১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বগুড়ায় হিরো আলমের প্রচারে এক ঝাঁক ইউটিউবার

বগুড়ায় হিরো আলমের প্রচারে এক ঝাঁক ইউটিউবার। - ছবি : সংগৃহীত

আসন্ন বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী হিরো আলমের সাথে সমর্থকদের পরিবর্তে রয়েছেন একঝাঁক ইউটিউবার। এ কারণে হিরো আলম যেখানেই যান মানুষ তাকে দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামলেও ওই ব্যতিক্রম সামাজিযোগ যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম।

নির্বাচনী এলাকায় দেখা যাচ্ছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের সাথে সার্বক্ষণিক থাকা ১০ জন ইউটিউবারের মধ্যে সাতজনই ঢাকা থেকে এসেছেন। তাদেরকে রাখা হয়েছে হিরো আলমের বাড়ি বগুড়া সদরের এরুলিয়া এলাকার আবাসিক হোটেলে। বাকি তিনজনের একজন হিরো আলমের ইউটিউব চ্যানেল ‘হিরো আলম অফিসিয়াল’-এর কর্মী। অন্য দু‘জন স্থানীয় ইউটিউবার। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে গভীর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তারা হিরো আলমকে ফলো করেন। তবে দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, জাতীয় এবং স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিকরাও ভিডিও ক্যামেরা নয়তো মোবাইলফোন নিয়ে ছুটছেন হিরো আলমের পেছনে।

সরেজমিন দেখা গেছে, গত ৫ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকেই সাংবাদিক ও ইউটিউবাররা হিরো আলমকে অনুসরণ করছেন। সাংবাদিকদের তৎপরতা হিরো আলমের নির্বাচনী গণসংযোগের চিত্রধারণ এবং তার প্রতিক্রিয়া গ্রহণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছেন। তবে নিজেদের ধারণ করা ভিডিওতে বেশি ভিউ এবং লাইক পাওয়ার আশায় ইউটিউবাররা হিরো আলমকে নিয়ে মাতামাতি করছেন।

হিরো আলম গ্রামের কোন সড়ক দিয়ে হেঁটে যেতেন, তার বাড়ি দেখতে কেমন, ছোট বেলায় কী করতেন, তিনি কোন ঘরে ঘুমাতেন, এগুলোর বর্ণনা সম্বলিত ভিডিও ধারণ করে কে কার আগে আপলোড করবেন সেটা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এমনকি সড়কের পাশে একটি ছাউনি ঘেরা দোকানে বসে শুধু ভর্তা আর বেগুন ভাজি দিয়ে তার ভাত খাওয়ার দৃশ্যও প্রচার করতে দেখা গেছে। ওদিকে প্রায় সারাক্ষণ ইউটিউবার এবং সাংবাদিক পরিবেষ্টিত থাকতে দেখে নিজ এলাকার লোকজন বিশেষত খেটে খাওয়া মানুষের কাছে হিরো আলম সেলিব্রেটির মর্যাদা পেয়েছেন।

বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের এরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা হিরো আলম একসময় কেবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা (ডিশ সংযোগ প্রদান) করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ২০০৮ সালে ২৩ বছর বয়সে তিনি মডেলিংয়ে যুক্ত হন। এরপর নিজের অভিনয় ও গানের দৃশ্য রেকর্ড করে ক্যাবল নেটওয়ার্কে প্রচার করতে শুরু করেন। এতে নিজ এলাকায় তার জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। সেটাকে পুঁজি করে তিনি পরে এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পদে পর পর দু‘বার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে পরাজিত হন।

এরপর ২০১৬ সালে তিনি ‘হিরো আলম’ নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পেজ খুলে তাতে অভিনয় ও গানের দৃশ্য ছড়িয়ে দেন। পরে তিনি ইউটিউবেও সরব হন। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা হিরো আলম ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেন। তবে তার আবেদন প্রত্যাখ্যান হলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন এবং সিংহ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ওই নির্বাচনে তিনি ৬৩৮ ভোট পান। সরকার বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বগুড়া-৪ (কাহালু ও নন্দীগ্রাম) এবং বগুড়া-৬ (সদর) আসনের বিএনপি দলীয় দুই সংসদ সদস্য গত ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করলে হিরো আলম। ওই দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতার ঘোষণা করেন। সে অনুযায়ী গত ৫ জানুয়ারি তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে মনোনয়ন পত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট আসনের মোট ভোটারের এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক সমর্থনে স্বাক্ষরের ত্রুটি থাকায় ৮ জানুয়ারি রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। পরে হিরো আলম উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৭ জানুয়ারি প্রার্থীতা ফিরে পান এবং পরদিন রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে একতারা প্রতীক বরাদ্দ নেন।

নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে দেখা যায়, মাত্র চার বছরের ব্যবধানে হিরো আলম কোটিপতি হয়েছেন। ২০১৮ সালে তিনি ২১ শতাংশ কৃষি জমি থেকে বছরে ছয় হাজার টাকা এবং অভিনয় থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করতেন। তখন তার পুরানো একটি মোটরসাইকেল ছিল। আর বর্তমানে ৯ শতাংশ জায়গার ওপর তার বাড়ি নির্মাণ করেছেন এবং কিনেছেন প্রাইভেট কারও। এছাড়া ৫৫ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র ছাড়াও কৃষি জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ এবং স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার এক ভরি থেকে বেড়ে হয়েছে ১০ ভরি।

হিরো আলমের সাথে সার্বক্ষণিক থাকার কারণ জানতে চাইলে নিউজ এবিসি নামে একটি অনলাইন পোর্টালের মুজাহিদুর রহমান বলেন, ‘আমি বিনোদন নিয়ে কাজ করি। হিরো আলম বিনোদন জগতের মানুষ। বছরের অন্য সময় যখনই প্রয়োজন হয় তখন তার নিউজ কভার করতে হয়। তিনি এখন ভোট করছেন তাই বগুড়ায় এসে তার সাথে যুক্ত হয়েছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউটিউবার বলেন, ‘হিরো আলমের লাখ লাখ ভক্ত আছে। তার ভিডিও ইউটিউবে ছাড়লে অনেকে সেটা দেখেন। তাতে আমার ইউটিউব চ্যানেলের ভিউ এবং সাবস্ক্রাইবার দুটোই বাড়ে। তাই ব্যবসার জন্যই এসেছি।

নির্বাচনী প্রচারে সার্বক্ষণিক এক ঝাঁক ইউটিউবারের উপস্থিতিতে হিরো আলম বলেন, ‘তারা (ইউটিউবার) আমাকে ভালোবাসেন। তারা আমার সাথে থাকতে চেয়েছেন। আমি তো তাদের নিষেধ করতে পারি না।


আরো সংবাদ



premium cement
চকরিয়ায় আধিপত্য বিস্তারে কুপিয়ে হত্যা আবারো বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে আইএমএফ বুয়েটে নতুন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক নিয়োগ পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে নিহতদের পরিবারের সাথে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ সখীপুরে সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী সেই আ'লীগ নেতা কারাগারে ফরিদপুরে দুর্ঘটনায় মা-ছেলে নিহত, আহত বাবা-মেয়ে দিরাইয়ে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম গ্রহণের আহ্বান রাষ্ট্রপতির বগুড়ায় পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকভর্তি কলা ছিনতাই : গ্রেফতার ৪ ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থী নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ, চুক্তি বাতিল স্নান করতে গিয়ে দূর্গাসাগর দীঘিতে ডুবে একজনের মৃত্যু

সকল