২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চিকিৎসার টাকার জন্য বন্ধক রাখা হয়েছে বসতঘরটিও

চিকিৎসার টাকার জন্য বন্ধক রাখা হয়েছে বসতঘরটিও - ছবি - নয়া দিগন্ত

একদিকে শারীরিক অসুস্থ্যতা, অন্যদিকে লকডাউনে কর্মহীন। চিকিৎসার খরচ জোগাতে একমাত্র বসত ঘরটি ১২ হাজার টাকায় একমাসের জন্য বন্ধক রেখে এখন দিশেহারা রংপুরের পীরগঞ্জের যুবক আলমগীর হোসেন। সে টাকাও শেষ। চিকিৎসা করাতে গিয়েও পড়েছেন বিড়ম্বনায়। বসত ঘর বন্ধক রাখা এবং খাবার জোগাতে না পারায় সন্তানসহ স্ত্রীও চলে গেছেন বাপের বাড়ি। জনপ্রতিনিধির কাছে ধর্ণা দিয়েও মেলেনি সহযোগিতা। অন্যদিকে তার চিকিৎসার জন্য রংপুরের ফেসবুক ভিত্তিক সামাজিক সংগঠন আমরাই পাশের কর্মীরা আলমগীরকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন।

আলমগীর হোসেন রংপুরের পীরগঞ্জের মিঠিপুর ইউনিয়নের রওশনপুর ঘোনাপাড়া গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে । একসময় ঢাকায় রিকশা চালিয়ে ভালোই সংসার চলতো তার। এরই মধ্যে শরীরে দানাবাঁধে আলসারসহ নানারোগ। চলমান লকডাউনে তা আরো বেড়ে যায়। চিকিৎসার খরচা জোগাতে শেষমেষ উপায়ন্তর না পেয়ে বসত ঘড়টিও একমাসের জন্য ১২ হাজার টাকায় বন্ধক রাখেন প্রতিবেশী দুলাভাই আব্দুল আলিমের কাছে। তিনিও ঢাকায় রিকশা চালন। চিকিৎসা করাতে গিয়ে সে টাকাও শেষ।

চুক্তি অনুযায়ী টাকা ফেরত না দিলে ঘর খুলে নিয়ে যাবেন বন্ধককারী আলিম উদ্দিন। এদিকে ঘর বন্ধক রাখা ও খেতে না পারায় না দুই সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী খাদিজা বেগম রাগ করে চলে যান বাপের বাড়ি। এমন অবস্থায় আলমগীরের সামনে শুধুই অন্ধকার নেমে আসে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে ধর্না দিয়েও চিকিৎসার কোনো অর্থ মেলাতে পারেননি স্বজনরা।

আলমগীরের মা মনোয়ারা বেগম ও পিতা সাহেব আলী জানান, টাকা না থাকায় ওর চিকিৎসা নিয়ে হয়েছে বিপত্তি। রংপুর মহানগরীর মেডিক্যাল মোড়ের রংপুর সিটি স্ক্যান ও ডায়াগোনোস্টিক সেন্টারে টাকা দিয়েও পরীক্ষা করাতে পারেন নি। সে কারণে বাড়িতে ফিরে উপর ওয়ালার ভরসা করে আছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ওপর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসিও। আলমগীরের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর দাবি তাদের।

এদিকে গণমাধ্যমে এই সংবাদ প্রচারের পর রংপুরের ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন আমরাই পাশের প্রধান এডমিন আল আমিন সুমন আকাশসহ কর্মীরা মঙ্গলবার সকালে যুবক আলমগীরকে তার বাড়ি থেকে নিয়ে এসে ভর্তি করান হাসপাতালে। বর্তমানে তিনি সেখানকার গ্যাসট্রোলোজি বিভাগের ওয়ার্ড নম্বর-২ এর ১৩ নম্বর বেডে ডা. মারুফ হাসানের তত্বাবধায়নে তার চিকিৎসাধিন আছেন। আমরাই পাশের কর্মীরা হাসপাতালে তার দেখাশুনা করছেন। গাজিপুর থেকে ম্যান অব হেলপিং অর্গানাইজেশন পক্ষ থেকে তার প্রাথমিক চিকিৎসার টাকা দেয়া হয়েছে।

ফেসবুক ভিত্তির সংগঠন আমরাই পাশের প্রধান এডমিন আল আমিন সুমন আকাশ জানান, আমরা তাকে সুচিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেয়েছি। আামাদের কর্মীরা পালাক্রমে তার সেবা যত্ন করছে। তবে তার চিকিৎসার জন্য প্রচুর টাকা প্রয়োজন।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেজিষ্টার ডা. মারুফ হাসান জানান, ওনার দীর্ঘমেয়াদি পেটের সমস্যা। সর্বোচ্চ চিকিৎসা দয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। যেহেতু তার চিকিৎসা করানোর টাকা নেই। সেকারণে হাসপাতালের সমাজসেবা ফান্ড থেকেও আমরা অর্থের ব্যবস্থা করার জন্য চেস্টা করবো। তিনি দৈনিক নয়া দিগন্ত ও আমরাই পাশের উদ্যোগকে স্বাগত জানান।

আলমগীরকে সহযোগিতা করতে চাইলে তার মোবাইল ও বিকাশ নম্বরে ০১৭৬৭-০৪৩০৯৮ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে প্রতিবেদকের ০১৭১২১১১৪১৯ নম্বরে যোগাযোগ করেও তাকে সহযোগিতা করা যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement