১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রক্তাক্ত অবস্থায় নদীতে ঝাঁপ দেয় নীলগাইটি...

আহত নীলগাই - ছবি : বিবিসি

ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্ত এলাকা থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় একটি নীলগাই উদ্ধার করে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা।

বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার হাবিলদার মোহাম্মদ আফলাতুন নিজামি বিবিসিকে জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে তারা স্থানীয়দের হাত থেকে নীলগাইটি উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে আসেন।

‘দ্রুত পশু চিকিৎসককে এনে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এবং ১০/১২টির মতো সেলাই লেগেছে। আজ বেলা ১২টার দিকে চিকিৎসকরা আবার আসেন এবং খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে গেছেন,’ বলছিলেন তিনি।

ঠাকুরগাঁওয়ের সাংবাদিক সামছুজ্জোহা জানান, ঘটনাটি ঘটেছে জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দুরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার নাগর নদী সংলগ্ন এলাকায়।

‘কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি কালো রঙয়ের পুরুষ নীলগাই। স্থানীয়রা অনেকেই মারধর করেছে এবং বিজিবি উদ্ধারের সময় এটির গলা থেকে রক্ত ঝরছিলো। খুবই গুরুতর আহত অবস্থায় বিজিবি উদ্ধার করতে পেরেছে,’ বলছিলেন তিনি।

স্থানীয় একজন জানান জমির ফসল নষ্ট করার ক্ষোভ থেকে অনেকে হামলা করেছে এবং এক পর্যায়ে রক্তাক্ত অবস্থায় প্রাণীটি নদীতে ঝাঁপ দেয়। পরে সেখান থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে।

মুজিবুর রহমান নামে স্থানীয় আরেকজন অধিবাসী বলেন, বিজিবির টহল পার্টি সেখানে যাওয়ার আগেই নীলগাইটি ধরে বেঁধে ফেলে অনেকে আক্রমণ করে বসে।

বুধবার সকালেই ঠাকুরগাঁও বন বিভাগের কর্মকর্তা শাহানশাহ আকন্দ বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে নীলগাইটির চিকিৎসা ও অন্য আনুষঙ্গিক পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

‘এটি খুব অসুস্থ। প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তারাও এসেছেন। চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পেলেই এ প্রাণীটিকে সাফারি পার্ক বা যথাযথ কোনো জায়গায় পাঠানো হবে,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

নীলগাই এলো কোথা থেকে

বন্যপ্রাণী ও জৈববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী হাসান খান বলছেন, নীলগাই বাংলাদেশ থেকে অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

‘এটি খুব বিরল প্রজাতির বিলুপ্ত একটি বন্যপ্রাণী। বাংলাদেশের বনে এই প্রাণী দেখা যায় না। তবে ভারতের বনে থাকতে পারে। ১৯৪০ সালের পরে নীলগাইয়ের অবস্থান বাংলাদেশে আর আমাদের রেকর্ডেড নেই,’ বলছিলেন তিনি।

তাহলে এ নীলগাইটি এলো কোথা থেকে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়তো সীমান্ত অতিক্রম করে এটি বাংলাদেশের সীমানায় এসেছে।

বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার হাবিলদার মোহাম্মদ আফলাতুন নিজামিও বলছেন যে স্থানীয়রা মনে করছেন এটি বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বা হয়তো খাদ্যের জন্য এসেছে।

কর্মকর্তারা বলছেন আরে এর আগেও ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে নওগাঁর মান্দা উপজেলার এলাকায় একটি পুরুষ নীলগাই ধরা পড়েছিলো।

সেটিকে তখন চিকিৎসা শেষে রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায় রাখা হয়েছিলো।

এর আগের বছরের সেপ্টেম্বরে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত এলাকায় নদীর কাছ থেকে আরেকটি নীলগাই আটক করেছিলো গ্রামবাসী। সেটিকেও পরে রামসাগরে এনে রাখা হয়েছিলো।

এই এক জোড়া নীলগাইকে পরে শেখ কামাল ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টারে রাখা হয়।

ওই সেন্টারের পরিচালক মোঃ জাহিদুল কবির বিবিসি বাংলাকে বলেন, এই এক জোড়া থেকে নতুন নীলগাইয়ের বংশ বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।

‘আমরা আশা করছি দ্রুতই সুখবরটি পাবো। তারা (নীলগাই জোড়া) আমাদের তত্ত্বাবধানে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে,’ বলছিলেন মিস্টার কবির।

এবারেও উদ্ধার করা নীলগাইটিকে এই সেন্টারেই পাঠানো হবে বলে ধারণা করছেন সেখানকার কর্মকর্তারা।

নীলগাই আসলে কেমন প্রাণী

বন্যপ্রাণী ও জৈববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী হাসান খান এটি আসলে গরু শ্রেণীর একটি প্রাণী তবে গরু নয়।

তবে অনেক গবেষক এটিকে বড় হরিণ শ্রেণীর প্রাণী হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন। জীববিজ্ঞানে এটিকে 'অ্যান্টিলোপ' ধরণের প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

চেহারায় ঘোড়ার সাথে কিছুটা সাদৃশ্য থাকা এ প্রাণীটির অস্তিত্ব ভারতের অনেক এলাকায় থাকলেও বাংলাদেশে তা বিলুপ্ত। এছাড়া পাকিস্তান ও নেপালেও এর দেখা মেলে।

কর্মকর্তারা বলছেন ,সাধারণত ঝোপ জঙ্গলে দলবেঁধেই ঘুরতে ভালোবাসে নীলগাই, যার সামনের পা পেছনের পা থেকে একটু লম্বা হয়।

বন কর্মকর্তারা বলছেন এক সময় উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নওগাঁ, জয়পুরহাট এলাকায় নীলগাইয়ের বিচরণের ইতিহাস পাওয়া গেলেও ১৯৪০ এর পর থেকে বাংলাদেশের ভূ এলাকায় প্রাণীটি খুব একটা দেখা যায়নি।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement