২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

রংপুরে কলেজের চেয়ারম্যানের বাড়ি ঘেরাও করে অবস্থান নর্দানের শিক্ষার্থীদের

কলেজের সামনের অবরোধে হামলা শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা
বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত নগরীর কামাল কাছনায় কলেজটির চেয়ারম্যানের বাড়ির প্রধান ফটক ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। - ছবি : নয়া দিগন্ত

একাডেমিক ও বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশনবিহীন রংপুরের নর্দান প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের মাইগ্রেশনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে সোমবার কলেজটির ছাত্রশাখা বিভাগের সহকারী আহসান হাবিবসহ মালিকপক্ষের কয়েকজনের নামে মামলা হয়েছে মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায়। অন্যদিকে বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত নগরীর কামাল কাছনায় কলেজটির চেয়ারম্যানের বাড়ির প্রধান ফটক ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে।

এদিকে মালিকপক্ষের নানাধরণের হুমকি-ধামকির কারণে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন ৩২ নেপালীসহ আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী। সব ছাপিয়ে চিকিৎসা জীবন বাঁচাতে মাইগ্রেশনের দাবিতে আন্দোলন অব্যহত রাখার ঘোষণা তাদের।

সোমবার মাইগ্রেশনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা অনুমোদনবিহীন রংপুরের নর্দান প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের নেপালী শিক্ষার্থী অমিত কুমার সাহা ও রিকেশ গৈইত ভুগছেন হামলা আতঙ্কে। কারণ সোমবার দুপুরে মেডিক্যাল কলেজটির সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করার সময় তার সহপাঠী বাংলাদেশী শিহাব আহম্মেদকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে মালিকপক্ষের লোকজন। একারণে তারা উদ্বিগ্ন। ওই দুই নেপালীসহ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে মাইগ্রেশনের সবশেষ বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষের সাথে আলাপ করতে গেলে তিনি অন্য দরজা দিয়ে বের হয়ে আসেন। এ সময় রাস্তায় অবস্থান নিয়ে তার কাছে দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। আর সেখান থেকেই কলেজটির সহকারী আহসান হাবিব সবুজসহ চারজন লোক এসে ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে পেটায় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এতে আতঙ্কিত নেপালীসহ বাংলাদেশী শিক্ষাথীরা। গুরুতর আহত শিক্ষার্থী শিহাব আহমেদকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়।

শুধু হামলাই নয়, মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে হোস্টেলে গিয়ে আন্দোলন না করার হুমকি, নোটিশ দেয়াসহ ফ্রন্টলাইনারদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেছেন শিক্ষাথীরা।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুর মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি ড. শহিদুল্লাহ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাইগ্রেশন ও ইন্টার্ন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু পাস করা ১১ নেপালীসহ ২১ জনের ইন্টার্ন করার ঘোষণা এলেও মাইগ্রেশনের ঘোষণা না আসায় ২৩তম দিনের মতো আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা।

হামলার ঘটনাটি আইনশৃংখলা বাহিনীর সামনেই হওয়ার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ২টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ থাকায় রংপুর-গঙ্গাচড়া-লালমনিরহাট রুটে যাতায়াত বন্ধ থাকে প্রায় চার ঘণ্টা। পুলিশ তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।

এদিকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আলতাব হোসেন জানান, চার ঘণ্টা পর আমরা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে তুলে দিয়েছি। মালিক কর্তৃপক্ষকে আমরা বারবার ঘটনাস্থলে আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা আসেননি। এ ঘটনায় নর্দান মেডিক্যাল কলেজের অফিস সহকারী আহসান হাবিব সবুজসহ অজ্ঞাতদের নামে হামলা ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা হয়েছে। আমরা আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি।

এদিকে বেলা সোয়া ৩টায় রংপুর মহানগরীর কামালকাছনায় কলেজটির চেয়ারম্যান ড. তাসকিনুর রহমানের মালিকানাধীন এনজিও এসোড ট্রেনিং সেন্টারের মিলনায়তনে প্রেস ব্রিফিং করে কর্তৃপক্ষ। এসময় সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে দাবি করলেও তেমন কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি কলেজটির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘মাইগ্রেশন আমরা করে দিতো পারবো না। নবায়ন ও রেজিস্ট্রেশন প্রসেসিংয়ের মধ্যে আছে।’ তবে কতদিনের মধ্যে হবে- এধরণের কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগ আনেন।

তবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কলেজটির অধ্যক্ষ ডা: খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, এক মাসের মধ্যে শর্তপূরণ করতে না পারলে মাইগ্রেশন হয়ে যাবে শিক্ষার্থীদের। এসময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়ে ‘জানা নেই’ দাবি করে চেয়ারম্যান উল্টো শিক্ষার্থী কর্তৃক কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগ তুলেছেন।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনের খবর পেয়ে বিকেল চারটায় এসোড ট্রেনিং সেন্টারে আসেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় সংবাদ সম্মেলনে শেষ হয়ে গেলে চেয়ারম্যানের বাসার প্রধান ফটকে চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও কলেজটির পরিচালক শিরিন আখতারকে ঘেরাও করেন নেপালী শিক্ষার্থীরা। এসময় তার সাথে শিক্ষার্থীদের উচ্চবাচ্য হয়। শিক্ষার্থীরা তাকে হোস্টেল, হাসপাতালসহ অন্যান্য জিনিসনা থাকার প্রশ্ন করলে তিনি এসব একাডেমিক বিষয় বলে এড়িয়ে গেলে হৈচৈ শুরু হয়। এক পর্যায়ে তিনি বাসার ভেতরে চলে যান। পরে শিক্ষার্থীরা বাসার প্রধান ফটকরে সামনে বসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তারা চেয়ারম্যানের সাথে দেখার করার দাবি জানান। কিন্তু সেখানে উপস্থিত কলেজের অধ্যক্ষসহ অন্যান্যরা পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে যান। চেয়ারম্যান বাসার ভেতরে থাকলেও তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে কোন কথা বলেননি।

রাত সাড়ে ৭টায় সেখানে আসেন কোতয়ালী থানার ওসি আব্দুর রশিদ। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, হামলার ঘটনায় মামলা নেয়া হয়েছে। আর মাইগ্রেশন এবং মালিকপক্ষের গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে মাইগ্রেশনের দাবি নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টিও বলেন তিনি। এসময় তিনি নেপালী শিক্ষার্থীসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও কথা বলেন। পরে তাদেরকে বুঝিয়ে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের ওসির কথায় আশ্বস্ত হয়ে হোস্টেলে ফিরে গেলেও মঙ্গলবার আবারো কলেজ ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু হবে বলেও সেখানে ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।


আরো সংবাদ



premium cement
বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী

সকল