১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দিনাজপুরে নিয়ন্ত্রণহীন সবজি বাজার, দাম বাড়ছে দফায় দফায়

দিনাজপুরে নিয়ন্ত্রণহীন সবজি বাজার, দাম বাড়ছে দফায় দফায় - নয়া দিগন্ত

দিনাজপুরে নিত্যপ্রয়োজনীয় শাক-সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের তদারকি ও নিয়মিতবাজার মনিটরিং না হওয়াতে কয়েক দফায় বেড়েছে কাঁচা শাক-সবজির দাম। এক মাসের ব্যবধানে আলু, বেগুন ও কাঁচা মরিচের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। একমাস আগেও যে আলুর দাম ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি, এখন তা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫-৫৫ টাকায়। আলুর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেগুনের দামও। এক মাসের ব্যবধানে বেগুণের দাম হয়েছে দ্বিগুণ। এখন প্রতি কেজি বেগুনের দাম ঠেকেছে ৮০ টাকায়। এছাড়াও বাড়ছে সব ধরনের সবজির দামও।

রোববার দুপুরে দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজার, রামনগর বাজার, সুইহারী বাজার, চকবাজার, উপশহর বাজার, কানাহাফেজের মোড় বাজারসহ বেশ কয়েকটি কাঁচা বাজার ঘুরে এমনটা জানা গেছে। আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশনা শুধু কাগজে কলমে। বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই।

এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েক দফা বন্যা আর অতি বৃষ্টিও প্রভাব ফেলেছে সবজির দামে। পাশাপাশি কাঁচা শাক-সবজির সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা চড়া মনে হচ্ছে। দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজার। জেলার সবচে বড় এই পাইকারি ও খুচরা বাজারে শাক-সবজি সরবরাহ কমেছে। যে কোনো সময়ের তুলনায় এখানে সবজির সরবরাহ কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। দিনাজপুরে নিত্যপ্রয়োজনীয় শাক-সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে। ১০ দিন আগেও দিনাজপুরের সবজি বাজারে বেগুন ছিল ৩০-৪০ টাকা। এখন যা ৭০-৮০ টাকা। যে আলু ছিল ২০-২৫ টাকা, এখন দাম বেড়ে তা ঠেকেছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। আলু বেগুণের সাথে দাম বেড়েছে তরিতরকারির অন্যতম উপাদেয় কাঁচামরিচেরও। আগে কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১৫০-১৬০ টাকা। এখন তা বেড়ে ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। কিন্তু এখন সব সবজিরই চড়া দাম। ক্রেতাদের অভিযোগ, সবজির বাজারের পরিস্থিতি এখন লাগামহীন। লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে।

এনিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। নিত্য খাদ্যপণ্যের এমন দাম বাড়াতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে বেড়েছে নিন্ম আয়ের মানুষেরা। কোনো মনিটরিং না থাকায় এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি সবজিতে দাম বেড়েছে দিগুণেরও বেশি। দাম ব্যাপার কারণ হিসেবে সরবরাহ সংকটকে দুষছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, আগের চেয়ে বাজারে কাঁচাশাক-সবজির সরবরাহ কিছুটা কম হচ্ছে। যার প্রভাবে ব্যবসায়ীদেরও বেশি দামে কিনে, বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সঙ্গে কয়েক দফার অতি বৃষ্টি ও বন্যা পরিস্থিতিতেও দুষছেন ব্যবসায়ী মহল। প্রতি বছর আগাম শীতকালীন শাক-সবজিতে মাঠ ভরা থাকলেও এবার দ্রুত পচনশীল-সবজিসহ বেশিরভাগ ফসল বন্যায় নষ্ট হওয়ার কারণে আলুর ওপর চাপ পড়েছে এজন্য দামটা একটু বেশি বলছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে শহরের বাহাদুর বাজারের সবজি বিক্রেতা মাসুদ ও বাবুল বলেন, সব সবজিরই দাম বেড়েছে। গ্রাম থেকে এখন কাঁচা বাজারে সবজি সরবরাহ কমেছে। যার কারণে দুই-তিনসপ্তাহের ব্যবধানে সব সবজিতেই কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা করে বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকায় আমাদেরকেও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। বাজারে কাঁচাশাক-সবজির সরবরাহ কম। এই বাজারে একমাস আগে আলু ছিল ২৫-৩০ টাকা আর বেগুন কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আর এখন বিক্রি হচ্ছে আলু ৫০ থেকে ৫২ এবং বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। এছাড়াও কাকরোল, ঢ্যাঁড়স, বরবটি, লালশাক, শসা, ধনেপাতা, করলা ও লাউয়ের দামও বাড়তি। শাক-সবজির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিন্ম ও মধ্য আয়ের ক্রেতারা।তারা জানান, মাছ, মাংসের যেমন দাম সবজির দামও একই। আমাদের নাগালের বাইরে সব ধরণের সবজির দাম। লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়লেও প্রশাসনের কোনো তদারকি নেই। বাজার মনিটরিং কর্তৃপক্ষ নিরব। কোথাও কোথাও কাঁচা সাব-সবজিও এখন একদরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার পদক্ষেপ নিলেও দিনাজপুরে রোববার দুপুরে বেশির ভাগ বাজারে ৪০ টাকার ঊর্ধ্বে আলু বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাহাদুর বাজারে কথা হয় সুজনের সাথে। তিনি বলেন, ভাতের পর আলুর উপর নির্ভর করে নিম্ন আয়ের মানুষ। সেই আলুর দাম এখন ৫০ টাকার ওপরে। অথচ গ্রামেগঞ্জে কৃষকের কাছে আলুনেই। আলু এখন মজুতদার এবং কোল্ডস্টোরের মালিকদের হাতে। তারাই কারসাজি করে আলুর বাজারগরম করে দিয়েছি।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাজার সহনীয় পর্যায়ে আসবে। যদি যোগানের সমন্বয় না থাকেতাহলেই কিন্তু আমাদের ব্যত্যয় ঘটে। এই অবস্থা বেশিদিন থাকবে না। শীতের সবজি বাজারেআসা শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই এ অবস্থার উন্নতি হবে। তারা আরও জানায়, আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতি কেজি আলুর দাম হিমাগার পর্যায়ে ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই দামে নিত্য প্রয়োজনীয় সবজির বিক্রি নিশ্চিত করতে সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। কিন্তু সে নির্দেশনা কেতাবেই রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছে না।


আরো সংবাদ



premium cement