২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৈয়দপুরে ইউপি মেম্বার পাচ্ছেন বয়স্কভাতা

সৈয়দপুরে ইউপি মেম্বার পাচ্ছেন বয়স্কভাতা - ছবি : নয়া দিগন্ত

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় দায়িত্ব পালনরত ইউপি মেম্বার পাচ্ছেন বয়স্কভাতা। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসকে ম্যানেজ করে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বয়স্কভাতা কার্ড করেছেন ওই ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার। যার প্রথম কিস্তির টাকা গত ঈদের সময় উত্তোলন করেছেন তিনি।

একজন সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তি হয়েও আবারো সরকারি ভাতা আত্মসাৎ করতে এমনটা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ইউনিয়নসহ পুরো উপজেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং সমাজ সেবা অফিসের নানা অনিয়ম নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

জানা যায়, কামারপুকুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার মো: আতাউর রহমান নিজবাড়ী গ্রামের মৃত জবান উদ্দিনের ছেলে। তিনি চলতি বছরের প্রথম দিকে ইউনিয়ন পর্যায়ে বয়স্কভাতা প্রদানের জন্য উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক চলমান জরিপের সময় তার নাম অন্তর্ভূক্ত করেন তালিকায়। যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ কেউই সে সময় জানতে পারেননি। সে অনুযায়ী পরবর্তিতে তার নামে কার্ড ইস্যু করে সমাজসেবা অফিস। এক্ষেত্রে বয়স্কভাতা প্রাপ্তির নিয়মাবলী অনুযায়ী তিনি চলমান মেম্বার হিসেবে সরকারি ভাতা তথা সম্মানী প্রাপ্তির সাথে সাথে অন্য কোনো সরকারি সুবিধা ভোগী হতে পারবেন না এ বিষয়টিকে তোয়াক্কা করেনি সংশ্লিষ্ট দফতর। বরং এ বিষয়টিকে পুঁজি করে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের কামারপুকুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিয়ন সমাজকর্মী মো: শাহজাহান আলী ওই মেম্বারকে কার্ড করে দেয়ার বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। শাহজাহান আলীর সহযোগিতায় বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়।

পরে ভাতার টাকা উত্তোলনের সময় ইউনিয়নের অন্য বয়স্কভাতাভোগীরা বিষয়টি আঁচ করতে পারে এবং সেসময় তা জনসম্মুখে আসে। একপর্যায়ে তা প্রকাশ হয়ে যায়। সর্বত্র আলোচনা শুরু হয় যে মেম্বার ভাতা প্রাপ্তির যোগ্যতা যাচাই বাছাই করবেন তিনিই কি না সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নিজের নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করেছেন। তাও আবার টাকার বিনিময়ে সমাজ সেবা অফিসকে ম্যানেজ করে। যা একজন দরিদ্র বয়স্ক মানুষ যদি এই কার্ডটা পেতো তাহলে তিনি উপকৃত হতেন। যা বিভিন্ন ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু তিনি তা না করে উল্টো নিজেই জনগণের হক মেরে খেয়েছেন।

সৈয়দপুর উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে এভাবে বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেয়ার নামে চলছে টাকার খেলা। টাকা দিতে পারলে যোগ্য না হয়েও পাচ্ছেন ভাতা কার্ড। আর টাকা দিতে না পারলে উপযুক্ত হয়েও বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত দরিদ্র ও বয়স্করা। যার সুবিধা নিচ্ছেন দালাল শ্রেণির কতিপয় বহিরাগতসহ ওই অফিসের কয়েকজন কর্মচারী। যারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তৈরী তালিকা অনুযায়ী আগামীতে ভাতা প্রাপ্তির জন্য নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন এমন ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে অর্থের বিনিময়ে নয়ছয় করে চলেছেন। যা তদন্ত করলে আরো অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে কথা হয় ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার মো: আতাউর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, বয়সের দিক থেকে ভাতা প্রাপ্তির যোগ্য হওয়ায় আমার ভাতা কার্ড হয়েছে। যার বই নং ১৪১৪, হিসাব নং ১১৬৮। যাতে জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ১২ জুন ১৯৫২ খ্রীষ্টাব্দ। বর্তমান মেম্বার থাকা অবস্থায় আপনি কি অন্য কোনো সরকারি সুবিধা বা ভাতা নিতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেম্বারী আর কয় দিন আছে। আগামী নির্বাচনে আমি মেম্বার হতে পারবো এমন গ্যারান্টিও নাই। তাই কার্ডটা করে নিয়েছি।

কামারপুকুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো: রেজাউল করিম লোকমান বলেন, মেম্বারের বয়স্কভাতা কার্ড করার বিষয়টি আমি জানতাম না। তিনি কিভাবে এমন কাজ করলেন তা আমার চিন্তায় আসছে না। তিনি বলেন, আমার জানা মতে একজন রানিং মেম্বার কোনোভাবেই সরকারি অন্যকোনো সুবিধা নিতে পারেন না। তবে এ বিষয়টি দেখার দায়িত্ব উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের। কেননা এখন সরাসরি ওই অফিস কর্তৃক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা তৈরী করা হয় জরিপের মাধ্যমে। এটা সার্বিকভাবে তদারকি করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা। কিন্তু সম্ভবত তারা বিষয়টি যাচাই বাছাই করেননি বা করে থাকলেও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তারা এ কার্ড করে দিয়েছেন। কেননা একজন ওয়ার্ড মেম্বারকে তারা চিনেন না এমনটা কোনোভাবেই হতে পারে না।

উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কামারপুকুর ইউনিয়ন সমাজকর্মী মো: শাহজাহান আলীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ইউপি মেম্বার মো: আতাউর রহমানকে আমি চিনি। তিনি মূলত বয়সের ভিত্তিতে ভাতাভোগী হয়েছেন। বর্তমান মেম্বার কি অন্যকোনো সরকারি ভাতা পেতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না পারেন না। কিন্তু কিভাবে যে আতাউর মেম্বারের নামে কার্ডটি হয়েছে তা আমি বুঝতে পারছি না। কেন না ওইসময় আমরা খুবই ব্যস্ত ছিলাম। তাই হয়তো দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। টাকার বিনিময়ে কার্ড করে দিয়েছেন এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।

উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোছা: হাওয়া খাতুন বলেন, এ ধরণের ব্যক্তির নামে কার্ড হতে পারে না। এটা দেখার বিষয় আমার অফিসের স্টাফদের। হয়তো ভুলবশত এমনটা হয়েছে। তবে যেহেতু আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। এখন আমরা কার্ডটি বাতিল করবো।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নাসিম আহমেদ বলেন, এমন ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই তালিকা থেকে ওই মেম্বারের নাম বাতিল করা হবে। কিভাবে তালিকায় তার নাম উঠলো তা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ফ্যাসিবাদের শোষণ থেকে জনগণকে মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : মিয়া গোলাম পরওয়ার সিংড়ায় প্রতিমন্ত্রীর শ্যালককে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের নির্দেশ আ’লীগের চুয়াডাঙ্গায় হিট‌স্ট্রো‌কে যুবকের মৃত্যুর ৭ ঘণ্টা পর নারীর মৃত্যু ঢাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়াল, যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৪২.৬ শ্যালকদের কোপে দুলাভাই খুন : গ্রেফতার ৩ তীব্র গরমে কী খাবেন আর কী খাবেন না এবার তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বললেন এমপি জয় পঞ্চপল্লীর ঘটনায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে যা দরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার নির্দেশ সরকার ভিন্ন মত ও পথের মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে : মির্জা ফখরুল ধুনটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বৃদ্ধের মৃত্যু

সকল