২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হিন্দু থেকে মুসলিম বনে বিয়ে, পরে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন!

হিন্দু থেকে মুসলিম বনে বিয়ে, পরে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ - ছবি : নয়া দিগন্ত

নীলফামারীর সৈয়দপুরের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যৌতুক চেয়ে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। হিন্দু থেকে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করা ওই চিকিৎসক স্ত্রীর সাথে নিজের সম্পর্ক অস্বীকার করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন এবং ধর্মান্তরের পর তা অস্বীকার করছেন বলেও অভিযোগ।

রোববার দুপুর ১২টায় সৈয়দপুর প্লাজার রেড চিলি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী নারী সানজিদা চৌধুরী সুরভী। সুরভীর বাড়ি সৈয়দপুর শহরের বাবুপাড়ায়।

অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম ডা: মান্না চক্রবর্তী। তিনি সৈয়দপুর শহরের বাঙ্গালীপুর নিজপাড়ার ডা: ষষ্ঠী চরণ চক্রবর্তী ও মালারানী চক্রবর্তীর ছেলে। সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসকও তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সানজিদা চৌধুরী সুরভী জানান, সৈয়দপুরের বাসিন্দা হলেও তারা পারিবারিকভাবে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস করেন। ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়ায় ১৩ বছরের সংসার জীবনের ইতি টানেন তার প্রথম স্বামী। এতে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হন এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি আগে থেকেই থ্যালাসেমিয়ার রোগী। ২ বছর আগে সৈয়দপুরে বেড়াতে এসে অসুস্থ হলে ডক্টরস ক্লিনিকে যাই। সেখানে থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসক ডা: মান্না চক্রবর্তীর কাছে চিকিৎসা গ্রহণ করি।’

পরে ঢাকায় গিয়েও মোবাইলে তার পরামর্শে ওষুধ সেবন অব্যাহত রাখেন বলে জানান সানজিদা।

তিনি বলেন, এভাবেই তার সাথে পরিচয়। এক পর্যায়ে আমার সম্পর্কে বিশদ জেনে তিনি আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি হিন্দু হওয়ায় আমার থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পান না। ফলে তিনি নিজে থেকেই নীলফামারী নোটারি পাবলিকে এফিডেভিটের মাধ্যমে মো: মান্না মুন নাম ধারণ করে ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপরই আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। বিয়ে না করলে আমার নামে ভার্চুয়াল অপপ্রচার করবেন বলেও হুমকি দেন তিনি।

এমতাবস্থায় গত ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট ঢাকায় কোতোয়ালী থানাধীন জনসন রোডের কাজী অফিসে ইসলামী শরীয়াহ আইনে আমাকে বিয়ে করেন ডা. মান্না মুন। পরে ঢাকায় নোটারি পাবলিকে বিয়ে সংক্রান্ত যৌথ এফিডেভিটও করা হয়। এরপর প্রায় এক মাস ঢাকায় একসাথে বসবাস করি আমরা।

কিন্তু গত অক্টোবরে শাশুড়ি মালারানী আমাদের সৈয়দপুরে নিয়ে আসেন। এখানে থাকাবস্থায় তারা আমার ওপর চরম অত্যাচার শুরু করেন। আমাকে ও আমার প্রতিবন্ধী ছেলেকে ঠিকমত খাবারও দেয়া হয়নি। এমনকি স্বামী মান্নাকে শাশুড়ি মাদক সরবরাহ করে নেশাগ্রস্ত করার মাধ্যমে আমার ওপর অত্যাচারে প্ররোচিত করেন। এতে অতিষ্ঠ হয়ে কারণ জানতে চাইলে তারা আমার কাছে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। তাদের কথায় রাজি না হলে সংসার করতে দিবেন না বলে হুমকি দেন মালারানী। এমনকি সৈয়দপুরেও থাকতে দেয়া হবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন। যৌতুক দিতে অস্বীকার করায় এক মাস পর ব্যাপক অত্যাচার করে তিনি আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।

সনিজিদা বলেন, পরে বাধ্য হয়ে সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় উঠি। সেখানে স্বামীও আসেন। ফের আমাদের একত্রে বসবাস শুরু হয়। এরই মাঝে গত ১ জানুয়ারি আবারও মান্না মাদকাসক্ত হয়ে আমার ওপর অত্যাচার শুরু করলে তার সাথে ঝগড়া হয়। এতে তিনি রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এরপর থেকে কোনোভাবেই তার সাথে আর যোগাযোগ করতে পারিনি। মোবাইল, ফেসবুক থেকে আমাকে ব্লক করে রাখেন। পরে জানতে পারি, মান্না তার মায়ের বাড়িতে ৬ মাস আগে কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেয়া তার প্রথম স্ত্রীর সাথে বসবাস করছেন।

এই পরিস্থিতিতে আমি হতাশ হয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য অনেকের দ্বারে ঘুরেছি। এ সময়েই গত ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় সৈয়দপুর প্লাজার সামনের রাস্তায় মান্না ও মালারানীর দেখা পেয়ে আমার ন্যায্য অধিকার দেয়ার দাবি জানাই। এতে তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ সময় এ বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে মারপিট করে তারা আমাকে বিবস্ত্র করে সৈয়দপুর থেকে তাড়িয়ে দিবেন বলে হুমকি দেন।

এমনকি আইন-আদালত করলে প্রাণে মেরে ফেলে লাশ গুম করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন আমাকে। মালারানী নিজেকে সৈয়দপুরের গডমাদার আখ্যায়িত করে সাবধান হওয়ার জন্য বলেন। এ ব্যাপারে পরদিন সৈয়দপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা নানাভাবে আমাকে হয়রানি করে চলছেন।

এফিডেভিট করে ধর্মত্যাগ, বিয়ে করেও এখন তা অস্বীকার করার মাধ্যমে আদালত-ধর্ম-সমাজকে অবজ্ঞা করে তারা অন্যায় করছেন। যৌতুকের লোভে পরিকল্পিতভাবে আমার ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিয়েছেন তারা। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে আমি এখন দুর্বিষহ জীবনযাপন করছি।

বিয়ের নামে এহেন প্রতারণার উপযুক্ত বিচার চেয়ে সানজিদা বলেন, ‘এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে আমাদের মা-ছেলের জীবন নষ্ট করার জন্য আমি তাদের বিচার চাই। এজন্য প্রশাসনের কাছে আইনি সহযোগিতা ও সংবাদকর্মীদের কাছে মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য সহায়তা
কামনা করছি।’


আরো সংবাদ



premium cement