২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আল্লাহর অনুকম্পা ছাড়া জান্নাত নয়

আল্লাহর অনুকম্পা ছাড়া জান্নাত নয় - সংগৃহীত

আল্লাহর অনুগ্রহ ও কৃপা ছাড়া কোনো মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা অগ্রণী হও তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাত লাভের প্রয়াসে যা প্রশস্ততায় আকাশ ও পৃথিবীর মতো, যা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণে বিশ্বাসীদের জন্য। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তিনি এটা দান করেন; আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (হাদিদ : ২১) ওই আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি যে, মৃত্যু আসার আগেই আমাদের সৎকাজের পুঁজি সংগ্রহ করতে হবে। যাতে মানজিলে মাকসুদ জান্নাতে পৌঁছানো যায়। কিন্তু এ সৎকাজে আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত ছাড়া সম্ভব নয়। আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করলেই কেবল ভালো কাজ করতে সক্ষম হবো। রাসূল সা: বলেছেন : তোমাদের আমল তোমাদের কাউকে মুক্তি দিতে পারে না। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন আপনিও কি তদ্রƒপ, তিনি বললেন হ্যাঁ, আমিও আমার আমল দ্বারা জান্নাত লাভ করতে পারি না। আল্লাহ তায়ালার দয়া ও অনুকম্পা হলেই লাভ করতে পারি। (বুখারি : ৫৬৭৩, মুসলিম : ২৮১৬)

তাছাড়া জান্নাত যেমন একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহে লাভ করা যায় তেমনিভাবে আল্লাহর ইবাদত করার সৌভাগ্য ও আল্লাহর আনুগত্যে প্রতিযোগিতা করার সামর্থ্য কেবল তাঁরই অনুগ্রহে লাভ করা যায়। তিনি যাকে এ ব্যাপারে সুযোগ দেবেন তিনিই কেবল তা লাভ করতে পারেন। রাসূল সা: মুআয ইবন জাবাল রা:কে সালাতের পরে এ কথাটি স্মরণ করে বলার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হে মুআয আমি তোমাকে ভালোবাসি সুতরাং তুমি সালাতের পরে আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনে ইবাদাতিকা অর্থাৎ হে আল্লাহ্ আমাকে আপনার জিকির, শুকর এবং সুন্দর পদ্ধতিতে ইবাদত করার তৌফিক দিন।’ (আবু দাউদ : ১৫২২)

অনুরূপভাবে রাসূল সা:-এর কাছে অসচ্ছল সাহাবিরা এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ধনীরা উচ্চ মর্যাদা ও স্থায়ী নেয়ামতের অধিকারী হয়ে গেল। রাসূল বললেন, সেটা কী করে। তারা বললেন, আমরা যেমন সালাত আদায় করি তারাও তা করে, আমরা সাওম পালন করি তারাও করে, অধিকন্তু তারা সাদাকাহ দেয় কিন্তু আমরা তা দিতে পারি না। তারা দাস মুক্ত করে আমরা তা দিতে পারি না। রাসূল সা: বললেন, তোমাদের কি আমি এমন বস্তু বলে দেবো না যা করলে তোমরা অন্যদের প্রতিযোগিতায় অগ্রণী হয়ে যাবে। কেউ তোমাদের থেকে শ্রেষ্ঠ হতে পারবে না। তবে কেউ যদি তোমাদের মতো কাজ করে তবে ভিন্ন কথা। তোমরা প্রতি সালাতের পরে তেত্রিশ বার তাসবিহ, তাকবির ও তাহলিল করবে। পরবর্তীতে অসচ্ছল সাহাবিরা ফিরে এসে বললেন, আমাদের পয়সাওয়ালা ভাইয়েরা আমরা যা করছি তা শুনে ফেলেছে, আর তারাও তা করছে। তখন রাসূল সা. বললেন, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন । (বুখারি : ৮৪৩, মুসলিম: ৫৭৮)

ওহুদের যুদ্ধের সময়ের কাহিনীও আমাদের ভাবতে সহযোগিতা করে। মদিনা নগরীতে বসবাস করতেন সৎ ও নিষ্ঠাবান এক যুবক। নাম তার ওমর বিন সামেত। মুসলমানদের সাথে তার সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্ব ও হৃদ্যতাপূর্ণ। সে তখনো ইসলাম কবুল করেনি। কিন্তু ওহুদের যুদ্ধ তার সুপ্ত চেতনাকে জাগিয়ে তুলল । ইত্যবসরে সে ঈমান আনল এবং কাউকে কিছু না বলে তরবারি নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শাহাদাত বরণ করেন। মৃত্যুর পূর্বক্ষণে বনু আবদুল আশহাল গোত্রের লোকেরা তাকে শনাক্ত করল। তারা ওর খবর জানতে চাইলে সে, বলল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রেমে সত্য ও ন্যায়ের সপক্ষে লড়াই করেছে। রাসূল সা: তার ব্যাপারে সুসংবাদ দিয়ে বললেন, জীবনে এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়েও সে জান্নাতের অধিবাসী হবে।

সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের আরেকটি কাহিনী কিজমানের। রাসূল সা: তার দোজখবাসী হওয়ার আগাম খবর দিয়েছিলেন। সে মুসলমানদের সাথে মিলিত হয়ে কুরায়েশদের বিরুদ্ধে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হলো। যুদ্ধ শেষে তাকে আহত অবস্থায় পাওয়া গেলে লোকেরা তার প্রশংসা করল যে, তুমি তো অসাধারণ শৌর্যবীর্য দেখালে। সে বলল, আমি তো কেবল আমাদের জাতির মর্যাদা রক্ষার্থে লড়াই করেছি। হতভাগা সৈনিকটি ক্ষতস্থানের ব্যথা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করল । আল্লাহ তাকে দিয়ে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও করালেন আবার আহত হয়ে নিহত হলেন এবং ঠিকানা হলো জাহান্নাম। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন : তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াত অবতীর্ণ করেন, তোমাদের অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসার জন্য; আল্লাহ তো তোমাদের প্রতি করুণাময়, পরম দয়ালু। (হাদিদ : ৯)

তাতে বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহর অনুগ্রহ ও কৃপা, দয়া, রহমত ছাড়া কোনো মুমিন বান্দাহ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আমরা যে সালাত, সাওম, হজ, জাকাতসহ ফরজ নফল ইবাদত আদায় করে থাকি সবই মহান রাব্বে কারিমের দয়া ও অনুগ্রহ। তাছাড়া আমাদের কারো পক্ষেই এ সব নেক কাজ করা সম্ভব নয়। আল্লাহ চাইলে আমাদের খারাপ কাজও করাতে পারতেন। অতএব আমাদের সবার উচিত সততা ও নিষ্ঠার সাথে ইবাদত করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা ও শুকর আদায় করা। কেননা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া, রহমত, করুণা ছাড়া বান্দাহ দুনিয়া আখেরাতে সাফল্য অর্জন করতে পারবে না।

তবে হতাশ হওয়া যাবে না। কেননা হতাশ হতে নিষেধ করা হয়েছে ইসলামে। যারা জীবনের প্রথম পর্যায়ে খারাপ কাজ করেছে পরবর্তী সময়ে নিজের কৃতকর্মের কথা স্মরণ করে মর্মপীড়ায় ভুগছেন, তাদেরও আল্লাহ তায়ালা নিরাশ করেননি। তিনি তাদের সুপথে ফিরে আসার জন্য ক্ষমার সুসংবাদ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সব গোনাহ মাফ করবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা যুমার : আয়াত ৫৩)।

তাই ফজিলতময় রমজান মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রচেষ্টায় আরো নিবিড়ভাবে মনোযোগী হতে হবে। আমাদের উচিত সাময়িক ব্যর্থতা, বাধা-বিপত্তি ও না পাওয়ার বেদনায় হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর রহমত ও দয়ার ওপর ভরসা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দিন। আমিন ।

লেখক : অধ্যাপক ও ইসলামী গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement