মেডিক্যাল টিমসহ রাবি কর্তৃপক্ষের ২৫ পদক্ষেপ

ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে দু’টি মেডিক্যাল টিম, ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স, ১২ স্থানে ওয়াশরুম, ১১টি ওয়াটারপ্রুফ টেন্ট, ১১টি হেল্পডেস্কসহ ২৫ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কর্তৃপক্ষ।

শনিবার (২৭ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানানো হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভিসি অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, প্রোভিসি অধ্যাপক সুলতানুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম।

কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে :

১। ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করে আহ্বানপত্র প্রচার করা হয়েছে।

২। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশ প্রশাসনসহ প্রক্টরিয়াল বডি/বিভিন্ন সংস্থা ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয়সহ তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

৩। প্রক্টর অফিস মেস মালিক সংগঠনের সাথে আলোচনা করেছে। সংগঠন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে।

৪। প্রক্টর কর্তৃক ক্যাম্পাসে ও সংলগ্ন এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু থাকবে।

৫। ছাত্র-উপদেষ্টা দফতর তাদের করণীয় নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।

৬। জনসংযোগ দফতর সাংবাদিকদের মাধ্যমে ভর্তি-পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা নিয়েছে।

৭। অ্যাকাডেমিক পর্যায়ে সভার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে পরীক্ষা পূর্ববর্তী সময় থেকে পরীক্ষাচলাকালীন নিরাপত্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ সভা সম্পন্ন করেছে।

৮। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের নেতৃত্বে রাজশাহীর সুধীজন, সাংস্কৃতিক-কর্মী, শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী, মেস মালিক, পরিবহন মালিক সমিতি ও অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক সমিতির সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মতবিনিময় করেছে।

৯। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তি-পরীক্ষা গ্রহণে অভিজ্ঞ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করে অধিকতর কার্যকর পদক্ষেপগ্রহণের জন্য সভা সম্পন্ন করেছে।

১০। অসাধুচক্রের সদস্যদের তাৎক্ষণিক শাস্তি বিধানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে।

১১। ভর্তি পরীক্ষার সময় রাবি চিকিৎসাকেন্দ্র পরিচালিত একটি মেডিক্যাল টিম কাজ করবে। সার্বক্ষণিকভাবে চারটি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। এছাড়াও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন পরিচালিত দুই সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম ও দুটি অ্যাম্বুলেন্স চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করবে।

১২। পরীক্ষার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ১১টি ওয়াটারপ্রুফ টেন্টসহ শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (টিএসসিসি) অভিভাবকদের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিটি টেন্টে অভিভাবকদের বসার জন্য ২০০টি করে চেয়ার থাকবে।

১৩। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণভাবে ব্যবহারের জন্য ১২টি স্থানে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা থাকছে। বিষয়টি প্রচারের জন্য ক্যাম্পাসের ১০টি স্থানে সহজে দৃশ্যমান ব্যানার ও নির্দেশিকা থাকবে।

১৪। এছাড়াও বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেস্তার সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ১১টি হেল্পডেস্কের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সহযোগিতা প্রদান করবে। এসব হেল্পডেস্কে পানির ব্যবস্থাও থাকবে।

১৫। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সব ধরনের প্রচারণামূলক লিফলেট বিতরণ নিষিদ্ধ থাকবে।

১৬। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা না ফেলে বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ডাস্টবিনে ফেলার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

১৭। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্রের কয়েকটি করে কপি সাথে আনতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

১৮। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ অন্য ক্লাব, সমিতি ও সংগঠনগুলো পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে।

১৯। ক্যাম্পাসের পরিষ্কার-পরিছন্নতা রক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিছন্নতাকর্মী ও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ১৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবে।

২০। পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন আবাসিক হলে সীমিত আকারে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও নারী অভিভাবকদের অবস্থানের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম ৯০ নম্বর বাসায় সীমিত ব্যবস্থা করা হয়েছে।

২১। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের হয়রানি ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড এবং দোকানগুলোতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও খাদ্যের অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

২২। পরীক্ষা-সংক্রান্ত যেকোনো রকমের গুজবের (সেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হলেও) বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ব্যবস্থাগ্রহণ করবে।

২৩। অ্যাকাডেমিক ভবনসমূহের গেট পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে খোলা হবে।

২৪। ভর্তি-পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনো প্রকার বুথ স্থাপন করা যাবে না।

২৫। পরীক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সরঞ্জামাদি নিজ দায়িত্বে রাখতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো সহায়তাকারী বলে প্রচারিত কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের খপ্পর পরিহার করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

ভর্তি পরীক্ষা সু-শৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে যানবাহন চলাচলের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে রাবি প্রশাসন। এসবের মধ্যে আছে সকাল ৮টার পর ক্যাম্পাসে ভারী যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। ব্যক্তিগত গাড়ি ও অন্য যানবাহন কাজলা ও বিনোদপুর গেট দিয়ে প্রবেশ করে মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবে। কৃষি ও চারুকলা অনুষদে যাওয়ার ক্ষেত্রে মন্নুজান হল, বেগম খালেদা জিয়া হল, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু অ্যাকাডেমিক ভবন, তুঁত বাগান-সংলগ্ন রাস্তাটি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা সকল রাস্তা ব্যবহার করতে পারবে।

চারুকলা ও কৃষি অনুষদে যাওয়ার জন্য শহর থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের অক্ট্রয়মোড় থেকে ওভারব্রিজ-সংলগ্ন রাস্তা এবং ভদ্রা গেট ও কাটাখালীর দিক থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের ফল গবেষণা ও বিশ্ববিদ্যালয় ফায়ার সার্ভিসের পাশের রাস্তা ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়েছে। সকাল ৮টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনমুখী সংযোগ সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, অটোরিকশাসহ কোনো প্রকার যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। তবে পরীক্ষা সংক্রান্ত ও চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত গাড়িসমূহ এ নির্দেশের আওতামুক্ত থাকবে।

২৯ থেকে ৩১ মে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের ব্যক্তিগত গাড়িসমূহ পার্কিংয়ের জন্য সাবাস বাংলাদেশ মাঠ ব্যবহার করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়া আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আবাসিক এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কাজলা গেট ব্যবহার করবেন এবং বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্যারিস রোড হয়ে মেইন গেট ও রোকেয়া হলের পেছনের রাস্তা (ফ্লাইওভার-সংলগ্ন) ব্যবহার করতে পারবেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ও অসদুপায় অবলম্বন একটি আলোচিত বিষয়। এ বিষয়ে রাবি কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, কখনো কখনো অসাধুচক্র ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী কিংবা তাদের অভিভাবকের কাছ থেকে ভর্তির সুযোগ করে দেয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ নিয়ে থাকে। এ জন্য তারা কখনো কখনো শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট ও অন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমাও রাখে এবং রেজাল্ট শিটে নাম দেখেই অর্থের দাবি করে। প্রকৃতপক্ষে ওই সকল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নিজ যোগ্যতায় ভর্তির সুযোগ পেয়েও প্রতারণার শিকার হয়। সংশ্লিষ্ট সকলকে এমন প্রতারণার খপ্পরে না পড়ার জন্য সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানানো হয়।