এসএসসিতেও জিপিএ-৫ : দরিদ্রতা দমাতে পারেনি সাকিবকে
- নীলফামারী প্রতিনিধি
- ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:৫৬
দরিদ্রতা ও অর্থ সঙ্কট দমিয়ে রাখতে পারেনি ফেরিওয়ালার সন্তান সাকিব খানকে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর এবার এসএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। এরপরেও অভাবের বিড়ম্বনা তার লালিত স্বপ্নকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সে উচ্চ শিক্ষার আকাঙ্ক্ষার জন্য তাই বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছে।
নীলফামারীর সদর উপজেলার কুন্দপুকুর ইউনিয়নের শালহাটি গ্রামের ফেরিওয়ালা মহসিন আলীর ছেলে সাকিব। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে সবার বড়। বসতভিটা ছাড়া আর কোনো জমি নেই তাদের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামে গ্রামে সাইকেলে করে কাপড় বিক্রি করেন মহসিন। এরপরেও সব সময় সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকত। একার রোজগারে ঠিকমতো পাঁচ সদস্যের সংসারই চলত না, সেখানে ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ যোগাবে কোত্থেকে। ফলে জিপিএ-৫ নিয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় সাকিবের। কিন্তু সাকিবের মেধা ও প্রবল ইচ্ছা শক্তির কাছে সকল প্রতিবন্ধকতা হার মানে।
সাকিব মেধাবী হওয়ায় শিক্ষক ও প্রতিবেশীদের চাপে নীলফামারী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। সেখানেও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছে।
প্রতিবেশী ও শিক্ষকদের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে সাকিব এবার এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছে। এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে তার মেধা ও ইচ্ছা শক্তির আবারো প্রমাণ দিল সে। সে আগামীতে প্রশাসনিক বড় কর্মকর্তা হয়ে মানুষের সেবা করতে চায়। এজন্য পড়তে চায় ভালো কোনো কলেজে। কিন্তু দরিদ্র পিতা পারবে কি তার সে সাধ পূরণ করতে?
ছেলের সাফল্যে আনন্দের মধ্যেও কষ্ট তাড়া করে সাকিবের মা কমলা বেগমকে। ছেলের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। অনেক সময়ই না খেয়ে স্কুলে যেতে হয়েছে ছেলেকে। তারপরও থেমে থাকেনি তার মেধা। সে শুধু একটা কথাই বলে, ‘মা, যত কষ্টই হোক, আমাকে বড় হতে হবে।’
পিতা মহসিন আলী জানান, ফেরি করে কাপড় বিক্রি করা তার একমাত্র পেশা। কোনো কারণে পাড়ায় বের হতে না পারলে ওই দিন তাদের না খেয়েই থাকতে হয়। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই। অর্থাভাবে ছেলের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় ভুগছেন তিনি।
নীলফামারী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী জানান, সাকিবের মেধার কাছে হার মেনেছে সকল বাধা। অদম্য এ মেধাবীর লেখাপড়া চালানোর সহযোগিতায় দেশের হৃদয়বান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা