১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মাকামে ইবরাহিম : কুদরতে ইলাহির অনন্য নিদর্শন

মাকামে ইবরাহিম : কুদরতে ইলাহির অনন্য নিদর্শন - ছবি : সংগৃহীত

কাবা শরিফের পূর্বদিকের তাওয়াফ ভূমিসংলগ্ন কাচে ঘেরা মিনার সদৃশ্য ছোট ঘরটিতে রয়েছে জান্নাতি এক খণ্ড বর্ঘাকৃতির পাথর। এর ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম আ: কাবাঘর পূর্ণ নির্মাণ করেছিলেন। পাথরের ওপর তার কদম মুবারক রাখলেই সেটা নরম হয়ে যেত এবং হজরতের কদম মুবারক পাথরের ভিতর চার আঙ্গুল পরিমাণ দেবে যেত, যাতে নির্মাণ কাজ আঞ্জাম দানের সময় পা পিছলে না যায়। এমনকি এটা ইবরাহিম আ: আপন ইচ্ছানুযায়ী উপরে- নিচে, ডানে- বামে নিয়ে গিয়ে নিজ প্রয়োজন অনুসারে কাজ করেছিলেন অবলীলায়। কাবাঘর নির্মাণ শেষে ইবরাহিম আ: পাথরটি এ জায়গায় স্থাপন করেন।

কালামুল্লাহ শরিফে এ পুণ্য পাথরের মহিমা বর্ণনায় এটিকে মাকামে ইবরাহিম বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং নামাজের স্থানরূপে গ্রহণ করার জন্য আদেশ করা হয়েছে। তাই পবিত্র কাবাগৃহের তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহিমকে সামনে নিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয়। এ থেকে বোঝা যায়, সাধারণ মূল্যহীন পাথরটি হজরত ইবরাহিম আ:-এর সংস্পর্শে এসে অনন্য মর্যাদার অধিকারী হয়েছে। এ কথাও প্রতীয়মান হয় যে, নামাজ সম্পন্ন করার সময় আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর প্রতি সম্মান প্রদর্শনও জায়েজ আছে। কেননা, মাকামে ইব্রাহিমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন নামাজের মধ্যে হচ্ছে।

মক্কার উম্মুল জুদস্থ জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত কর্র্মকর্তা সালেহ বিন আবদুর রহমানের সূত্রে জানা যায়, চার হাজার বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও মাকামে ইব্রাহিমে ইবরাহিম আ:-এর পদচিহ্ন অপরিবর্তিত রয়েছে। পাথরটির ওপর প্রতিটি ছাপের দৈর্ঘ্য ২৭ সেমি এবং প্রস্থ ১৪ সেমি। পাথরের নিচের অংশে রূপাসহ প্রতিটি পাথরের দৈর্ঘ্য ২২ সেমি এবং প্রস্থ ১১ সেমি। পাথরটিতে ইবরাহিম আ:-এর পদচিহ্নের গভীরতা পাথরটির উচ্চতার অর্ধেক, ৯ সেমি। দীর্ঘদিন ধরে লাখ লাখ নবীপ্রেমিকের হাতের স্পর্শের পরও আঙুলের চিহ্নগুলো এখনো বিদ্যমান। ভালো করে লক্ষ্য করলে এখনো বোঝা যায় আঙুলের চাপ, বোঝা যায় পায়ের গোড়ালির চিহ্ন। আগে পাথরটি প্রয়োজনে স্থানান্তর করা যেত। জাহেলি যুগে লোকেরা বন্যার ভয়ে মাকামে ইবরাহিমকে কাবা শরিফের মঞ্চে লাগিয়ে রাখত। হজরত উমর রা:-এর খিলাফতকালে এটি সরিয়ে বর্তমান জায়গায় বসানো হয়। একসময় পাথরটিকে একটি মিম্বরের ওপর তুলে রাখা হয়েছিল, যেন বন্যার পানি এর নাগাল না পায়। যুগে যুগে বহু শাসক মাকামে ইব্রাহিমের সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নেন। ১৬০ হিজরিতে খলিফা মাহদী হজে এসে মাকামে ইবরাহিম পাথরটির উপর থেকে নিচ পর্যন্ত রূপা দিয়ে মজবুত করে মুড়িয়ে দেন। ইতঃপূর্বে মানুষ পাথরটি হাতে ধরে দেখার সুযোগ পেয়েছিল। এখন শুধু দেখা যায়, ধরা যায় না।

কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, হজরত ইবরাহিম আ:-এর শেষ জীবনের ইবাদতের স্থান মাকামে ইবরাহিম। এর প্রতিটি অনুকণা খলিলুল্লাহর অশ্রু ধারায় সিক্ত বা সিঞ্চিত। তাঁর কর্মের অঙ্গন বিশ্ব মুসলিমের ইবাদতের স্থান। দিন-রাত এ স্থান জনাকীর্ণ। হাজী সাহেবানরা তাওয়াফ শেষে এখানে দুই রাকাত নামাজ পড়ে বারেগাহে ইলাহিতে স্বীয় মনোবাসনা কামনা করেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হারামাইনে শরিফাইনের জিয়ারত এবং মাকামে ইব্রাহিমে দুই রাকাত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন! আমীন।

লেখক : আরবি প্রভাষক, রাণীরহাট আল আমিন হামেদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম


আরো সংবাদ



premium cement