২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

পীরগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ছে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ, দুশ্চিন্তায় খামারিরা

- ছবি : নয়া দিগন্ত

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে ভাইরাসজনিত লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারি ও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা।

এমনিতে গরুর খাবার ভূষি, খৈল, ঘাসের দাম আগের চেয়ে অনেক বেশি। এর মধ্যেই এই রোগের প্রকোপ দিনদিন বাড়ছে। কোনো গরু আক্রান্ত হলে চিকিৎসা ও ওষুধের পেছনে ব্যয় হয় অনেক টাকা। এরপরে ওই গরুর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়।

এই রোগে আক্রান্ত গরুর গায়ে গুটি বের হতে দেখা যায়। পরে গায়ে প্রচণ্ড ব্যথায় গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন খামারি ও গরু পালনকারীরা। তবে রোগটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্র থেকে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ৯৪ হাজার ৩৪০টি গরু রয়েছে। তার মধ্যে অনেক আক্রান্ত গরুর শরীরের ফোসকা পড়ছে। কোনো গরুর পা ফুলে যাচ্ছে, কোনো গরুর গলাতে ঘা হচ্ছে।

চিকিৎসকদের মতে, এসব লক্ষণ লাম্পি স্কিন ডিজিজের। ক্ষুরা রোগের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর লাম্পি স্কিন ডিজিজ। সাধারণত শরতের শুরুতে ও বর্ষার শেষে মশা-মাছির মাধ্যমে এই রোগ প্রকট আকার ধারণ করে। মশা-মাছির এবং খাবারের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ভাইরাসজনিত এ রোগটি বেশি ছড়ায়।

রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সবুর আলম ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান বুলু বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে গরু পালন। প্রতিটি বাড়িতেই এখন গরু পালন করা হয়। অন্যদিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গরু পালনে অনেকের সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। পাশাপাশি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু নতুন এই রোগের কারণে শঙ্কিত গরু পালনকারীরা।

প্রাণিসম্পদ দফতরের কর্মকর্তা, খামারি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এ রোগটি সাধারণত মশা-মাছির বিস্তারের সময় ব্যাপক আকার ধারণ করে। মশা-মাছির ও খাবারের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে এ রোগ ছড়ায়। টিকা দিয়ে সংক্রমণ থেকে গরুকে রক্ষা করা যায়। আক্রান্ত হওয়ার পর অসুস্থ গরু আলাদা ও মশারির ভেতর রাখা জরুরি।

এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে আক্রান্ত গরুর গা হঠাৎ গরম হয়ে যায়। শরীরজুড়ে ছোট ছোট আকারে ফুলে ওঠে। অনেকটা আঁচিলের মতো। পা, ঘাড়, মাথায় এসব জায়গায় বেশি ওঠে। চামড়া উঠে ক্ষততে পরিণত হয়। এ রোগে আক্রান্ত গরু খাওয়া ছেড়ে দেয়। সব ধরনের গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত গবাদিপশুর চোখ দিয়ে পানি ঝরে চোখ অন্ধ হয়েও যেতে পারে। এ রোগে মারা যাওয়ার হার ১-৩ শতাংশ। ষাঁড় গরুর ক্ষেত্রে ইনফার্টিলিটি এবং গর্ভবতী প্রাণীতে গর্ভপাত ঘটে। খুরা রোগের চেয়েও এটি বেশি ভয়ঙ্কর।

পীরগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর মাহাফুজুর রহমান বলেন, আমার মতে গ্রামের বেশির ভাগ গরুই এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত গরুগুলো ঝিমায়, খাবার কম খায়। আক্রান্ত গরুগুলোকে আলাদা রাখতে হবে, তাহলে সংক্রমণ কম হবে।

উপজেলার জয়কৃষ্টপুর (তাজপুর) গ্রামের খামারি আব্দুর রহমান বলেন, সপ্তাহখানেক আগে আমার খামারের দুটো গরু অসুস্থ হয়। পরে পশু চিকিৎসক ডাকা হলে তারা ইনজেকশন ও ওষুধ দিয়েছে। গরু ভালো হবার পথে।

এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (প্রাণী স্বাস্থ্য) এসএমএ আজম বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাসজনিত এই রোগটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার হার খুবই কম, মাত্র ০.৫ ভাগ।

লাম্পি স্কিন ডিজিজ মূলত একটা ভাইরাসজনিত রোগ। তবে বাছুর গরু আক্রান্ত হলে বেশি সমস্যা হয়। বাছুর গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এই ভাইরাসের সঠিক চিকিৎসা দেয়া না হলেও রোগটি একটা সময় আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ দিন পরে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়, কিন্তু সঠিক চিকিৎসা না দেয়া হলে পরে গরু দুর্বল হয়ে যায়, গরু উঠতে পারে না। অণ্ডকোষ, গলা ও পা ফুলে গরুর মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং সেক্ষেত্রে গরু মারাও যেতে পারে। আক্রান্ত গবাদি পশুর চোখ দিয়ে পানি ঝরে, যার কারণে চোখ অন্ধও হয়ে যেতে পারে। গর্ভবতী প্রাণীদের গর্ভপাত হতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement