২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা বিনবিনিয়াবাসি

তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা বিনবিনিয়াবাসি। - ছবি : নয়া দিগন্ত

পানি বাড়া শুরু হতে না হতেই রংপুরের গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দের বিনবিনিয়াবাসি আবারো তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা। ভাঙ্গন রক্ষায় স্থানীয় চেয়াম্যানের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় দেয়া গ্রোয়েন বাঁধটিও ভেঙে যাচ্ছে।

ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনোভাবেই ভাঙন প্রতিরোধে সেখানে কাজ করার উদ্যোগ নিচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তিস্তার ডান তীরে কোলকোন্দ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিনবিনা পশ্চিম পাড়ায় ডান তীর রক্ষা বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন ধরেছে। ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ, বাঁশের ঝাড়, জমি-জমা, বসতবাড়ি। প্রায় মাস দুয়েক আগ থেকে সেখানে ভাঙন প্রতিরোধে স্থাণীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে ভুক্তভোগীদের সহায়তায় স্বেচ্ছায় গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু সেটিও ভাঙনের মুখে পড়েছে।

স্থাণীয় মেম্বার মনোয়ারুল ইসলাম জানান, বিনবিনা নারিকেল তল থেকে খৈখাওয়া পর্যন্ত যে বেড়িবাঁধটি ছিল সেটি গতবারের বন্যায় অর্ধেক ভেঙে গেছে। এবার পুরোটাতেই ভাঙন ধরেছে।

তিনি জানান, আমরা স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে দুই পয়েন্টে দু’টি গ্রোয়েন বাঁধ দেয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু তিস্তার পানি বাড়ার সাথে সাথে ওই বালুর গ্রোয়েন বাঁধ দু’টিও ভেঙে যাচ্ছে।

স্থানীয় মহিলা মেম্বার নারগিছ আক্তার জানান, এক সপ্তাহ থেকে তিস্তায় পানি বাড়ছে-কমছে। কিন্তু ভাঙন চলছেই। পানি যদি আর সামান্য বাড়ে তাহলে এই পুরো এলাকা নদীগর্ভে চলে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ জানান, বেড়িবাঁধটির পূর্বের অংশে ইতোমধ্যে ভেঙে গেছে। এখন খৈখাওয়া অংশে ভাঙন ধরেছে। যদি এই ভাঙ্গন রোধ করা না যায় তাহলে খৈখাওয়া, পাঙ্গাটারী, মধ্যপাড়া, আমিনগঞ্জসহ আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামে ভাঙন ছড়িয়ে পড়বে। আউলিয়া বাজার, বিনবিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, এই ভাঙন রোধে স্থানীয়রা দুই পয়েন্টে দু’টি বালু দিয়ে গ্রোয়েন বাঁধ নির্মান করছে। নিজেরা চাঁদা তুলে কিছু বস্তা কিনে সেগুলো ফেলা হচ্ছে। কিন্তু পানি বাড়ার সাথে সাথে ওই দু’টির মধ্যেও ভাঙন ধরেছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এমনকি আমার ফোনও তারা ধরছেন না। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে গ্রোয়েন বাঁধ দু’টিসহ বেড়িবাঁধটি জরুরী ভিত্তিতে জিওব্যাগ দিয়ে রক্ষা করার আবেদন জানিয়েছেন। তা না হলে এই এলাকার চার হাজার বাড়িঘর ভাঙন হুমকিতে পড়বে। হাজার হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

ভাঙনের মুখে পড়া পাকার মাথার পশ্চিম পাশের দিলীপ কুমার জানান, বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নদী আমাদের বাড়ির একাংশ ইতোমধ্যেই ভেঙে নিয়েছে। পানি আরেকটু বাড়লে বাকি বাড়িও ভেঙে যাবে। আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো? কেউ আমাদের দেখার নাই?

ভাঙনের কবলে পড়া পাকার মাথার পূর্ব পাশের মোজাম্মেল হক জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের দিকে দেখে না। আমার বাড়ির একাংশ চলে গেছে। অন্য অংশ নদীগর্ভে যাওয়ার বিষয়টি সময়ের ব্যাপার মাত্র। তিনি বলেন, সরকার আমাদের ওপর সহানুভূতিশীল না হওয়ার কারণে আমরা বাস্তুহারা হচ্ছি। জমিজমা, ভিটে-মাটি সব তিস্তা খেয়ে ফেলছে।

স্থাণীয় গোলাম মোস্তফা জানান, এই বাঁধটি ভেঙে গেলে পাশেই খৈখাওয়া এলাকায় অবস্থিত সমবায় ভিত্তিতে গড়ে তোলা ২০০ একর জমির মৎস খামার নষ্ট হয়ে যাবে। এতে এই খামারের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ৫০০ পরিবারের জীবিকা নিয়ে হুমকির মুখে পড়বে।

তিনি বলেন, শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও এসেছিলেন পরিদর্শনে। আমিসহ এলাকাবাসী তার হাত-পা ধরে অনুরোধ করেছে জিওব্যাগসহ কাজ করার। কিন্তু তিনি আমাদের কোনো আশ্বাস দেননি।

এ ব্যাপারে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, ভাঙন কবলিত বিনবিনিয়া এলাকায় একটি টেকসই বাঁধ নির্মানের প্রকল্প প্রস্তাব সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি সমীক্ষা করা হচ্ছে। সমীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

তিনি বলেন, শনিবার ভাঙন এলাকার সর্বশেষ পরিস্থিতি একজন এসও গিয়ে দেখে এসেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement