২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শিশুদের সাথে হাসিখুশি আচরণ

শিশুদের সাথে হাসিখুশি আচরণ - আলী হুসাইন - ফাইল ছবি

শিশুকে মানসিক চাপে রাখা উচিত নয়। সব সময় তার সাথে গাম্বীর্যপূর্ণ আচরণ দেখাতে যাবেন না। আপনার ভয়ে বা আপনার ব্যক্তিত্বের প্রভাবে যেন সে কাচুমাচু না হয়ে যায়, জড়সড় না হয়ে থাকে। বরং তার সাথে স্বাভাবিক ও হাসিখুশি আচরণ করবেন। তার সাথে হাসিঠাট্টা করবেন, রসিকতা করবেন। তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন, মাঝে মধ্যে তার সাথে এমনভাবে কথা বলবেন যেন কোনো বড় মানুষের সাথে কথা বলছেন। যেমন কেমন আছো? কী খবর তোমার? তুমি কী পছন্দ করো? কী খেলতে ভালোবাস? মূলত বড়দের পক্ষ থেকে এটা হচ্ছে ছোটদের প্রতি সোহাগ ও প্রীতির নিদর্শন। তবে খেয়াল রাখতে হবে : রসিকতা ও আমোদ-প্রমোদে মিথ্যা, ধোঁকার সংমিশ্রণ যেন না থাকে। রসিকতা করতে গিয়ে কারো সম্মানহানি কিংবা কারো মনে আঘাত করবেন না। এমনটি করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ।

রাসূলের হাসিখুশি আচরণরাসূলুল্লাহ সা:-এর আচার-ব্যবহার ছিল অপূর্ব। সব বয়সের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন সর্বাধিক ভালোবাসার পাত্র। তিনি সাহাবাদের আদেশ নিষেধ করতেন, পাশাপাশি তাদের সাথে বিনোদনমূলক ব্যবহারও করতেন। হাসিঠাট্টা করতেন। হজরত আনাস রা: বলেন, রাসূল সা: আমাদের সাথে মিশতেন, তিনি আমাদের সাথে হাসিখুশি ও স্বাভাবিক আচরণ করতেন। একদিন রাসূল আনাস রা:কে লক্ষ করে বললেন, হে দুই কানবিশিষ্ট ব্যক্তি। (আবু দাউদ, তিরমিজি)। এখানে তিনি বিনোদনের মাধ্যমে আনাসের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন এবং তার মনে আনন্দ দিয়েছেন।

আনাস রা: আরো বলেন, একদিন আমার ছোটভাই যে মাত্র বুকের দুধ ছাড়িয়েছে, তাকে সম্বোধন করে বলেন, ‘হে আবু উমাইর! তোমার নুগাইরের ( চড়–ই পাখির ছানা কোথায় গেল)? (বুখারি ও মুসলিম)

এভাবে রাসূল সা: শিশুদের সাথে মিশতেন, রসিকতা করতেন এবং আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ করতেন। আল্লামা ইবনে হাজার রা: বলেন, এ হাদিসে রসিকতা করা এবং বিনোদনমূলক কাজের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ বৈধতা কোনো ছাড় নয় বরং এটা সুন্নত। যে শিশু ভালো-মন্দ নির্ণয় করতে পারে না তার সাথেও রসিকতা বৈধ। (ফতহুল বারী ১০/৫৮৪)

উম্মে খালেদ বর্ণনা করেন, একদিন রাসূলুল্লাহর কাছে কিছু কাপড় এলো, যার মধ্যে দু’দিকে পাড়ওয়ালা ছোট একটি নকশি ওড়না ছিল। তিনি ভাবতে লাগলেন এটা কাকে দেয়া যায়? তিনি বললেন, তোমরা কি বলো এটা কাকে দেয়া যায়? উপস্থিত সবাই চুপ থাকলেন। পরক্ষণেই একজনকে বললেন, উম্মে খালেদকে নিয়ে এসো। তো উম্মে খালেদকে আনা হলে রাসূলুল্লাহ নিজের হাতে ছোট্ট ওড়নাটা তার মাথায় পরিয়ে দিলেন এবং বললেন, তুমি এটা ব্যবহার করে পুরনো করে ফেলো। সেই কাপড়টির মধ্যে হলুদ অথবা সবুজ চিহ্ন বিদ্যমান ছিল, অতঃপর রাসূল তাকে বললেন, হে উম্মে খালেদ! (হে খালেদের মা) হাজিহি সানাহ! হাজিহি সানাহ! (এটা হলো ইথিওপিয়ানদের জাতীয় প্রতীক, আর তাদের প্রতীক সুন্দর।) উম্মে খালেদের কচি মুখখানা ফুলের মতো সুন্দর হাসি

তে ভরে গেল। আর তার কানে বাজতে লাগল নবীজীর কথা ‘উম্মে খালিদ হাজিহি সানাহ’!
এখানে রাসূলুল্লাহ সা: উম্মে খালেদের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। এক. তাকে বয়স্ক মানুষের মতো খালেদের মা বলে সম্বোধন করেছেন অথচ সে তখন একজন শিশু মাত্র।

দুই. উম্মে খালেদের জানা ‘সানাহ’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। যার অর্থ সুন্দর, চমৎকার। হাবাশায় হিজরতকারীদের মধ্যে উম্মে খালেদও ছিল, সে হাবাশার কিছু কিছু ভাষা শিখে ফেলে তাই রাসূলুল্লাহ সা: তার মনোরঞ্জনের জন্য তার জানা শব্দটিই ব্যবহার করেন।

আবদুল্লাহ বিন শাদ্দাদ বিন হাদ রা: তার পিতা সূত্রে বর্ণনা করেন, একবার রাসূলুল্লাহ সা: আমাদের কাছে দ্বিপ্রহরের কোনো এক নামাজ জোহর বা আসরের জন্য হাসান বা হুসাইনকে নিয়ে বের হলেন। অতঃপর তাকে তার ডান পায়ের কাছে রেখে নামাজে দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘ লম্বা একটি সিজদা করলেন। সাদ্দাদ বলেন, আমি রাসূলের বিলম্ব দেখে কাতারের মাঝে মাথা উঠিয়ে দেখি রাসূল সিজদারত অবস্থা আর একটি শিশু তার পিঠের ওপর চড়ে বসে আছে। অতঃপর আমি আবার সিজদায় ফিরে যাই। নামাজ শেষে উপস্থিত লোকেরা বলল হে রাসূলে খোদা! আজকের এই নামাজে আপনি এমন একটি লম্বা সিজদা করলেন যা ইতঃপূর্বে কখনো করেননি। আপনি কোনো বিষয়ের নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছেন নাকি আপনার ওপর ওহি আবর্তন হচ্ছিল। রাসূল সা: উত্তর দিলেন এসবের কোনোটিই নয়। আমার নাতি আমাকে বাহন বানিয়ে পিঠে চড়ে বসেছিল, তার আনন্দে বিঘ ঘটবে এ জন্য তাড়াহুড়া অপছন্দ করি। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস ১১৪১। মুসনাদে আহমাদ, ২৭৬৮৮)

আয়শা রা: বলেন, রাসূল সা: আমার কাছে প্রবেশ করেন তখন আমি পুতুল খেলছিলাম! পর্দা উঠিয়ে রাসূল বললেন এটা কী? হে আয়শা! আমি বললাম এগুলো খেলনা হে রাসূলে খোদা! তিনি একটি পুতুলের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন এটা কী? হে আয়শা, আমি বললাম এটা ঘোড়া হে রাসূলে খোদা, রাসূল বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, কাপড়ের ঘোড়া তার আবার ডানা! আমি রাসূলকে উত্তর দিলাম হজরত সুলাইমান বিন দাউদ আ:-এর ঘোড়া কি ডানাবিশিষ্ট ছিল না? আয়শার এ উত্তরে রাসূল সা: হেসে দিলেন, ফলে রাসূলের দাঁতের মাড়ি পর্যন্ত দেখা গেল। (আবু দাউদ, হাদিস ৪৯৩৪)

তিনি আরো বলেন, হাবাশিরা যখন মসজিদে পরস্পরে কুস্তাকুস্তি খেলছিল, রাসূল তাঁর চাদর দিয়ে আমাকে আড়াল করে রাখেন আর আমি তাঁর কাঁধের ওপর ভর করে ফাঁক দিয়ে তাদের খেলা দেখছিলাম, এ থেকে তোমরা বুঝে নাও একজন কম বয়সী বালিকার খেলাধুলায় কী রূপ নেশা ছিল। এসব ঘটনা দ্বারা বোঝা গেল একজন অভিভাবকের কর্তব্য হলো ছোট ছেলেমেয়েদের সাথে এ ধরনের খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনমূলক আচরণ করা এবং তাদের খেলাধুলার জন্য সময় সুযোগ করে দেয়া যেন তারা প্রাণবন্ত সজীব-সতেজ ও উদ্যমী হয়ে ওঠে এবং সব একঘেয়েমি দূর হয়ে যায়। বাস্তবিক পক্ষে এসব বিষয়, শরিয়তের সাথে কোনো সাংঘর্ষিক নয়। তবে অবশ্যই খেলাধুলা করতে গিয়ে শরিয়তের কোনো বিধান লঙ্ঘন করা যাবে না।

লেখক : মুহাদ্দিস, মারকাজুল ফিকহিল ইসলামী, উত্তরা, ঢাকা।


আরো সংবাদ



premium cement
সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবার কবরে শুয়ে ছেলের প্রতিবাদ ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরো ৭১ জন নিহত পানছড়ি উপজেলায় চলমান বাজার বয়কট স্থগিত ঘোষণা আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করেছে : দুদু যুক্তরাষ্ট্র টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের এন্ডারসন লড়াই ছাড়া পথ নেই : নোমান জার্মানির অর্থ যেভাবে সিরিয়ায় যুদ্ধাপরাধে ব্যবহার হচ্ছে জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেনের মেয়াদ বাড়ল

সকল