিত হওয়া। ৩.ভবিষ্যতে পুনরায় ওই গুনাহে লিপ্ত হবে না এই মর্মে অঙ্গীকার করা। ৪. অন্যায় কাজটি যদি মানুষের অধিকারসংশ্লিষ্ট হয় তবে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। শর্ত মেনে যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে তওবা করে তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তা কবুল করবেন এবং সে আল্লাহর বন্ধু হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের বুঝে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

লেখক : প্রধান মুফতি, কাশফুল উলুম নেছারীয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স, নেছারীবাদ, সিংড়া, নাটোর


আরো সংবাদ



premium cement