২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিঠাপুকুরে হুমকির মুখে মাটির উর্বর শক্তি

মিঠাপুকুরে হুমকির মুখে মাটির উর্বর শক্তি -

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় কৃষকদের অজ্ঞতার কারণে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক ভেজাল সার ব্যবহার ও কৃষিশিক্ষা থেকে কৃষকরা বঞ্চিত হওয়ায় ওই অঞ্চলের মাটির উর্বর শক্তি নষ্ট হতে চলেছে। এ কারণে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষকদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্খা দেখা দিয়েছে।

৪৫ শতাংশ অজৈব অর্থাৎ খনিজ পদার্থ, ২৫ শতাংশ বায়ু, পাঁচ শতাংশ জৈব পদার্থ, ২৫ শতাংশ পানি-এ চারটি উপাদানের সমন্বয়ে মাটি গঠিত হয়েছে। এ উপাদানের মধ্যে জৈব পদার্থ মূলত মাটির প্রাণ, যা জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু কৃষকরা প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মাটিতে জৈব সার ব্যবহার না করে শুধু অজৈব সার ব্যবহারের ফলে মাটির ধারণ ক্ষমতা ও পুষ্টি উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া জমিতে হিউমাসের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ফলে জমির উপকারী জীবাণুর সংখ্যা কমে গিয়ে মাটির গুণগত মান হ্রাস পেয়েছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মিঠাপুকুরের বিভিন্ন অঞ্চেলের জৈব উপাদান রয়েছে মাত্র এক শতাংশ। কৃষি ও চাষাবাদের ক্ষেত্রে মিঠাপুকুরের মাটি ভয়ঙ্কর অবস্থায় রয়েছে। এ অঞ্চলের মাটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে এতে নাইট্রোজেনের মাত্রা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। অতি নিম্ন থেকে নিম্ন ফসফরাস, সালফার ও দস্তার মাত্রা নিম্ন থেকে মধ্যম ও পটাশিয়ামের মাত্রাও মধ্যম পরিমাণ। যে হারে ফসল ফলানো হচ্ছে, সে হারে জৈব পদার্থ যোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের আশায় জমিতে বেশি মাত্রায় নাইট্রোজেন সার (ইউরিয়া) ব্যবহার করে থাকেন। ফলে অনুজীবগুলো জৈব পদার্থের মধ্যস্থিত নাইট্রোজেন খেয়ে ফেলে এবং মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফসলের ক্ষতিকর বিভিন্ন আপদ দমনের জন্য সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা তেমন ব্যবহার করা হয় না। শুধু পেস্টিসাইড ব্যবহার করা হয়। আর এসব পেস্টিসাইড ব্যবহারের ফলে মাটিতে বিষাক্ত পদার্থ যোগ হয়। জমিতে জৈব পদার্থ বাড়ানোর জন্য মিঠাপুকুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন।

কৃষি অফিস জানিয়েছে, তিন বছর পর পর মাটিতে সবুজ সার উৎপাদনকারী শস্য শনপার্ট, খেসারি মাটির সাথে মেশাতে হবে। জমির ফসলের অবশিষ্টাংশ মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে অথবা পঁচিয়ে সার তৈরি করে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। গবাদিপশুর মলমূত্র, রান্নাঘরের বর্জ্য, বিভিন্ন আবর্জনা পচিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি করে তা মাটিতে যোগ করতে হবে। রান্না করা অবশিষ্ট ছাই সংরক্ষণ করে জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, কৃষি জমিকে বাঁচাতে হলে জৈব সারের কোনো বিকল্প নেই। মাটির স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না হলে অদূর ভবিষ্যতে কৃষি জমি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।


আরো সংবাদ



premium cement