২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পাতানো নির্বাচনের ছক করছে সরকার : জি এম কাদের

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোস্তফাকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা
শোডাউনের সময় হাত নেড়ে নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানান জি এম কাদের। - ছবি : নয়া দিগন্ত

জাতীয় পার্টির মধ্যে কোনো সংকট নেই বরং আগের থেকে আরো শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ- এ দাবি করে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে। আর অথনৈতিক পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। দেশে যে সরকার আছে তা অনেক সময় বোঝাও যায় না। দেশ চলছে নিজের গতিতে। মানুষ নিজেই নিজের ব্যবস্থা করে নিচ্ছে। এরমাঝেই সরকার পাতানো নির্বাচনের ছক কাটছে। যা গণতন্ত্রেও জন্য কল্যাণকর নয়।

সোমবার (৩ অক্টোবর) বেলা আড়াইটায় রংপুরের পল্লীনিবাসে সাংবাদিকদের সাথে এসব কথা বলেন তিনি।

এ সময় রংপুর সিটি নির্বাচনে বর্তমান মেয়র মোস্তফাকে আবারো লাঙ্গল প্রতীকের প্রাথী ঘোষণা করেন তিনি।

দলের বেশ কয়েকজনকে বহিষ্কারসহ নানা ইস্যু নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের রংপুর সফর নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে এবারের আগ্রহটা ছিল একটু বেশি। তাই সোমবার বিশাল মোটরসাইকেল ও গাড়ি শোভাযাত্রার মাধ্যমে সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে তাকে রংপুরে আনা হয়। রাজসিক অভ্যর্থনায় সার্কিট হাউজে বেলা ২টায় তিনি গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন। পরে তাকে নিয়ে নেতাকর্মীরা নগরীতে শোডাউন করে। ছাদখোলা গাড়িতে হাত উঁচিয়ে নগরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কালো সানগ্লাস পরিহিত জিএম কাদের।

পরে পল্লীনিবাসে দলটির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত ও দোয়া মোনাজাত শেষে কথা বলেন সাংবাদিকদের সাথে। এ সময় তার সাথে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য, মহানগর সভাপতি এবং রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা আহ্বায়ক আবুল মাসুদ চৌধুরী নান্টু, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সদস্য সচিব হাজি আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন, ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল মামুন, জেলা যুব সংহতি সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিম, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, মহানগর যুব সংহতি সভাপতি শাহীন হোসেন জাকির, সাধারণ সম্পাদক শান্তি কাদেরী, মহানগর ছাত্র সমাজ সভাপতি ইয়াসির আরাফাত আসিফ, সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্র সমাজ আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক আল আমিন সুমন, মুহিন খান প্রমুখ।

জি এম কাদের বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খুবই খারাপ। রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটা অত্যন্ত অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ হানাহানি, কাটাকাটি মারামারি হবে। দেশে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি হবে না। না হলে কি হবে। এই সমস্ত নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক আছে। এতে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে সুশাসন বলতে যা বোঝায় তার কিছুই নেই বললেই চলে। দেশে যে সরকার আছে তা অনেক সময় বোঝাও যায় না। দেশ চলছে নিজের গতিতে। মানুষ নিজেই নিজের ব্যবস্থা করে নিচ্ছে।

সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন সব থেকে যেটা উদ্বেগের বিষয় সেটা হলো অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামনের দিকে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। এমনিতেই আমাদের দেশে যেগুলো আয় হচ্ছে রফতানি করে এবং প্রবাসীদের মাধ্যমে। তার থেকে ব্যায় বেশি হচ্ছে আমাদের রিজার্ভ প্রতিদিন কমে যাচ্ছে। সেখানে আগামী দুই বছর পর থেকে বিদেশী ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সুদ-আসলসহ এই ঋণ পরিশোধ করতে গেলে যে বিপুল অংকের অর্থ লাগবে। যেটা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সরকারের শুধু ঋণের জন্য ৪ বিলিয়ন ডলার লাগবে। পাশাপাশি সরকারি এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলো যে বিপুল পরিমাণ টাকা ঋণ নিয়েছে, সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন ডলার প্রতিবছর বাংলাদেশকে শোধ করতে হবে। এটা হচ্ছে বর্তমানের হিসেব। সামনে আরো অনেক ধরনের প্রজেক্টে অনেক ধরনের বিনিয়োগ হচ্ছে, তাতে সুদ-আসল আরো বেশি বাড়বে। দেশে যখন রিজার্ভ এমনিতেই কমের দিকে। তখন এই ধরনের ঋণের বোঝা বাংলাদেশের মানুষ সহ্য করতে পারবে এটা বলা বড় মুশকিল।

জি এম কাদের বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধেও কারণে সারাবিশ্বের দেশগুলোই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। আমরাও পড়েছি। কিন্তু তারচেয়েও বাংলাদেশ বেশি বিধ্বস্তের মধ্যে পড়েছে মেগা প্রকল্পগুলো নেয়ার কারণে। কারণ মেগাপ্রকল্পগুলোর সবগুলোই অলাভজনক হবে। যেহেতু যে স্টিমেট নিয়ে শুরু করা হয়েছে। তার চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি খরচ করা হয়েছে। যে সময় নিয়ে শেষ হওয়ার কথা, তারচেয়ে তিন-চারগুণ বেশি সময় নেয়া হয়েছে। ফলে এগুলোর কারণে যে ইনকাম আসার কথা বিনিয়োগের বিপরীতে সেই ইনকাম আসবে না। বরং এই ঋণের বোঝা আমাদের ঘাড়ে এসে পড়বে। সে কারণে দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দুটি পরিস্থিতিই ভয়াবহ এবং সামনে দিকে একটি অশনি সংকেত আমরা দেখতে পাচ্ছি।

‘সেই প্রেক্ষিতে সরকার একটা সাজানো নির্বাচন করার ছক কাটছে বলে আমরা মনে করি। যা গণতন্ত্র এবং জনগণের জন্য কখনোই কল্যাণ বয়ে আনবে না,’ বলেন তিনি।

জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টিতে কোনো সংকট নেই। আল্লাহর রহমত কতগুলো বিষয় সাধারণভাবে আল্লাহর কাছ থেকে আসে। এর মাধ্যমে অনেক কিছু শেখা যায়, চেনা যায়। আমাদের দলে কেউ কেউ কিছু কাজ করছে, যা বেআইনি এবং সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। ফলে আমাদের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু মানুষ এবং আমাদের বাইরে থাকা কিছু মানুষ যারা শত্রুতামূলকভাবে কাজ করছে। তাদের আমরা চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি। এরা মীরজাফর। এদের অবস্থান জাতীয় পার্টিতে হবে না। এখন জাতীয় পার্টি অনেক বেশি শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করার কোনো সুযোগ সামনে আর কাউকে আমরা দেব না।

রসিক নির্বাচন নিয়ে জি এম কাদের বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবারো আমাদের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। একথা আমি আগেও অনেকবার বলেছি। মোস্তফা দুবার বিপুল ভোটে পাস করেছে। এবারো তার জনপ্রিয়তা ভালো, সাংগঠনিক দক্ষতা ভালো। তার দেশপ্রেম আছে। আমরা তাকে পছন্দ করি। আমরা তাকেই এখানে মনোনীত করবো ইনশাল্লাহ এবং লাঙ্গল মার্কা নিয়ে রংপুর সিটিতে মোস্তফাই নির্বাচিত হবে ইনশাআল্লাহ।

পরে তিনি রংপুর মহানগর ও জেলা জাপার কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। পাঁচ দিনের সফরে তিনি রংপুর ও লালমনিরহাটের বিভিন্ন দলীয় এবং সরকারি কমসূচিতে অংশ নিবেন।


আরো সংবাদ



premium cement