২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নিজের ও মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব

নিজের ও মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব - আফসারুল আলম - ফাইল ছবি

একজন মুসলমানের দিনটি কিভাবে শুরু হবে? কিভাবে কাটবে তার প্রত্যাহিক জীবন? কেমন হবে তার ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবন? একজন মুসলিমের আচরণ তার মা-বাবার সাথে কেমন হবে?

আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল অতি সাধারণভাবে তা আমাদের জন্য ব্যাখ্যা করে গেছেন। সেই নির্দেশ মতো জীবনটা গড়তে পারলে পরকালের সাথে হইকালটাও হবে সুন্দর, সত্য এবং নির্মল।

সর্বপ্রথম একজন মুসলমান নিজেকে ভালোবাসতে শিখবে। নিজের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঠিক হেফাজত করবে। হেফাজত করবে তার মনের চিন্তাচেতনার। কারণ সে জানে, তার ওপর তার শরীরের হক রয়েছে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো আল্লাহ তায়ালা তাকে আমানতস্বরূপ দান করেছেন। এই আমানতের খিয়ানত করলে তার হিসাব দিতে পারবে না। তাই কখনো সে নিজের শরীরের ওপর জুলুম করবে না। সে ঘুম এবং বিশ্রামের ক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা অবলম্বন করবে। রাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে যেমন সওয়াবের আশা করবে তেমনি ঘুমিয়েও সওয়াবের আশা রাখবে। তার শরীর, পায়ের পাতা, নখ, চুল ও দাড়ি থাকবে বিন্যস্ত। শুধু শরীরই নয়, সে তার মেধা ও মননেরও যতœ নেয়। সে ভাবে তার মেধা দ্বারা মানবজাতির উন্নতি সাধিত হবে। তার চিন্তাভাবনা সমাজের সবার কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসবে। নিজের সময় ও সমাজ সম্পর্কে তার থাকবে পরিষ্কার ধারণা। সে আলেমদের সঙ্গ অবলম্বন করে। সে হালাল বিনোদন দ্বারা তার রূহেরও খোরাক জোগায়। বিজ্ঞ লোকদের অনুষ্ঠানে যাতায়াত করে। নিজের মনকে সব ধরনের কলুষতা থেকে মুক্ত রাখে। নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করে। মূর্খদের সাথে কখনো সে তর্কে জড়ায় না। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে। নিজের তাকদিরের ওপর বিশ্বাস রেখে প্রতিযোগিতার শেষ পর্যন্ত লড়ে যায়। কারণ তার জানা আছে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি কোনো জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করি না যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই জাতি নিজ ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে। (সূরা : নাজম : ৫৩) এরপর জয়ী হতে না পারলে আল্লাহর জন্য সবুর করে। আর জয়ী হলে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানায়। সে সকাল-সন্ধ্যা জিকির করে। জায়গা মতো মাসনুন দোয়া পাঠ করে।

এরপর তার দৃষ্টি থাকবে তার মা-বাবার খেদমত করা। ফেসবুক পোস্টের ভালোবাসা নয়, রাসূলের নির্দেশ মতো প্রকৃত ভালোবাসা তার অন্তরে থাকবে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, ‘আমি নবী কারিম সা:কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কোনটি? তিনি বললেন, সময় মতো নামাজ পড়া। আমি বললাম তারপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সাথে উত্তম আচরণ করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। (সহিহ বোখারি ও মুসলিম)

সূরা আনকাবুতে এসেছে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি মানুষকে মাতা-পিতার সাথে উত্তম ব্যবহার করার আদেশ করেছি।’ (২৯ : ৮)

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলতেছেন : ‘তোমার পালনকর্তা (দুটি বিষয়ে) আদেশ করেছেন। এক. তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে। দুই. মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। (১৭ : ২৩)

এক আল্লাহর ইবাদত তথা তাওহিদের পরই বাবা-মায়ের সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ পাকের কাছে বাবা-মায়ের সাথে সদ্ব্যবহারের গুরুত্ব কত বেশি।

অন্য আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল যোগ হতে থাকে- এক. সদকায়ে জারিয়া, দুই. কল্যাণময় শিক্ষা ও তিন. এমন সৎ সন্তান যে মৃত পিতা-মাতার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম)

একজন বাবার মাধ্যমেই সন্তানের জীবনের শুরু হয়। কোনো সন্তান কখনো মা-বাবার ঋণ পরিশোধ করতে পারে না। কঠোর শাসন, মধুর ভালোবাসায় সিক্ত তার হৃদয়, তিনিই তো বাবা। আর মায়ের কোনো সংজ্ঞাই নেই, যাকে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। মা-বাবারা যেকোনো ধরনের দুঃখ-কষ্ট অকাতরে সহ্য করেন।

তাই একজন মুসলমান কখনো তার বাবা-মায়ের সাথে রেগে কথা বলবে না, তাদের সাথে কথা বলতে হবে নরম সুরে, কোমল ভাষায়। আল্লাহর শিখানো দোয়াটি সবসময় মা-বাবার জন্য বলতে থাকবে। বিয়ের পর স্ত্রীর অভিযোগ শুনে কখনো মাকে বা বাবাকে জবাবদিহিতার সামনে ফেলবে না। মাকে মায়ের যোগ্য সম্মান মৃত্যু অবধি দেবে। তেমনি বাবাকেও মৃত্যু অবধি সম্মান দিতে থাকবে।

কুরআন একজন মুসলমান তথা আমাদের কত সুন্দরভাবে বাবা-মায়ের হক আদায়ের শিক্ষা দিয়েছে। কুরআনের শিক্ষাই শ্রেষ্ঠ শিক্ষা। সুতরাং আমরা কুরআনের শিক্ষা অনুসরণ করব এবং আল্লাহর কাছে প্রকৃত ঈমানদার হিসেবে যাওয়াই হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক : পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement