১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না : মির্জা ফখরুল

রংপুরের বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। - ছবি : নয়া দিগন্ত

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। একটাই দাবি, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। তারপর নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। বিএনপির সাংসদরা রেডি আছেন। নির্দেশ পেলেই তারা পদত্যাগ করবেন।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) রংপুর কালেক্টরেন ঈদগাহ মাঠে বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘শেখ হাসিনার জঙ্গিবাদ, অগ্নিসন্ত্রাসের ধোয়া তোলা এখন ভোতা অস্ত্র হয়ে গেছে। বিশ্ববাসী তাদের কোনো রিপোর্ট আর বিশ্বাস করে না। তাদের এসব রিপোর্ট ভুয়া।’

রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্ব গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বক্তব্য রাখেন গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ভাইস চেয়ারম্যান ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সদস্য সচিব ও যুগ্ম মহাসচিব হারুন-অর-রশিদ এমপি, সমন্বয়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষক দলের মহাসচিব শহিদুল ইসলাম (বাবুল), ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনোকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মাদ জুয়েল, রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ-উন-নবি ডন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুসহ কেন্দ্রীয়, বিভাগীয়, জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ।

শেখ হাসিনার অধীনে দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সোজা কথা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এটা আমাদের সাফ কথা। আমাদের দলের সংসদ সদস্যরাও যেকোনো সময় সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন। এ সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতেই হবে। নতুন একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দিতে হবে। দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়।’

দেশের জনগণ অধিকার বঞ্চিত উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম একটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য। এই হাসিনার বাংলাদেশ দেখার জন্য নয়। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য। মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি ভোট দিয়ে আমাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করার অধিকার পাবার জন্য। কিন্তু আমরা আজ ওই অধিকার থেকে বঞ্চিত। এখন আগের রাতেই ভোট হয়ে যায়। আমরা আর এমন নির্বাচন হতে দেবো না।’

জঙ্গিবাদ, অগ্নিসন্ত্রাসের ধোয়া তুলে সরকার আবার ষড়যন্ত্র করছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জঙ্গিবাদ, অগ্নিসন্ত্রাসের অস্ত্র এখন ভোতা হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের আসল চেহারা সবাই জেনে গেছে। পৃথিবীর মানুষ জেনে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লিখেছে, আওয়ামী লীগ সরকার যা বলে, সবই মিথ্যা। এ সরকারের মানবাধিকারের রিপোর্ট মিথ্যা। দেশে মানুষের মানবাধিকার নেই। মানুষ গুম হয়ে যাচ্ছে। সরকার মানুষকে কথা বলতে দেয় না। নির্বাচনের আগে সভা করতে দেয় না। ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয় না। আর কথায় কথায় তাদের নেতাকর্মীরা রামদা, হকিস্টিক, বন্দুক ও পিস্তল নিয়ে আসে। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে আর এসব করতে দেবে না। দেশের মানুষ তাদের রুখে দেবে।’

গণসমাবেশের দিকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজর আছে উল্লেখ করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘আজকের এই সমাবেশের দিকে সমগ্র বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, এই সমাবেশের দিকে সারা বিশ্বের অনেকগুলো আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজর রয়েছে। এখানে আলজাজিরা, বিবিসির সাংবাদিকরা উপস্থিত আছেন। আপনারা (দলের নেতাকর্মীরা) তিন দিন ধরে অমানবিক পরিশ্রম করে, অমানবিক অবস্থায় থেকেছেন। গুদামঘরে, রাস্তাঘাট ও ফুটপাতে থেকেছেন। কেউ নৌকায় করে এসেছেন, বাইসাইকেল চালিয়ে এসেছেন। আমি আপনাদের কষ্ট দেখেছি।’

সরকার জনগণ এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ভয় পায় বলেই দু’দিন আগে পরিবহন বন্ধ করেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার নাকি বিরোধী দলকে ভয় পায় না। সরকার নাকি জনগণকে ভয় পায় না। ভয় পায় না, তাহলে দু’দিন আগে গাড়ি বন্ধ করে দিলো কেন? খুলনাতে গাড়ি বন্ধ করে, ট্রলার উল্টে দিয়ে, মানুষকে চাপাতি-রামদা দিয়ে মারছে কেন? কেন আমাদের নেতাদের গুলি করে মারে?’

আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ খাওয়ার পাঁয়তারা করছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সমাবেশ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সমাবেশ। একটা মানুষ, একটা দল গত ১৫ বছর ধরে আমাদেরকে দমন, নিপীড়ন-নির্যাতন করছে। সমস্ত দেশটাকে তারা কুড়ে কুড়ে খেয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছে। এখন বাংলাদেশেকে খাওয়ার পাঁয়তারা করছে।’

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপির সব অর্জন ধ্বংস করার অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন ‘এই সমাবেশের লক্ষ্য একটাই, হাসিনা কবে যাবে? এই সরকার কবে যাবে? লুটপাট কবে যাবে? দাবি একটাই, এই সরকারের পদত্যাগ। গত ১৫ বছরে এই আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের যত অর্জন ছিল, যত স্বপ্ন ছিল, সমস্ত কিছুকে ধ্বংস করে দিয়ে নষ্ট করে দিয়েছে। যেদিকে তাকাবেন, খালি চুরি আর চুরি।’

সরকারকে মুন্তাসি ফ্যান্টাসি নাটকের সাথে তুলনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ সব ভাতাতে ভাগ নেয় আওয়ামী লীগ। রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট তৈরি করতেও তারা এখন টাকা চুরি করে। এমনকি গরিবের আশ্রয় প্রকল্পেও চুরি করছে। তারা সর্বলুট করছে। সব খেয়ে ফেলছে। আর কিছু বাকি রাখে নাই। সরকার এখন মুন্তাসি ফ্যান্টাসি নাটকের মতো সব খেয়ে ফেলছে।’

ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘এই সরকার আমাদের নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে নির্যাতন করেছে। তিনি অসুস্থ হওয়ার কারণে বিদেশে চিকিৎসার জন্য গেছেন। এখন আর তাকে দেশে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা করা হয়েছে। আমাদের ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করেছে এই সরকার। সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। আলেম-ওলামাদেরও মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করেছে। এদের কি আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যায়?’

দুর্ভিক্ষ হলে তার দায় সরকারের দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা দেশকে ধ্বংস করছে, মানুষকে ধ্বংস করছে, ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধ্বংস করছে, যারা এই বাংলাদেশকে ধ্বংস করছে, তাদেরকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যাবে না। আজকে দেশ একটা কঠিন দুঃসময় পার করছে। আমরা কোথায় যাব? এখন আবার জোর করে ক্ষমতায় থাকা অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, দেশে নাকি দুর্ভিক্ষ হবে। দুর্ভিক্ষ হলে মানুষ কোথায় যাবে? যদি দেশে দুর্ভিক্ষ হয়, তার জন্য সমস্ত দায় দায়িত্ব নিতে হবে শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে।’

৪২ ভাগ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে কেন প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলেও দেশে একটা দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। রংপুর স্টেশনে মানুষেরা না খেতে পেরে পড়ে থাকত। খাবার না পেয়ে মারা যেত। কুড়িগ্রামের চিলমারীর বাসন্তী তার লজ্জা নিবরণের জন্য এক টুকরো কাপড় পায়নি। আবার ওই অবস্থা ফিরে এসেছে। আওয়ামী লীগ এত দিন ধরে কী করল? বাংলাদেশ নাকি মধ্য আয়ের দেশ হয়ে গেছে। বড়লোক হয়ে গেছে। সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া কানাডা হয়ে গেছে। তাহলে দেশের ৪২ ভাগ মানুষ এখনো দারিদ্রসীমার নিচে কেন?’

দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। এখন ৯০ টাকার চাল খাওয়াচ্ছে। ডাল, ডিম, চিনিসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। শাক-সবজি কিনতে গিয়েও মানুষ বাজার থেকে ফিরে আসছেন। আগে যে মানুষ একটু ভালো-মন্দ খেত, এখন সেটাও শেষ। মানুষ কী খেয়ে থাকবে?’

সরকারপ্রধানের ধৈর্য ধরার আহ্বান প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের জনগণকে ধৈর্য ধরতে বলছেন প্রধানমন্ত্রী। অল্প খেতে, বিদ্যুতে সাশ্রয়ী হতে বলছেন। দিনে বিদ্যুৎ থাকবে না, রাতে ফ্যান চালাবেন না। এসব আমাদের বলছে সরকার আর তারা খাচ্ছেন চিতল মাছ। আমরা দেখছি, আপনারা ঘন ঘন বিদেশ যাচ্ছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে বিদ্যুৎ চালিয়ে আরাম-আয়েশ করছেন। আর দেশের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। যারা কৃষি কাজ করছেন, তারা সেঁচের পানি পাচ্ছেন না। এ-ই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।

বক্তব্যের শুরুতেই মির্জা ফখরুলআঞ্চলিক ভাষায় দলের উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কেমন আছেন বাহে? ভালো আছেন তো? আমরা রংপুর ডিভিশনের ছাওয়া। আমরা ভালো থাকিমো। শত অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নকে জয় করে আমরা বাহের দেশের মানুষ ভালো থাকব ইনশাআল্লাহ।’

গণসমাবেশের প্রধান বক্তা হিসেবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘রংপুরে গত দু’দিন ধরে পরিবহন ধর্মঘট চলছে। তারপরও হাজার হাজার মানুষ ধর্মঘট উপেক্ষা করে রংপুরে এসেছেন। তারা পুরো রংপুরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। হরতাল তো দেয় বিরোধী দল। কিন্তু সরকার এখন হরতাল দিচ্ছে। তাহলে বুঝতে হবে, দেশের অবস্থা কোথায়? আসল ব্যাপার হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সাথে বাংলাদেশের মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের নির্ভরশীলতা পেটুয়া বাহিনীর উপর।’

খসরু বলেন, ‘এর আগে ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলেও দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। মানুষ খাবার খেতে না পেরে রাস্তায় পড়ে ছিল। এখন আবার ওই অবস্থা ফিরে এসেছে। ১০ কেজির চাল খাওয়াতে চেয়ে আওয়ামী লীগ এখন ৯০ টাকার চাল খাওয়াচ্ছে। চিনির দামও বেড়েছে। শাক-সবজিও মানুষ কিনতে পারছে না। এটা দুর্ভিক্ষের লক্ষণ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আজ রংপুর শহর মুখরিত। রংপুরের মানুষ প্রমাণ করেছে, জনতা বিক্ষুব্ধ হলে কোনো শক্তি দমিয়ে রাখতে পারে না। তারা জানান দিচ্ছে, আওয়ামী লীগের সময় শেষ। বিনা ভোটে ক্ষমতায় আছেন। আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছে। জ্বালানি ঘোড়ার মতো ছুটছে। আমরা জনগণের পাশে থেকে কাজ করব।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী টুকু বলেন, ‘যুদ্ধে জয়লাভ করলাম আমরা, ক্ষমতায় বসল আওয়ামী লীগ। দেশ তারা ফাঁকা করে দিয়েছিল। এরপর জিয়াউর রহমান দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। বর্তমান দেশের ভিত জিয়াউর রহমান করেছেন। আওয়ামী লীগ বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করেছিল। পরে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।’

তিনি বলেন, ‘বাকশালী আওয়ামী লীগ আবার গণতন্ত্রকে একনায়কতন্ত্রে প্রতিষ্ঠা করেছে। শেখ হাসিনার সরকার দিনের ভোট রাতে করে লুট করে নিয়েছে। এখন তারা জোর করে ক্ষমতায় থেকে উন্নয়নের নামে জনগণের সাথে ধোকাবাজি করছে। কিন্তু এর আড়ালে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জোকারি বাদ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশিদ এমপি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভাই কয়েক দিন থেকে খেলা দেখাব বলছে। খেলাধুলা দেখানোর নামে এসব নাটক বন্ধ করুন। আমরা আগে নাটক সার্কাসে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্যারেক্টার জোকার দেখতাম। এসব জোকারি বাদ দেন, ধানাই-ফানাই বাদ দেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘১০ তারিখে নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা হবে। আমরা গত ১০ দিন রংপুরের প্রত্যেকটি আনাচে-কানাচে ঘুরেছি। এই সরকারের প্রতি মানুষের আত্মবিশ্বাস নেই। সরকারের কাছে বিপন্ন মানুষের জানমাল। বিপন্ন বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবতা ও স্বাধীনতা। আমরা বাংলাদেশের পতাকা রক্ষার জন্য যে সংগ্রাম শুরু করেছি, তা রোধ করার শক্তি কারো নেই।’

তিনি বলেন, ‘এই সরকার শুধু নির্বাচনের সময় সংবিধানের দোহাই দেয়। কিন্তু যখন মানুষের মানবাধিকার হরণ করে, যখন মানুষকে খুন করে, তখন মানবতা-গণতন্ত্র কোথায় থাকে। গাইবান্ধার নির্বাচনে আমরা দেখলাম, ইভিএম মেশিনের ডিজিটাল ভোট চোরদের কাহিনী। এখনো তাদের বদলি করা হয়নি। এখনো তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়নি। এই নির্বাচন কমিশনার চোর ডাকাতের সরদার।’

বিএনপি’র রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, সমাবেশ হওয়ার কথা আজকে হলেও দুই-তিন দিন আগে থেকেও নেতাকর্মীরা এখানে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয়, তারা এখন রাস্তায় শুয়ে থাকার জন্য প্রস্তুত। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কয়েক দিন আগে বললেন, খেলা হবে দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে, খেলা হবে ভোট চোরের বিরুদ্ধে। তার মানে তিনি আমাদের আন্দোলনে যুক্ত হবার জন্য পাঁয়তারা করছেন।

দুলু আরো বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার নেতারা পালানোর সময় তো জাঙ্গিয়া নিয়ে যেতে পেরেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা সেটি নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ পাবে না। আগামী দিনের যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে রংপুর বিভাগের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন বিএনপি নেতা
সমাবেশে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল। বিষয়টি বিকেল সোয়া ৪টায় সমাবেশস্থলে মাইকে নিশ্চিত করেন মহাসমাবেশের উপস্থাপক রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মাহফুজ-উন-নবি ডন।

এ বিষয়ে কাহারোল উপজেলার বিএনপি সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, আজ সকালে নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন মোস্তাফিজুর রহমান। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তিনি স্ট্রোক করলে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সব পথ মিলেমিশে এক হয়েছিল রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে
শনিবার সব পথ এক হয়ে যেন মিশে যাচ্ছিল বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশস্থল রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে। রংপুর বিভাগের আট জেলা ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার কয়েক লাখ মানুষ অংশ নেয় সমাবেশে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি, তেল-গ্যাসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, খুন, গুম, ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথেই রংপুর মহানগরীর ৩৬টি প্রবেশদ্বার দিয়ে আসতে থাকে মিছিল। পুরো নগরী পরিণত হয় মিছিলের। জাতীয় এবং দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে শ্লোগানে-শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো নগরী। মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে যানবহন থেকে নামিয়ে মিছিলগুলোকে সমাবেশস্থলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়।

অন্যদিকে প্রতিটি জেলার মোড়ে মোড়ে সমাবেশে আসতে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেন নেতাকর্মীরা। অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে অবরুদ্ধ গণতন্ত্র ও নির্যাতিত জনগণকে মুক্ত করার জন্যই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন তারা। খালেদা জিয়ার মুক্তিকে এই গণসমাবেশের প্রধান লক্ষ্য বলতেছেন নেতাকর্মীরা। বর্তমান সরকারের কাছে নারীদের কোনো নিরাপত্তা নেই দাবি করেছেন অংশগ্রহণকারী নারী নেত্রীরা। নেতা-নেত্রীরা বলছেন, খুন, গুম, ধর্ষণ আর হত্যায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। কিন্তু সরকার ও তার নেতাকর্মীরা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গাছে। ভোট বিহীন এই সরকারের পদত্যাগও দাবি করেছেন নেতাকর্মীরা। তা না হলে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা তাদের।

দেখা গেছে, নগরীর প্রত্যেকটি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। যারা মোটরসাইকেল ছাড়া অন্যান্য যানবাহনে এসেছেন, তাদেরকে চেকপোস্টে যানবাহন থেকে নামিয়ে দিয়েছে পুলিশ। তারপর তারা হেঁটে হেঁটে সমাবেশে প্রবেশ করেছেন। সমাবেশে শেষ হওয়ার সময়ও উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীদের মিছিল নিয়ে আসতে দেখা গেছে। কালেক্টরেট মাঠ উপচিয়ে নগরীর প্রধান সড়কের মেডিক্যাল মোড় থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত নেতাকর্মীরা অবস্থান করছেন। কাচারি বাজার এবং পায়রা চত্বর পর্যন্ত মাইক দেয়া থাকলেও অন্যান্য এলাকাগুলোই মাইক না থাকায় সমাবেশের বক্তব্য অনেক নেতাকর্মী শুনতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। সমাবেশের তিন দিন আগে থেকেই মাঠে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। সেখানেই ঘাসে চাদর বিছিয়ে রাত কাটান। মাঠেই খাওয়া-দাওয়া করেন নেতাকর্মীরা।


আরো সংবাদ



premium cement