অনাহারে বয়স্ক দম্পতির দিন কাটে ঝুঁপড়ি ঘরে
- মিঠাপুকুর (রংপুর) সংবাদদাতা
- ২৭ মে ২০২৩, ১৬:৪৬
রংপুরের মিঠাপুকুরে গৃহহীন ছলিম উদ্দীন (৬৫) ও তার স্ত্রী আতোয়ারা খাতুন (৫৫) নামে দুই বৃদ্ধ অন্যের একটি মাটির ঘরের দেয়ালের পাশের ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। দিন চলে স্ত্রীর ভিক্ষার আয়ে। সামান্য বৃষ্টি এলেই ছাদ চুয়ে পড়ে পানি, ভিজে যায় ঘুমানোর জায়গাসহ ঘরের আসবাবপত্র। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে অনেক সময় নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে, পরিবারে আয় রোজগারে অক্ষম এই দম্পতির প্রায় অর্ধেক দিনই কাটে অনাহারে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, প্রায় ১৮ বছর আগে মিঠাপুকুর উপজেলার ময়েনপুর ইউনিয়নের চকদুর্গাপুর গ্রামে তাদের একমাত্র মেয়ে সালেহা বেগমের (৩৫) বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের দক্ষিনপাড়া গ্রামের ভূমিহীন দিন-মজুর মরহুম সামসুল হকের ছেলে হামিদুলের সাথে। তিনিও ভূমিহীন। এক মাত্র মেয়ে ও জামাতা ভূমিহীন হওয়ায় বসবাসের জন্য তাদের নিজের থাকার ঘরটি ছেড়ে দিয়ে অন্যের একটি মাটির দেয়াল ঘরের প্রচীরের পাশে ঝুঁপড়ি ঘর বেঁধে বসবাস করছেন ওই দম্পতি।
অন্যদিকে, দেয়াল ঘরের মালিকও এখন ওই জায়গাটি নিজের কাজে ব্যবহারের স্বার্থে জায়গাটি ছেড়ে দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন বলে জানান স্থানীয়সহ ওই দম্পতি।
সরেজমিনে আরো জানা গেছে, ছলিম উদ্দীন বয়সের ভারে কাজ করতে পারেন না। স্ত্রী আতোয়ারা বেগম ভিক্ষা করেন। ভিক্ষা করে যা পান তা দিয়ে তাদের সংসার চলে। আর যে দিন ঝড় বৃষ্টির কারণে ভিক্ষা করতে যেতে পারেন না ওই দিন কাটে অনাহারে।
ছলিম উদ্দীন বলেন, ‘মুই অনেক দিন হইতো অসুস্থ কাম করবার পারি না। মুই শুনছু সরকার নাকি ঘর-বাড়ি তুলা দেয়, বয়স্ক ভাতা দেয়, ইলিফ ১০ ট্যাকা ক্যাজিত চাউল দেয়, খাদ্য বান্ধব ভিজিডি, ভিজিএফ কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সাহায্য সহযোগীতা দেয় হামরা দুই মানুষ চেয়ারম্যান-মেম্বারের কছোত বহুতবের গেছনু হামাক দিবার চায়া দ্যায় না। যাইতে যাইতে হামরা আর যাই না। হামরা সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগীতাও পাই না।’
বৃদ্ধা আতোয়ারা খাতুন বলেন, ‘মুই অন্যের বাড়িতে ভিক্ষা কাজ করে দিছনু তাও কয়দিন বুষ্টির পাওছো না এদিকে গ্রামের মানুষ ভিক্ষাও দিতে চায় না দু’দিন থেকে কাজ নাই, ঘরে খাবারও নাই। পাশের বাড়ি থেকে আজ সকালে আধা চাউল ধার করে এনে সকালেই রান্না করে খাইনো রাতে খাবার কোনো উপায় নেই। রাতে হয়তো না খেয়েই থাকতে হবে। অভাবের সংসারে লোকজন আর ধার দেনাও দিতে চায় না। ঘরে খাবার তো নেই সাথে থাকারও কোনো ঘর বা জায়গা নেই।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোকছেদুল আলম মুকুল বলেন, আমার ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো বাড়ি নির্মাণ করা হয়নি। বাড়ি নির্মাণের জন্য সরকারি জায়গা খোঁজা হচ্ছে। জায়গা পাওয়া গেলে এক সাথে ৫০ থেকে ১০০টি বাড়ি নির্মাণ করে ইউনিয়নের ভূমি ও গৃহহীনদের মাঝে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা