২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এখন কোথায় আছেন ত্ব-হা আদনান

ত্ব-হা আদনান - ছবি : সংগৃহীত

নিখোঁজের আট দিন পর ফিরে এসে আদালতের নির্দেশে নিজ জিম্মায় জীবনযাপনের অনুমতি পাওয়া ইসলামিক বক্তা আফছানুল আদনান ওরফে আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানের শরীরে করোনার লক্ষণ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার। এজন্য তিনি এখন আইসোলেশনে আছেন। তবে কোথায় আছেন সেটি বলতে নারাজ তার পরিবার। সুস্থ হয়ে তিনি মিডিয়ার সাথে কথা বলবেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গতকাল শনিবার বেলা আড়াইটায় রংপুর মহানগরীর পায়রা চত্বর সেন্ট্রাল রোড হাজী লেনে ত্ব-হার মায়ের বাড়িতে (আদালতের জিম্মায় ছাড়া পেয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টায় তিনি এই বাড়িতে আসেন) গিয়ে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার ভাগিনা পরিচয়দানকারী সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ত্ব-হার মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তাই এখন তিনি আইসোলেশনে থাকতে চাইছেন। তিনি সুস্থ হয়ে মিডিয়ার সামনে কথা বলবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। তার সাথে কী হয়েছে। কী কারণে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। সব কিছুই তিনি বলবেন বলে জানান ওই ভাগিনা। করোনা পরীক্ষার স্যাম্পল দেয়া হয়েছে কি না এ ব্যাপারে ভাগিনা সিরাজুল জানান, আপাতত স্যাম্পল দেয়ার চিন্তাভাবনা নেই। তিনি পারিবারিকভাবে আইসোলোশনে থাকবেন ১৪ দিন। এরপর পরিস্থিতি বুঝে স্যাম্পল দেয়ার সিদ্ধান্ত নেবে পরিবার।

ভাগিনা সিরাজ আরো জানান, তার (ত্ব-হার) শরীরে জ্বর, গলা ও গায়ে ব্যথা এবং কাশি আছে। এ সময় ভাগিনার মাধ্যমে তার মা ও বোনের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি জানিয়েছেন, ত্ব-হা ফিরে আসায় তারা খুশি। তবে তারা এখন মিডিয়ার সামনে কথা বলবেন না।

অন্যদিকে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার আদালত থেকে নিজ জিম্মায় ছাড়া পেয়ে ত্ব-হা একটি সাদা রঙের গাড়িতে করে মা আজেদা বেগম, বোন রিকিতা রুবাইয়াত ইসলাম অনন্যাসহ মামার সাথে নগরীর সেন্ট্রাল রোডের হাজি লেনের মায়ের বাড়িতে আসেন। ত্ব-হার দাদার বাড়ি রাজশাহী হলেও শিশুবেলা থেকেই তিনি হাজী লেনের নানার বাড়িতেই থাকতেন। আড়াই বছর বয়সে তার বাবা মারা যান। তবে তিনি বিয়ে করার পর শালবন মিস্ত্রিপাড়ায় স্ত্রী সন্তানসহ বসবাস করতেন।

শুক্রবার সাড়ে ১১টায় রংপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোতোয়ালি আমলি আদালতের বিচারক কে এম হাফিজুর রহমানের এক আদেশে নিজ জিম্মায় ছাড়া পান তিনি। এরপর রাত সোয়া ১২টায় পরিবারের লোকজনের সাথে তিনি মায়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এর আগে রাত ৯টা ২১ মিনিটে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে নিখোঁজ জিডির সূত্র ধরে পুলিশ তাকে ওই আদালতে হাজির করেন। আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়ে নিজ জিম্মায় স্বাভাবিক জীবনযাপনের অনুমতি চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। একই সময়ে তার সফর সঙ্গী মিঠাপুকুরের কাফ্রিখাল গ্রামের আব্দুল মুহিত আনছারী, গাড়িচালক নগরীর উত্তর আশরতপুর এলাকার আমির উদ্দিন মোহাম্মদ ফয়েজও একই ধারায় ভিকটিম হিসেবে জবানবন্দী দিয়ে নিজ জিম্মায় ছাড়া পেয়ে পরিবারের সাথে চলে যান।

এর আগে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় রংপুর মহানগর ডিবি কার্যালয়ে ব্রিফিং করেন মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘পারিবারিক ব্যক্তিগত কারণে ত্ব-হা আদনান ও অপর সঙ্গীরা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন। নিখোঁজ হওয়ার দিনেই তারা গাইবান্ধার ত্রিমোহনী এলাকায় বন্ধু সিহাবের বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন। তবে সেখানে সিহাব ছিল না। জুমার নামাজের আগে ত্ব-হা তার প্রথম স্ত্রী আবিদা নুরের বাবার বাড়ি রংপুর মহানগরীর মাস্টারপাড়ায় আসেন। খবর পেয়ে আমরা তাকে পুলিশি হেফাজতে নিয়েছি। একই সাথে গাড়িচালক রংপুর মহানগরীর উত্তর আশরতপুর এলাকার মোক্তার হোসেনের ছেলে আমির উদ্দিন, সফর সঙ্গী রংপুরের মিঠাপুুকুরের কাফ্রিখাল ইউনিয়নের কাফ্রিখাল গ্রামের আনছারুল হকের ছেলে আব্দুল মুহিত আনছারীও বাড়িতে ফিরে আসে।

তাদের তিনজনকেই আমরা সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করি। সে সময়ও তারা ব্যক্তিগত পারিবারিক কারণে নিজেরাই আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানান। এরপর আমরা তাদের পরিবারের করা সাধারণ ডায়েরির আলোকে তাদের আদালতে উপস্থাপন করি।

আদালতে উপস্থিত কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রশিদ জানান, ত্ব-হা, আমির ও মুহিত ভিকটিম হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়ে নিজেদের জিম্মায় থাকার আবেদন করলে আদালত তাদের নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেন। অপর সফরসঙ্গী বগুড়ার শিবগঞ্জের কিচক ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলা গ্রামের আনিছুর রহমানের ছেলে ফিরোজ আলমও বাড়ি ফিরেছেন। তিনি শিবগঞ্জ থানায় করা সাধারণ ডায়েরি প্রত্যাহার করায় তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement