১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রেল স্টেশনে লাঞ্ছনার শিকার নারীকে অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি

রেল স্টেশনে লাঞ্ছনার শিকার নারীকে অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি - ফাইল ছবি

নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে এক নারী যাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে স্টেশনের বুকিং সহকারীসহ চার কর্মচারীর বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থানায় লিখিত অভিযোগ করায় তা তুলে নিতে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারী।

বুধবার রাত ৮টার দিকে স্টেশনের একটি কক্ষে আটকে রেখে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

লাঞ্ছনার শিকার ওই নারী সৈয়দপুর শহরেরই বাসিন্দা। তিনি কানাডিয়ান দম্পতির দোভাষী হিসেবে কর্মরত।

জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় ওই নারী ১ অক্টোবরের জন্য ঢাকাগামী আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য স্টেশনে যান। কিন্তু কাউন্টারের বুকিং সহকারী জানান উক্ত তারিখের কোনো টিকিট নেই। তবে তিনি ওই নারী যাত্রীকে কালোবাজারে টিকিট পেতে সৈয়দপুর প্লাজার গ্লোবাল কম্পিউটারের দোকানে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে গেলে ছয়টি টিকিটের মূল্য হিসেবে গ্লোবাল কম্পিউটারের মালিক সারোয়ার হোসেন ওই নারীর কাছে তিন হাজার ২০০ টাকা নিয়ে একটি স্লিপ দিয়ে পুনরায় স্টেশনের বুকিং সহকারীর কাছে পাঠান।

ওই নারী জানান, বুকিং সহকারী জাহেদুল ইসলাম রনিকে ওই স্লিপ দেওয়ার পর তাকে আক্কেলপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত চারটি টিকিট ১৫০০ টাকা এবং পার্বতীপুর থেকে জয়পুরহাট পর্যন্ত দুটি ৩০০ টাকা মূল্যের টিকিট দেন। এ সময় সৈয়দপুর স্টেশন থেকে ঢাকা পর্যন্ত টিকিট না দেয়ায় এবং টিকিটের মূল্য ১৮০০ টাকার স্থলে ৩২০০ টাকা নেয়ার কথা তোলায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

পরে আরো দু‘জন রেল কর্মচারী মিলে তাকে টেনে হিঁচড়ে বুকিং সহকারীর কক্ষে আটকে মহিলা রেল কর্মচারীসহ চারজন মিলে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় তাকে দেয়ালের সাথে মাথা চেপে ধরে চর-থাপ্পড় মারতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে টিকিট ও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

খবর পেয়ে সাংবাদিকরা রেল স্টেশনে গেলে বুকিং সহকারী রনিসহ অন্যরা
অসৌজন্যমুলক আচরণ করে। এতে চরম হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। পরে সাংবাদিক নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং আটকে রাখা ওই নারী যাত্রীকে ছেড়ে দেয়া হয়।

সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী মাহবুব হোসেন বলেন, নারী যাত্রীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা সত্য নয়। তিনি শহরের কোন স্থান থেকে কত টাকায় টিকিট সংগ্রহ করেছেন তা আমাদের জানা নেই। বুকিং থেকে তার টিকিট প্রিন্ট করে দেয়া হয়েছে।

গ্লোবাল কম্পিউটার দোকান মালিক সারোয়ার বলেন, ‘ওই নারীকে আমি চিনি না। তিনি অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে চাওয়ায় তা করে দিয়েছি। স্টেশন থেকে কেউ পাঠিয়েছে কি না তা আমার জানা নাই। ওই নারী অভিযোগ মিথ্যা বলেও দাবি করেন তিনি। তবে টিকিটের অতিরিক্ত দাম নেয়া হয়েছে কেন? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়েই তিনি মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল ইসলাম বলেন, স্টেশনে টিকিট সংগ্রহের সময় লাঞ্ছিতের ঘটনায় বুকিং সহকারী জাহেদুল ইসলাম রনির বিরুদ্ধে এক নারী লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে রেলওয়ের অজ্ঞাত আরো কয়েকজন কর্মচারীর কথা উল্লেখ করা রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে ভুক্তভোগী নারী বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্ন পর্যায় থেকে মোবাইলে চাপ দেয়া হচ্ছে। সমঝোতা না করলে পাল্টা মামলা দেয়ার ভয় দেখানোসহ ভবিষ্যতে আরো বড় বিপদে পড়ার আশঙ্কা আছে বলেও হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তার।


আরো সংবাদ



premium cement