১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে, নিমজ্জিত চরাঞ্চল-নিম্নাঞ্চল

তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে, নিমজ্জিত চরাঞ্চল-নিম্নাঞ্চল - ছবি : নয়া দিগন্ত

বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার ওপরে এবং লালমনিরহাটের ডালিয়া পয়েন্টে বিপদ সীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ব্যারেজ পয়েন্টে সবকটি জলকপাট খুলে দিয়েছে পাউবো। পানি ঢুকেছে ভাটিতে অববাহিকার দুইপাড়ের চরাঞ্চল-তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে, নিমজ্জিত চরাঞ্চল-নিম্নাঞ্চলে। এসব এলাকার অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারি প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা অববাহিতায় ২২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, বুধবার (১৯ জুন) সকাল ৬টায় রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে। সকাল ৯টায় আরো ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। এখন এই পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি। এর আগে ১৪ জুন ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এই পয়েন্টে প্রবাহিত হচ্ছিল বিস্তার পানি।

অন্যদিকে লালমনিরহাটের ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ভোর ৬টায় তিস্তার পানি রেকর্ড হয়েছে ৫১ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার। যা বিপদ সীমার যথাক্রমে ২০ এবং ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব আরো জানান, উজানের ঢল আর গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের কারণে বুধবার ভোর থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তায় পানি বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি গেটই খুলে রাখা হয়েছে। এছাড়াও সকাল ৯টায় রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশে তিস্তায় নদীর পানি আরো বাড়তে পারে। এ কারণে চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

অবশিষ্ট এলাকাগুলো থেকে পাওয়া তথ্যমতে, তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারণে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, সদর, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বাদাম, শাক-সবজিসহ উঠতি বিভিন্ন ফসলের জমি। এতে দূর্বিপাকে পড়েছেন তিস্তা অববাহিকার মানুষ। তারা বাড়িতে থাকতে পারছেন না, তারা উঁচু স্থান এবং কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না জানান, ডিস্তায় পানি বাড়ার কারণে নদীর কিনারে চরাঞ্চলে বসবাসকারীদের উঁচু জায়গায় গবাদি পশু ও অন্যান্য সামগ্রী সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেছেন, বন্যা হলে রেসকিউ করার জন্য বোর্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

রংপুরের ডিসি মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, বন্যা মোকাবেলা করতে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি আছে আমাদের।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, এখন পর্যন্ত কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হলে পানি দ্রুত নেমে যাবে। তবে বন্যায় যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেয়া আছে। প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখছেন। যেহেতু তিস্তায় ফ্লাশ ফ্লাড হয়, সে কারণে পানি উঠলেও দ্রুত নেমে যায়। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে।


আরো সংবাদ



premium cement