২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজশাহীতে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ছাড়াই বালুমহাল ইজারা বিজ্ঞপ্তি, উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থা

রাজশাহীতে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ছাড়াই বালুমহাল ইজারা বিজ্ঞপ্তি, উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থা। -

রাজশাহীর পবা উপজেলার চর শ্যামপুর ও দিয়ার খিদিরপুর বালুমহাল এবং চারঘাটের বালুমহাল ইজারা বিজ্ঞপ্তিতে স্থিতাবস্থা জারি করেছেন উচ্চ আদালত। একই সাথে নতুন করে জারি করা এই বিজ্ঞপ্তিকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজশাহী জেলা প্রশাসক, রাজস্ব ডেপুটি কালেক্টকর ও সদস্য সচিব জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় রাজশাহীকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

হাইকোর্টের বিচারক জাফর আহমেদ ও মো: বশির উল্লাহ সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ ১ ফেব্রুয়ারি এ রুল জারি করেছেন। রুলে কেন হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ছাড়াই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে চার সপ্তাহ সময় বেধে দেয়া হয়েছে।

সূত্র মতে জানা গেছে, রাজশাহীতে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ছাড়াই গত ১৭ জানুয়ারি বালুমহাল ইজারার নোটিশ জারি করেন জেলা প্রশাসক। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কায় উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নীতিমালা অনুযায়ী বালুমহাল ইজারা দেয়ার আগে নির্ধারিত এলাকার হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করতে হবে। এর মাধ্যমে বালুর মজুদ নির্ধারণ করে ইজারা মূল্য ঠিক করতে হবে। বালুমহাল নীতিমালা আইনেই এটা উল্লেখ আছে। কিন্তু জরিপ ছাড়াই রাজশাহীর চর শ্যামপুর ও দিয়ারখিদিরপুর বালুমহাল ইজারা দেয়া হয়েছে। এই বালুমহাল ইজারা নিয়ে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।

মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১১ অনুযায়ী বালুমহালের হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করাতে হবে। এছাড়া ডিজিটাল জরিপের মাধ্যমে বালুমহালের স্থান ও পরিধি নির্ধারণ করার পর কেবল ইজারা দেয়ার বিধান রেখে ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন- ২০২২’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এখন থেকে জেলা প্রশাসক ও ভূমি মন্ত্রণালয় প্রত্যেকটি বালুমহালের জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড অথবা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছে রিকুজিশন নেবে। তাদের জুরিসডিকশনে এবং তারা একটা ডিজিটাল সার্ভে করে প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে বা মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেবে কোথায় বালুমহাল আছে, কতটুকু তার পরিধি, কী পরিমাণে বালু উত্তোলন করা যাবে। তার ওপর ভিত্তি করে বালুমহালগুলো এক বছরের জন্য লিজ নেয়া যাবে, এটাই হলো আইনের মূল বিধান। তবে উর্বর কৃষিজমি কিংবা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত জায়গা থেকে বালু তোলা যাবে না।

উচ্চ আদালতের রুলে চার সপ্তাহ বিবাদীকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতের দেয়া রুলে বলা হয়েছে, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীকে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১১ অনুযায়ী রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা ও পবার চর শ্যামপুর ও দিয়ার খিদিরপুর দরপত্র আহ্বান করা বালুমহালের হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করাতে হবে। ওই সাথে বিধি না মেনে কেন এসব বালুমহালের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, তাও জানতে চাওয়া হয়। প্রতিবেদন দাখিলসহ আগামী চার সপ্তাহ বিবাদীকে এ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে উচ্চ আদালত।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানা, হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ না করার কারণে বালুমহালে বালুর মজুদ নিয়ে তাদের কোনো ধারণা ছিল না। তারপরও সর্বোচ্চ দরে বালুমহালটি ইজারা নেয়ায় ইজারামূল্যের অর্ধেক টাকাও তুলতে পারেনি তারা। তাই যৌথ অংশীদ্বারের ভিত্তিতে যারা বালুমহালে বিনিয়োগ করেছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন আবার বালুমহালটি নতুন বছরের জন্য ইজারার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। তবে এবারো হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ছাড়াই ইজারা দেয়া হলে ইজারাগ্রহণকারীরা পথে বসবেন।

এ ব্যাপারে জানতে নয়া দিগন্তের এ প্রতিবেদক মোবাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি। তবে অন্য গণমাধ্যমকে জেলা প্রশাসক জানান, মহামান্য আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চারঘাট ও পবা উপজেলার দু’টি বালুমহালের ইজারা প্রক্রিয়া স্থগিত করতে ইতোমধ্যেই নোটিশ দেয়া হয়েছে। এই দু’টিকে বাদ রেখেই বাকি বালুমহালগুলোর ইজারা প্রক্রিয়া চলবে।


আরো সংবাদ



premium cement