২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৈয়দপুরে বিয়ের পর ঘরসংসার করেও স্ত্রীর স্বীকৃতি পাচ্ছেন না কলেজছাত্রী কেয়া

নোটারি পাবলিকে রয়েছে কেয়ার বিয়ের প্রমাণ - ছবি : নয়া দিগন্ত

অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে প্রতিবেশী প্রাইভেট টিউটরের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে এভিডেভিট, কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে এবং দীর্ঘ প্রায় এক বছর সংসার করার পরও স্ত্রীর স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত কেয়া।

প্রেমিক ও স্বামী যৌতুকের দাবিতে বাবার বাড়িতে রেখে এসে এখন প্রেম বা বিয়ে সব অস্বীকার করছে। এতে অসহায় কেয়া চরম বিপদে পড়ে জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্থানে ধর্ণা দিচ্ছেন স্ত্রীর স্বীকৃতি আদায়ে।

ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের কয়া বাঁশবাড়ী জামে রিজভিয়া মাদরাসা সংলগ্ন এলাকায়।

সরেজমিনে গেলে ওই এলাকার মো: ফারুক ও মোসা: আঁখি বেগমের কলেজপড়ুয়া মেয়ে মোসা: রাহাত আঞ্জুম কেয়া (২০) জানান, প্রাইভেট পড়ার সুবাদে বিয়ে করার প্রলোভনে প্রতিবেশী ব্যবসায়ী মো: আখতার হোসেনের ছেলে মো: ওয়াসিম আকরামের (২৭) সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর দীর্ঘদিন চুটিয়ে প্রেম। কিন্তু হঠাৎ করে জানতে পারেন ওয়াসিম অন্যত্র বিয়ে করছে। এমতাবস্থায় তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে ওয়াসিম পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করবে না বলে জানায় এবং বাবা-মাকে ম্যানেজ করে কিছু দিনের মধ্যেই বিয়ে করবে বলে আস্বস্ত করে।

কিন্তু পরিবারের লোকজন সম্মত না হওয়ায় এক পর্যায়ে বিগত ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ওয়াসিম ও কেয়া নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে গিয়ে এভিডেভিট করে এবং স্থানীয় কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করে। পরে ওয়াসিমের পরিবার বিষয়টি জানতে পেরে তাদের বিয়ে মেনে নিয়ে বাড়িতে তোলে।

শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার পর থেকেই কেয়াকে বিভিন্নভাবে যৌতুকের জন্য মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। এভাবে দীর্ঘ প্রায় এক বছর কেয়া নির্যাতন সহ্য করেই সেখানে ঘর-সংসারও করে। কিন্তু হঠাৎ করে ওয়াসিমের পরিবারের লোকজন কেয়াকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় এবং ওয়াসিম ও কেয়ার বিয়ে হয়নি বলে প্রচার করতে থাকে। কেয়া বাবার বাড়িতে যাওয়ার পর থেকে ওয়াসিম তার সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়। এখন কোনোভাবেই এ বিয়ে মেনে নেয়া হবে না বলে ওয়াসিমের পরিবার থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছে কেয়া ও তার পরিবার।

এ ব্যাপারে কেয়ার মা আঁখি বেগম জানান, ‘আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। কোনো রকমে সংসার চালাই। তার উপর মেয়েকে নিয়ে এমন বিপদে পড়েছি যে কোনো সুরাহা করতে পারছি না। ওয়াসিম আমার মেয়ের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেও এখন অস্বীকার করছে। এমনকি ওয়াসিম তার এক প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আত্মীয়কে দিয়ে কাজী অফিস থেকে বিয়ের কাবিননামা গায়েব করে দিয়েছে। কিন্তু ঘটনাক্রমে এভিডেভিটের কাগজটি থাকায় মুখে অস্বীকার করলেও প্রমাণ রয়ে গেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মেয়ের বিয়ের স্বীকৃতির জন্য ওয়াসিমের পরিবারের কাছে সঙ্গত দাবি জানানোয় তারা যৌতুক চায়। যৌতুক দিতে অস্বীকার করায় এবং বিয়ে করে কেন এমন প্রতারণা করা হচ্ছে জানতে চাইলে তারা উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে থানায় ডায়েরি করেছে।’

এদিকে, ওয়াসিম আকরামের সাথে কথা হলে কেয়ার সাথে সম্পর্ক ও বিয়ের কথা প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে এভিডেভিট দেখানো হলে বলেন, এটা আমার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। মূলত আমাকে ধোকা দিয়ে ওই স্ট্যাম্প পেপারে সই নেয়া হয়েছে। কাজী অফিসে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও বিয়ে হয়নি বলে জানান তিনি। বলেন, কেয়ার সাথে এমন কোনো শারীরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেনি বা এর কোনো প্রমাণ নেই।

এভাবে প্রেম, বিয়ে এবং সংসার করার পরও স্ত্রীকে অস্বীকার করার ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement