র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু : বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি বিশিষ্টজনদের

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহীর বিশিষ্টজনেরা।

শনিবার (১ এপ্রিল) দুপুরে রাজশাহীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানান তারা। ‘রাজশাহীর সচেতন নাগরিকবৃন্দ’ ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় সরেজমিন অনুসন্ধানের জন্য রাজশাহীর বিশিষ্ট নাগরিকদের একটি দল বুধবার (৩১ মার্চ) নওগাঁ সফর করেন। তারা সুলতানা জেসমিনকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নেয়ার ঘটনাস্থল নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকা পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেন।

এ সময় নিহতের পরিবারের সদস্য, নওগাঁর কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, সাংবাদিক এবং নওগাঁর বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত যুব নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব সিদ্দিকী আরো বলেন, সুলতানা জেসমিনের সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তা সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। একজন নাগরিক যদি অপরাধের সাথেও সম্পৃক্ত হন তার বিচার পাওয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। সেখানে কোনো ধরনের আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়াই একজন নাগরিককে সরকারি একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মৌখিক কথায় এবং তার উপস্থিতিতেই উঠিয়ে নিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল। এর পরিণতিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এটি নিঃসন্দেহে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।

তিনি আরো বলেন, জেসমিনের ঘটনায় আবারো প্রমাণিত হয়েছে এদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানবাধিকার রক্ষায় দুঃখজনকভাবে উদাসীন। রাষ্ট্রযন্ত্র মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েও তা রক্ষায় বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
নিহত জেসমিনের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে অনুসন্ধানকারী দলের মনে হয়েছে যে, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তারা ভীত সন্ত্রস্ত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

রাজশাহীর বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, জেসমিনের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার না করে সরাসরি তুলে নিয়ে যাওয়া অপহরণের শামিল। পরে সরকারি বাহিনীর হেফাজতে তার মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত রহস্যজনক। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমেই এর পেছনের মূল কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হবে। যুগ্মসচিব পদ মর‌্যাবদার একজন ব্যক্তির এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার যে বর্ণনা ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তার যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। কেননা নিহত জেসমিনও প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী ছিলেন। সুতরাং জেসমিন অপরাধ করে থাকলে খুব সহজেই বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেত। তা না করে র‌্যাববকে নিয়ম বহির্ভুতভাবে ব্যবহার করে একজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা যে ভূমিকা নিয়েছেন বলে প্রকাশিত হয়েছে তা আইনের ব্যত্যয় এবং অত্যন্ত দুঃখজনক। এজন্য বিশিষ্টজনেরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনার যথাযথ কারণ অনুসন্ধান এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা প্রত্যাহার ও আইনটি (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) বাতিলের দাবি জানান। একইসাথে গ্রেফতার করা সাংবাদিককে মুক্তি এবং বন্ধ সকল গণমাধ্যম চালুর দাবি জানান বিশিষ্টজনেরা।

এর আগে নওগাঁ শহর থেকে আটক করার পর র‌্যাবব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক কর্মচারীর মৃত্যু হয়। ২২ মার্চ বেলা ১১টার দিকে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে তাকে আটক করা হয়। এরপর ২৪ মার্চ সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই নারীর মৃত্যু হয়। সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। পরিবারের অভিযোগ, র‌্যাবব হেফাজতে নির‌্যাবতনে তার মৃত্যু হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ ও রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলন রাজশাহীর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত বেগসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।