রংপুরে সিএনজি-বাস সংর্ঘষে নিহত ৩, আহত ৯
- রংপুর অফিস
- ০৮ জুন ২০২৪, ১৭:০১, আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪, ২০:৩৯
রংপুরের গংগাচড়ায় সিএনজি ও বাস মুখোমুখি সংঘর্ষের কলেজ শিক্ষকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ৯ জন।
শনিবার (৮ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাগলাপীর-ডালিয়া সড়কের গঙ্গচাড়ার দক্ষিণ খলেয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ের আনসার সদস্য ও তারাগঞ্জ উপজেলার বসুনিয়া হাজীপাড়া গ্রামের মেহেরুল ইসলাম (৩৫), কিশোরগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের গণেশের বাজার এলাকার দিবা রাণী সরকার (৪০) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিমু আক্তার (২২)। তার বাড়ি পুটিমারী ইউনিয়নের ভেরভেরী গ্রাম। তারা সবাই সিএনজির যাত্রী ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী আকমল হোসেন জানান, পাগলীপীর থেকে সিএনজিটি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। ঘটনাস্থলে এসেই একটি ভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে পাশের দিকে যায়। এ সময় সেখানে রংপুরগামী একটি মিনি বাস যাচ্ছিল। বাসটি সিএনজিকে বাঁচাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের গাছের সাথে ধাক্কা লাগে। একইসাথে বাসের পেছনের দিকটা সিএনজিকে ধাক্কা দিলে সিএনজিটি রাস্তার পাশে পরে যায়। এতে ঘটনাস্থলে সিএনজি যাত্রী মেহেরুল ইসলাম (৩৫) মারা যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় অন্যান্যদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে মারা যান দিবা রানী সরকার ও রিমু আক্তার। এছাড়া এখনো হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় জিকিৎসা নিচ্ছেন সিএনজির যাত্রী রংপুর মহানগরীর বাহারকাছনা এলাকার মাসুম মিয়ার ছেলে ওহিদুল ইসলাম (৩২), কিশোরগঞ্জ উপজেলার ভেরিবাড়ি এলাকার আশরাফুল ইসলামের ছেলে মমিনুর ইসলাম (৩৭) এবং বাসের হেলপাড় রহিদুজ্জামান।
এদিকে দিবারানীর মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালের মর্গের সামনে ছুটে আসেন স্বজনও সহকর্মীরা। মেয়ে স্কুল থেকে এসে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। কখনও তার গগনবিদারী চিৎকারে সেখানে থাকা সবার চোখ ছলছল করছিল। পাশেই আহাজারি করছিলেন দিবা রানী মা ও বোন। সেই দৃশ্য হাসপাতাল ক্যাম্পাসকে ভারি করে তুলেছিল।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম জানান,‘ দিবা রানী সরকার আমার কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। উনি নিয়মিত কলেজে যাতায়াত করতেন। রংপুর থেকে বাসে পাগলাপীর যেতেন, পাগলাপীর থেকে সিএনজিতে করে কলেজে যেতেন। রংপুর-কিশোরগঞ্জে সরসারি বাসের যোগাযোগ না থাকায় অটো এবং সিএনজিতেই চাকরীজীবিরা জীবন ঝূঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। এখানে সিএনজি ছাড়া বিকল্প কোনো মাধ্যম নেই। যারা সিএনজি চালান। তারা প্রশিক্ষিত নন এবং রাস্তাটিও সরু দীর্ঘদিন সংস্কার করা হয় না। সেকারণেই আজকের দুর্ঘটনা।’
গঙ্গাচড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ মোমতাজুল ইসলাম জানান, আমার খবর পেয়ে এসে দেখি সিএনজি রাস্তার একপাশে, বাস রাস্তার আরেকপাশে চটকে পড়ে আছে। আমরা দু’টি যানবহানকে উদ্ধার করি। পাশে একটি লাশ পড়েছিল সেটিও আমরা উদ্ধার করি। আরেকজন সিএনজির নিচে ছিল, পুলিশের ক্রেইন দিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সিএনজির সাথে বাসের সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনা হয়েছে। আহতের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
হাইওয়ে পুলিশের তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান শরিফুল ইসলাম জানান, সকাল ১১টা ১০ মিনিটে আমরা মোবাইলে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। সেখান থেকে একটি লাশ উদ্ধার করি এবং আহতদের হাসপাতালে পাঠাই। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা গেছেন।
তিনি বলেন, সিএনজিটি দ্রুত গতির ছিল। প্রথমে ভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়। বিপরীত দিক থেকে আসা বাসটি সিএনজি বাঁচাতে গিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লেগে ছিটকে পরে। আর বাসের পেছনটা লেগে সিএনজি ছিটকে পরে যায়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে গেলো এক সপ্তাহে গঙ্ড়াচড়া, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও মহানগরীতে সড়ক দুর্ঘটনায় এনজিও কর্মীসহ ১১ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন।