২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কুড়িগ্রামে এসএসসি’র প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে কেন্দ্র সচিবসহ গ্রেফতার ৩

- ছবি - সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে চলতি এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান, বিদ্যালয়ের অপর দুই সহকারী শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল ও জোবায়ের হোসাইন। এ ঘটনায় একজন পলাতক রয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থানায় এনে বাছাইয়ের (সর্টিং) সময় ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নের প্যাকেটের ভিতর বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্রের একটি করে খাম ঢুকিয়ে নেয়া হয়।

সীলগালা করা প্যাকেটের ওপর স্বাক্ষর করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান। বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার দিন থানা থেকে বাংলা প্রথম পত্রের প্যাকেট এনে তা খুলে বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নের খামগুলো কৌশলে সরিয়ে ফেলা হয়। শিক্ষা বোর্ডের দেয়া তালিকা অনুযায়ী পাঠানো প্রশ্নেপত্রের খাম গণনা করার নিয়ম থাকলেও কেন্দ্রের দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার দায়িত্ব অবহেলা করে তা করেননি।

পরে ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের উত্তর তৈরি করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে ১৫-২০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করা হয়।

প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নজরে এলে তারা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন। পরে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন ও পুলিশ।

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মা, সহকারী পুলিশ সুপার মোর্শেদুল হাসান, ওসি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে গণিত, কৃষি বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র উদ্ধার করে। এই বিষয়গুলোর পরীক্ষা এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি।

প্রশ্নপত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের কক্ষে রয়েছে নিশ্চিত হয়ে তারা অভিযান চালায়।

উল্লেখ, পুলিশ জানতে পারে ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্যাকেটে ওই প্রশ্নপত্রগুলো ঢোকানো ছিল। পরে বিকেলে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানকে থানায় নিয়ে যায়।

রাতে প্রধান শিক্ষককে আটক করা হলেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে ইংরেজি শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক জোবায়ের হোসাইনকে আটক করা হয়। অপরদিকে বুধবার ভোরে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হামিদুর রহমান ও সোহেল আল মামুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলার অপর আসামি অফিস সহকারি আবু হানিফ পলাতক রয়েছে।

এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে আসামি না করায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পুলিশ সুপার আল আসাদ মোঃ মাহফুজুল ইসলাম, দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তার অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা না বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।

ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন পলাতক রয়েছেন। মামলার তদন্ত চলছে। আরো কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

ভূরুঙ্গামারী-কচাকাটা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোর্শেদুল হাসান বলেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের ট্যাগ অফিসার আদম মালিক চৌধুরি মামলা করেছেন।

এদিকে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় চার বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করেছে।

বুধবার সকালে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলমান পরীক্ষার গণিত (১০৯), পদার্থবিজ্ঞান (১৩৬), কৃষি বিজ্ঞান (১৩৪) ও রসায়ন (১৩৭) এই চার বিষয়ের পরীক্ষা অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হলো। স্থগিতকৃত বিষয়গুলোর পরীক্ষার তারিখ পরে জানানো হবে।


আরো সংবাদ



premium cement