১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রংপুরে প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় জিএম কাদের

‘এরশাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই জাতীয় পার্টির রাজনীতি’

এরশাদের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে মোনাজাত করছেন জিএম কাদেরসহ দলের নেতা-কর্মীরা - ছবি : নয়া দিগন্ত

পরলোকগত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যেসব স্বপ্ন দেখেছিলেন ও কর্মসূচি দিয়েছিলেন, সেসব বাস্তবায়ন করাই জাতীয় পার্টির রাজনীতি বলে মন্তব্য করেছেন দলটির চেয়ারম্যান দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বলেছেন, একসময় বড়বড় যেসব চিকিৎসক এরশাদের স্বাস্থ্যনীতির বিরোধিতা করেছিলেন, তারাও আজ উপলব্ধি করছেন, বলছেন তার স্বাস্থ্যনীতি বাস্তবায়ন করা হলে এই খাতে এত দুর্নীতি ও অনিয়ম হতো না।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রংপুরের পল্লীনিবাসে তার সমাধির পাশে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন তিনি।

জিএম কাদের বলেন, রংপুরে এরশাদকে কবর দেয়া হয়েছে রংপুরবাসীর ইচ্ছায়। কারণ তারা চেয়েছিলেন রংপুরের সন্তানকে রংপুরে কবর দিতে। তাদের চাওয়াতেই হয়েছে কবর। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমি আমার ভাইয়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।

তিনি বলেন, তিনি এমন একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন, যিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বিভিন্ন ধরনের পদবী, উপাধি লাভ করেছিলেন। যা বাংলাদেশের খুব কম নেতার ভাগ্যে জুটেছে।

এরশাদ পরবর্তী জাতীয় পার্টি নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, এরশাদ ছিলেন অনেক বড় মানের নেতা। তার স্বপ্নে লালিত একটি দল। যে দলের মাধ্যমে তিনি কর্মসূচি দিয়েছেন। যার মাধ্যমে তিনি তার অনেক স্বপনকে বাস্তবায়ন করেছেন। সেই নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন মৃত্যুবরণ করলেন, তখন সারাদেশব্যাপি মানুষ মনে করলো এই বিশাল ব্যক্তিত্ব, বিশাল নেতৃত্ব, যখন জাতীয় পার্টিতে থাকবে না, তখন জাতীয় পাটিতে যে শুন্যতা সৃস্টি হবে, সেই শুন্যতাতে কি জাতীয় পার্টি হারিয়ে যাবে। জাতীয় পার্টিকে শুণ্যে বিলীন হয়ে যাবে? এটি অনেকের মনে শঙ্কা ছিল। জাতীয় পার্টিকে টুকরা করার, জাতীয় পার্টিকে বিভক্ত করার, বিভিন্ন ভাবে খণ্ডবিখণ্ড করার মাধ্যমে জাতীয় পার্টিকে ধংস করে দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্রও কম হয়নি। এটা আপনারা সবাই জেনেছেন। কিন্তু আল্লাহর রহমতে রংপুরবাসীর ভালোবাসা, দেশবাসীর ভালোবাসা এবং এরশাদ সাহেবের প্রতি, তার কর্মকাণ্ডের প্রতি যে আস্থা রেখেছিলেন, উনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে কর্মসূচি দিয়েছিলেন, তার প্রতি মানুষের সে বিশ্বাসই জাতীয় পার্টিকে অটুট রেখেছে।

এরশাদের স্বপ্ন পূরণে কাজ করার দাবি করে জিএম কাদের বলেন, এখন আল্লাহর রহমতে এক বছর পর এসে আমরা বলতে পারি, জাতীয় পার্টি এখন অনেক বেশি সুসংহত, সুশঙখল এবং অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। এবং রাতদিন আমরা এরশাদ সাহের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নের ভিত্তিতে তিনি যে কর্মসূচি দিয়েছিলেন এবং যে কারণে তিনি এই জাতীয় পার্টিকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তার কর্মসূচি নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা প্রতিদিন ওনার অসমাপ্ত কাজ অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ কাজে রংপুরবাসী সবচেয়ে বড় উৎসাহের, উদ্দীপনার। সবচেয়ে বন্ধু ও সুহৃদ হিসেবে আমাদের পাশে সব সময় ছিলেন, থাকবেন আশাকরি।

এরশাদের স্বাস্থ্য নীতি বাস্তবায়ন হলে এই খাতে দুর্নীতি হতো না উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, এরশাদ সাহের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে কর্মসূচি দিয়েছিলেন সেগুলো বাস্তবায়ন করাই হলো আমাদের রাজনীতি। তিনি স্বাস্থ্যখাত নিয়ে যে নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন, সেগুলো পরবর্তীতে ব্যক্তি স্বার্থ ও গোষ্ঠিস্বার্থের কারণে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। ওনার স্বাস্থ্যনীতি ছিলেন স্বাস্থ্য সেবাকে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া। সেজন্য তিনি পদক্ষেপও নিয়েছিলেন। কিন্তু অনেক সিনিয়র ডাক্তার তখন তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু এখন তারাও স্বীকার করছেন ওনার স্বাস্থ্যনীতিটি ভালো ছিল। সেগুলো যদি তখন থেকে পালন করতাম তাহলে এখন স্বাস্থ্য সেক্টরে অনেক বেশি ভালো অবস্থায় যেতে পারতাম। ওনার স্বাস্থ্যনীতি বাস্তবায়নই আমাদের রাজনীতি।

জাতীয় পার্টির দাবির মুখে বর্তমান স্বাস্থ্য খাতের অনিয়মে তদন্ত শুরু হয়েছে দাবি করে দলটির প্রধান বলেন, স্বাস্থ্যখাত নিয়ে যেসব দুর্নীতি অনিয়ম। সেসব বিষয় নিয়ে সংসদে আমি এবং আমার পার্টির সংসদ সদস্যরা জোড়ালোভাবে বক্তব্য রেখেছেন। এই খাতের অনিয়ম প্রতিরোধে সরকার যেসব কর্মকাণ্ড করছে তার অনেককিছুই আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে করছেন। অনিয়মে বিভিন্ন ধরনের তদন্ত হচ্ছে। আমরা আরো দাবি করবো, এই দুর্নীতির সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। এবং ভবিষ্যতে কেউ যেন এভাবে অনিয়ম করে কাজ না করে সেজন্য সরকার যেন কঠোর থাকেন।

এর আগে জিএম কাদের বেলা সাড়ে ১১টায় রংপুরে এসে এরশাদের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং মোনাজাত করেন।

রংপুর সিটি মেয়র ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য রাখেন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, অতিরিক্ত মহাসচি ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির, জেলা সাধারণ সম্পাদক হাজি আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ। জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাফিউল ইসলাম শাফীর সঞ্চালনায় এসময় স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও বক্তব্য রাখেন।

এর আগে সকাল থেকেই পুরো নগরীতে মাইকে কোরআন তেলাওয়াত হতে থাকে। সকাল ১০টায় রংপুর মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টি এবং সহযোগি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এরশাদের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া মোনাজাত করেন। দিনটি উপলক্ষে এরশাদের কর্ম ও আদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয় দলটির নেতাদের। বিশেষ করে এরশাদের স্বপ্নের প্রদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে চান তারা।

উল্লেখ্য, গত বছর ১৪ জুলাই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৬ জুলাই নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তাকে সমাহিত করা হয় ওছিয়কৃত স্থান রংপুর মহানগরীর দর্শনার পল্লী নিবাসের লিচু তলায়।


আরো সংবাদ



premium cement