১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৬০০ অসহায় হতদরিদ্র নারীর ফরিয়াদ, আমাদের টাকা ফেরত দিন

- ছবি : ইউএনবি

কোহিনুর, মিনতি, ওশনা, আলেমা, মঞ্জুয়ারা। এরা সবাই গাইবান্ধার গ্রামাঞ্চলের অতি দরিদ্র ঘরের গৃহিনী। লাইদের মতো ৬০০ গৃহিণী প্রতারণার শিকার হয়েছে। শিশু ভাতা, বয়স্কা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর দেয়ার নামে গোলাপীদের কাছে নুরুল ইসলাম ও মুক্তি নামের দুই প্রতারক লাখ লাখ টাকা আদায় করে।

এ নিয়ে ফুঁসে উঠেছে দরিদ্র গ্রামীণ নারীরা। তারা শহরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার হতদরিদ্র শিল্পী আকতার। স্বামী কাজ করেন দিন মজুরের। দিন আনে দিন খাওয়ার সংসার তাদের। শিল্পী বেগমের কাছে আসেন গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদের পিয়ন নুরুল ইসলাম ও মুক্তি নামের এক নারী দালাল। তারা বলেন, আপনারা টাকা দিলে আপনাদের দেয়া হবে বিধবা, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, মাতৃকালীন শিশু ভাতা ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর।

এই আশ্বাসে গাইবান্ধার দাড়িয়াপুর, গিদারী, ঘগোয়া, রুপার বাজার, মালিবাড়ি ও বোয়ালী ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের সহজ সরল গৃহবধূদের এই ফাঁদে ফেলেন নুরু নামের ওই পিয়ন এবং তার দালাল মুক্তি বেগম। তারপর হয় লেনদেন।

বয়স্ক ভাতার কার্ড পাবেন এই আশায় ছাগল বিক্রি করে দালালের হাতে তুলে দেন ১৬ হাজার টাকা। ভিক্ষুক জামাল মিয়া নিজে স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে বাস করেন পাঁচ টিনের একটি ছাপড়া ঘরে। সারাদিন ভিক্ষা করে যা পায়, তাতে দিন চলে কোনোমতো। তাকে লোভ দেখানো হয় ১৮ হাজার টাকা দিলে তাকে দুটি প্রতিবন্ধী কার্ড ও আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘর নিয়ে দিবেন। এই আশায় ভিক্ষুক জামাল মিয়া গ্রামের মানুষের কাছে লাভের উপর ১৮ হাজার টাকা নেন। গোটা টাকাই তুলে দেন দালালের হাতে। দালাল মুক্তি বেগম ও নুরু মিয়া তাদের হাতে তুলে দেয় ভুয়া প্রতিবন্ধী কার্ড ও ঘরের চাবি।

খুশিতে গদগদ হয়ে প্রতিবন্ধী জামাল মিয়া পায়ে হেটে পৌঁছেন কার্ডের টাকা তুলতে। কিন্তু গিয়ে জানতে পারেন তার কার্ড ও ঘরের চাবিটি ভুয়া। তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

চলে আসেন গাইবান্ধা সদর উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে। সেখানে তিনি জানতে পারেন টাকা নিয়ে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বাড়িতে ফিরে ঘটনা তিনি গ্রামের অন্যদের বলেন। তারাও পরপর কয়েক দিন সমাজ সেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তাদের কাছে যে কার্ডটি দেয়া হয়েছে সেটি আসল নয়। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিশু ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতার নকল কার্ড ছাপিয়ে ওই দুই ব্যক্তি তাদের সাথে প্রতারণা করেছেন।

শুধু বোয়ালীতে নয় গাইবান্ধার মালিবাড়ি, গিদারী, ঘাগোয়া, দাড়িয়াপুর, লক্ষীপুর, খোলাহাটি, দাড়িয়াপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে এই ভুয়া কার্ড বিতরণ করে ৬০০ জন পাঁচ হাজার থেকে ২০ হাজার পর্যন্ত টাকা নিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতারিত নারীরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন পিয়ন নুরুল ইসলাম নুরু ও মুক্তি বেগম গা ঢাকা দিয়েছেন।

প্রতারিত হত দরিদ্র গোলাপী, মেহেরন, সাবেনি বলেন, আমরা বয়স্ক ভাতার কার্ডের আশায় সুদের ওপর টাকা নিয়ে তার হাতে টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখন আমরা কি শুনছি। গরিব মানুষের সাথে এভাবে প্রতারণা করলে আল্লাহও সহ্য করবে না। আমারা গরিব মানুষ হাঁস মুরগি বিক্রি করে টাকা দিয়েছি ঘর পাওয়ার আশায়। তারা এ সাহস পাওয়ার পেছন যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করা হোক।

আম্বিয়া খাতুন বলেন, আমাদের ভিক্ষার টাকা, সুদের উপর নেয়া টাকা, ছাগল বিক্রি করা টাকা হজম করে যারা বড় লোক হয়েছে আমরা তাদের বিচার চাই। টাকা ফেরৎ চাই। প্রতারণার ঘটনাটি ফাঁস হয়ে গেলে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ৬০০ জন দরিদ্র নারী ও পুরুষের কাছ থেকে মোট ২৬ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ টাকার হিসাব প্রকাশ পায়।

বিভিন্ন গ্রাম থেকে নারীরা প্রশাসনের কাছে বিচার ও সমাজ সেবা অধিদফতরে গেলে তারা বলেন, আমরা এই নকল বই দেইনি। তারা যাদের নামে কার্ড দিয়েছেন এদের কারো নাম নেই ।

ভুক্তভোগী শিল্পি বেগম জানান, আমি সুদের ওপর টাকা নিয়ে ১৮ হাজার টাকা মুক্তি বেগমের হাতে তুলে দিয়েছি। এখন টাকাও নাই কার্ডও নাই। এদিকে সুদের টাকা দিতে হচ্ছে মাসে মাসে।

তিনি বলেন, এই টাকার জন্য আমার স্বামী আনিসুর রহমান আমাকে তালাক দেয়ার কথা বলছে। তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার স্বামী সংসার থেকে বের করে দিলে আমি কোথায় যাবো, কার কাছে যাবো? এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দরিদ্র নারীরা সংগঠিত হয়ে গাইবান্ধা শহরে এসে বিক্ষোভ ও টাকা ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন করেন। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে।

এ সময় বক্তব্য দেন কমরেড আহসানুল হাবীব সাঈদ, নারী নেত্রী নিলুফার ইয়াসমীন শিল্পী, শুভাষীনি দেবী, ভুক্তভোগী নারী শিল্পী আকতারসহ অন্যরা।

পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে ভুক্তভোগী অসহায় দরিদ্র পরিবার সমূহ ও নারীমুক্তি কেন্দ্রের আয়োজনে বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করা হয়।

এ ব্যাপারে প্রতারিত শিল্পী বেগম বাদী ও ৫১ জন নারী সাক্ষী হয়ে আদালতে মামলা করেন।

বোয়ালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলাম সাবু জানায়, তিনি ক্ষমতায় আসার পূর্বে আগের চেয়াম্যানের সময়ে এই ঘটনাটি ঘটেছে। আমি বিষয়টি জানি। যারা প্রতারিত হয়েছে তারা অত্যন্ত দরিদ্র। তাদের সাথে প্রতারণা করে তাদেরকে পথে বসিয়েছে যারা তাদের বিচার হওয়া উচিৎ।

জেলা সমাজ সেবা বিভাগের উপ পরিচালক ফজলুর রহমান জানান, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। কিন্তু ওই নারীরা ভুয়া কার্ডধারী। যারা এই কার্ড দিয়েছে তারা অপরাধী। তাদের আইনের আওতায় আনা উচিৎ।

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো: অলিউর রহমান জানান, অনেক নারী প্রতারিত হয়েছে। তাদেরকে কার্ড করে দেয়ার নাম করে কেউ যদি টাকা নিয়ে থাকে প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement
শিবপুরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর নিহত চকরিয়ায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩ গাজা মানবিক নরকে পরিণত হয়েছে : জাতিসঙ্ঘ প্রধান রাফা হামলার পরিকল্পনা ইসরাইলের ত্যাগ করা উচিত : চীন গাজা যুদ্ধে নতুন যে কৌশল অবলম্বন করল ইসরাইল হাসপাতালের শৌচাগারে মিলল নবজাতক শিশু ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিসিডিপি গঠন করা হবে : পরিবেশমন্ত্রী অননুমোদিত জমি ভরাট কার্যক্রমের সন্ধান পেলে দ্রুত ব্যবস্থার নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা ইসরাইলকে পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাতের ব্যাপারে সতর্ক করলো আইআরজিসি

সকল