২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নৈতিক স্খলনের অভিযোগ ও রাজাকারপুত্র বলে দাবি

ডাবলু সরকারকে বহিষ্কারে সভাপতির কাছে রাজশাহী আ'লীগের আবেদন

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার - ছবি : নয়া দিগন্ত

রাজশাহীতে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ তুলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে দল থেকে বহিষ্কারে হাইকমান্ডে আবেদন করা হয়েছে।

২৭ মার্চ দেয়া ওই আবেদনে ডাবলু সরকারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাজাকার আব্দুস সাত্তার টিপুর প্রধান সহযোগী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাজাকার আব্দুর রশিদ সরকারের ছেলে বলে উল্লেখ করা হয়।

মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পাঁচ পাতার আবেদনটি দলের সভাপতি (সভানেত্রী) বরাবর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেয়। আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষর করে আবেদনটি গ্রহণ করেন। এছাড়া ডাবলু সরকার একজন ‘রাজাকারপুত্র’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই আবেদনে।

একইসাথে আবেদনের অনুলিপি দেয়া হয়েছে দলের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদ ও সাংগঠনিক সম্পদক এস এম কামালকে। আবেদনে ৪৮ নেতা স্বাক্ষর করেছেন।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষে আবেদনটিতে স্বাক্ষর করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির সদস্য এবং রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী মোজাফ্ফর হোসেন। আবেদনটি বিবেচনায় নেয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বিএমডির চেয়ারম্যান সাবেক এমপি বেগম আখতার জাহান।

আবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের একটি যৌন আবেদনময়ী নগ্ন ভিডিও গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে রাজশাহীসহ আশপাশের জেলা এবং স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে বিষয়টি মূখ্য আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ডাবলু সরকারের এহেন নৈতিক স্খলনজনিত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন তাকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সকল কর্মকাণ্ড থেকে বহিষ্কারের দাবি জানায়। ডাবলু সরকারের এহেন কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ধ্বংস করছে। যা আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ অন্য নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। ইতোমধ্যে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে ডাবলু সরকারকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সাধারণ সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করার জন্য অনুরোধ জানানো হয় ওই আবেদনটিতে।

এদিকে ডাবলু সরকারকে নিয়ে অশ্লীল ভিডিও ভাইরালের পর থেকে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি উঠে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে। সর্বশেষ গত ২৭ মার্চ ডাবলু সরকারকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নগরীর লক্ষীপুর মোড়ে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল।
অ্যাডভোকেট মোজাফ্ফর হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে নগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের কয়েক শ’ নেতাকর্মী অংশ নেন। এর আগে তিন দফায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে তাকে বহিষ্কারের দাবি জানায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
এর আগে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার তাকে নিয়ে ৩ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের একটি আপত্তিকর ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগ তুলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থানায় একটি মামলা করেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন তিনি। এতে তিনি দাবি করেন, ভিডিওটিকে সম্পাদনা করা হয়েছে। এর সাথে তার কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই।

ওই ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ডাবলু সরকার তখন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ভিডিওটি এডিট করা। শরীরের ওপরের অংশটি আমার। আমি অনেক সময় জিমে খালি গায়ে থাকি। সেখান থেকে ভিডিওটি নিয়ে অন্য এক ব্যক্তির শরীরের নিচের অংশের সাথে জোড়া দেয়া হয়েছে। তারপরও এই ভিডিওতে আমার কোনো কথা নেই। কোনো নারীর ছবি নেই। এ নিয়ে কারো কোনো অভিযোগও নেই। এ বিষয়ে আমি মামলা করেছি। পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, তাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে একটি অনলাইন পোর্টালের ফেসবুক পেজে কে বা কারা এডিট করা অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার কথা ওই অনলাইন পোর্টালে লেখা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যায়নি। কে বা কারা নিজ স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য মিথ্যা তথ্য প্রচার করে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।


আরো সংবাদ



premium cement