২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৩৫ হাজার তালবীজ বপণ করে খোরশেদ আলীর দৃষ্টান্ত স্থাপন

- ছবি - বাসস

তালগাছ বজ্রপাত প্রতিরোধসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিশেষভাবে উপকার করে। বিলুপ্তির পথ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ৭নং চিলারং ইউনিয়নের ৬৭ বছরের ইমাম মোঃ খোরশেদ আলী। পরিবেশ সচেতন এ মানুষটি ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রতিবছর পাঁচ হাজার করে তালবীজ বপন করে আসছেন, বর্তমানে তার পরিচর্যায় প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি তালের চারাগাছ রয়েছে।

ইমাম মোঃ খোরশেদ আলী পেশায় একজন পল্লী-চিকিৎসক। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে চিলারং ইউনিয়নের রেলঘুন্টি থেকে আখানগড় রেলস্টেশন পর্যন্ত বীজ রোপণ করা সাড়ে তিন হাজার গাছ একটু দৃশ্যমান। এই গাছ রোপণ করতে গিয়ে তিনি তার পৈতৃক কৃষিজমি বিক্রি করেছন। তবুও তিনি থেমে থাকেননি। তালের আঁটি সংগ্রহ করা সহজ ছিল না। বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে-ঘুরে তালবীজ সংগ্রহ করতে এতে অনেক শ্রম ও শ্রমিক লেগেছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পল্লীবিদ্যুৎ বাজার থেকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কাদসূকা ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার এবং কাদসূকা ব্রিজ থেকে চৌরঙ্গী বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কের দু’ধারে এ কাজ চালিয়ে যেতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে জানতে চাইলে তিনি টাকার হিসাব প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেন।

খোরশেদ আলী বলেন, মানুষের চলার পথে টাকা-পয়সা বড় কথা নয়। মানুষের মধ্যে স্মৃতি হয়ে থাকতে চাই। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গত সাত বছর ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন স্থানে ও রাস্তার পাশে তাল বীজ বপণ করেছি। নিয়মিত গাছ পরিচর্যার জন্য তিনি পাহারাদার রেখেছেন। তিনি আরো বলেন, প্রতিবছর রাস্তায় পাঁচ হাজার করে তাল বীজ বপণ করেছি। এ কাজে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

দূর্যোগ হতে প্রকৃতি ও পরিবেশ ও মানুষকে রক্ষা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তালবীজ বপণে ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আমার ইচ্ছে এই বর্ষায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ১০টি করে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা বিনা মূল্যে রোপণের জন্য বিতরণ করব। এ লক্ষ্যে প্রায় ৩০ হাজার গাছের চারা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ ছাড়া সবাইকে কমপক্ষে পাঁচটি করে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণের জন্য আবেদন করছি। সেইসাথে সরকারিভাবে বেশি-বেশি গাছের চারা বিতরণের উদ্যোগ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানান তিনি। ঠাকুরগাঁওয়ে লক্ষাধিক তালের চারা গাছ লাগিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও উন্নয়নে কাজ করবে তিনি বলেও জানান তার পরিকল্পনার কথা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, খোরশেদ আলীর কাজ সারাদেশে অনন্য নজির হয়ে থাকবে। এ ধরণের আজ আরো কিছু মানুষ করলে দেশ দশ ও পরিবেশ ও প্রকৃতির উপকারে আসবে। খোরশেদ আলীর মতো তালসহ অন্যান্য গাছ লাগাতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান এ বন কর্মকর্তার।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন ও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণ রায় জানান, তালগাছের অবস্থান প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য অবদান স্বরুপ। তাছাড়া তালগাছ বজ্রপাতসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে রোধে বিশেষভাবে উপকার করে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগ হতে রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ইমাম মোঃ খোরশেদ আলী। তাকে সাধুবাদ জানানো উচিত। পাশাপাশি তার দেখে তাকে অনুসরণ করে নতুন প্রজন্মের এ ধরণের গাছ লাগানো কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে পরিবেশকে বাঁচাতে এগিয়ে আসা উচিত বলে না মনে করেন এ দুই কৃষি কর্মকর্তা।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মনসুরুল আজিজ বলেন, গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান এবং সুস্থ থাকুন। যত বেশি গাছ লাগানো হবে তত বেশি প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকবে। দেশের প্রায় সর্বত্রই তাল গাছসহ বড়-বড় গাছের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। এতে করে বজ্রপাতে মানুষের প্রাণহাণি বাড়ছে। তাই তাল গাছ লাগানো খুবই জরুরি। আর খোরশেদ সাহেব অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় কাজ করছেন। তাকে অনুসরণ করে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় ঠাকুরগাঁও সড়ক বিভাগও কাজ করবে বলেও জানান তিনি।

এমন মহৎ উদ্যোগ নেয়ায় খোরশেদ আলীকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলার জেলা প্রশাসক মোঃ মাহবুবুর রহমান, এছাড়াও জেলা পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

জেলা প্রশাসক বলেন, এ রকম শ্রম দিয়ে দেশের সেবা করার মতো মানুষের আজ খুবই অভাব। ইমাম মোঃ খোরশেদ আলীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। এই কাজে তাকে পুরস্কৃত করা উচিত আমাদের। আর তাকে অনুসরণ করে জেলা প্রশাসনও এ কাজে উৎসাহিত হবে বলেও জানান তিনি।

সূত্র : ইউএনবি

 

সাদা বলে ভারত-পাকিস্তানের ৬টি শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ

পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান বিশ্বকাপের ফেভারিট দল হিসেবেই মিশন শুরু করবে বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন ভারত।

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই অন্যরকম উন্মাদনা। আগামীকালের ম্যাচের আগে এশিয়ার চির প্রতিদ্বন্দ্বি দুই প্রতিবেশী দলের মধ্যকার ছয়টি রোমঞ্চকর ও শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের দিকে আলোকপাত করা যাক।

শেষ বলের ছক্কা (শারজাহ -১৮ এপ্রিল, ১৯৮৬) : মরুর ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে জাভেদ মিয়াঁদাদের শেষ বলের ছক্কাটি এখনো জ্বলজ্বল করছে ভারতীয় সমর্থকদের মনে। কারণ নাটকীয় ওই ফাইনালে তাদের হৃদয় ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল ওই ছক্কা। ম্যাচে এক উইকেট জয়লাভ করে পাকিস্তান।
ম্যাচটি জয়ের জন্য পাকিস্তানের টার্গেট ছিল ২৪৬ রান। দলটি ৬৩ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলার পর মাঠে নেমে মিয়াঁদাদ ১১৪ বলের অপরাজিত ১১৬ রান করেন। ম্যাচের শেষ বলে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল চার রান। ভারতীয় ফাস্ট বোলার চেতন শর্মার ফুলটস বলটি সোজা গ্যালারিতে পাঠিয়ে দেন পাক ব্যাটসম্যান।

টেন্ডুলকার নৈপুণ্য (সেঞ্চুরিয়ান -১ মার্চ ২০০৩) : ভারতকে বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন লিটল মাস্টার শচিন টেন্ডুলকার। কিন্তু ৫০ ওভারের ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে তার করা ৯৮ রানের ইনিংসটি এখনো স্মরনীয় হয়ে আছে পাকিস্তানের গতিদানব শোয়েব আক্তারের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে।

২৭৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস ও শোয়েব আখতারের মত আগ্রাসী বোলিং লাইন আপের বিপরীতে শচিনের ৭৫ বলের ওই ব্যাটিং ভারতকে পৌঁছে দিয়েছিল জয়ের বন্দরে।

আখতারের অসাধারণ গতির একটি বল মাস্টার ব্লাস্টর শচিনের আপার কাটের মাধ্যমে থার্ডম্যান অঞ্চল দিয়ে ছয় হাকানোর ঘটনাটি এখনো তার কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। শেষ পর্যন্ত শচিনের উইকটটি অবশ্য দখল করে প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হয়েছিলেন শোয়েব আখতার। কিন্তু ততক্ষনে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে।

বোল্ড আউট নাটক (ডারবান- ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৭) : টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম আসরে গ্রুপ পর্বে ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচটি টাই হয়। ভারতের মত পাকিস্তানও সংগ্রহ করেছিল ১৪১ রান।
কিন্তু আকর্ষনীয় বোল আউট প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে ভারত। দুই দলের পাঁচজন করে খেলোয়াড়কে নেয়া হয় অপর প্রান্তের স্টাম্পে বল লাগানোর জন্য। এই সময় ভারতীয় অধিনায়ক এমএস ধোনি তার দলে বেছে নেন অনিয়মিত স্লো বোলারদের। সফলও হন তিনি। পাকিস্তানের পেসাররা স্টাম্প ভাঙতে ব্যর্থ হলেও ভারতের সব বোলারই বল স্টাম্পে লাগাতে সক্ষম হন।
পরে অবশ্য এই বোল্ড আউট পদ্ধতি বাতিল করে সুপার ওভার প্রবর্তন করা হয়েছে।

মিসবাহ’র হৃদয় ভেঙে যাওয়া (জোহানেসবার্গ- ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৭): ১০দিন পর দল দুটি শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল দর্শকে ঠাসা স্টেডিয়ামে। এই সময় ১৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে পাকিস্তান মাাত্র ৭৭ রানে হারিয়ে বসে ছয়টি উইকেট। তবে একপাশ আগলে রেখে মিসবাহ পাকিস্তানের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। ম্যাচটিকে তিনি নিয়ে যান শেষ ওভার পর্যন্ত।

এই সময় যোগিন্দার সিংয়ের শেষ ওভার থেকে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে দেন মিসবাহ। পরের বলে স্কুপ শট খেলতে গিয়ে সেটি উপরে উঠে যায়। আর আছড়ে পড়ে শান্তকুমারন শ্রীশান্তের হাতে, যা ভেঙে দেয় মিসবাহর হৃদয়কে।

প্রফেসরের ভূমিকা (ব্যাঙ্গালোর-২৫ ডিসেম্বর, ২০১২): অধিনায়ক মোহাম্মদ হাফিজের বিশেষ প্রচেষ্টায় দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে টি-২০ ফর্মেটে একমাাত্র জয়টি লাভ করেছিল পাকিস্তান।

ভারতের বিপক্ষে জয়ের জন্য ১৪৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে মাত্র ১২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় পাকিস্তান। এই সময় ভুবনেশ্বর কুমার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন উমর আকমলকে।

পরে ‘প্রফেফসর’ খেতাবধারী হাফিজ শোয়েব মালিককে নিয়ে ১০৬ রানের যোগাান দেন। যেখানে তার সংগ্রহ ছিল ৫৭ রান। ফলে দুই বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। তবে টি-২০ ক্রিকেটের পাকিস্তানের বিপক্ষে হেড টু হেডের বিচারে ভারত এগিয়ে আছে ৭-১ ব্যবধানে।

জামান ক্লাসিক (লন্ডন-১৮ জুন ২০১৭): আন্ডর ডগ হিসেবে খেলতে এসে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে উঠে যায় পাকিস্তান। ভারতের বিপক্ষে ওভালে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ফখর জামানের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে ভর করে পাকিস্তান চার উইকেটে সংগ্রহ করে ৩৩৮ রান। জামান সতীর্থ আজহার আলীর সাথে ওপেনিং জুটিতে সংগ্রহ করেন ১২৮ রান। তিনি নিজে ১০৬ বলের মোকাবিলায় করেন ১১৪ রান। যার ফলে সহজেই বিরাট কোহলির ভারতকে হারাতে সক্ষম হয় পাকিস্তান।

ভুবনেশ্বর কুমার ও জস্প্রিত বুমরাহকে বাঁ হাতি জামান পাড়া মহল্লার বোলার বানিয়ে হাকিয়েছেন ১২টি চার ও তিনটি ছক্কা। জবাবে মাত্র ১৫৮ রানে ভারতকে আটকে দেয় পাকিস্তানী বোলাররা।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement