২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজশাহীর মেয়রকে আপত্তিকর চিঠি, ব্যাখ্যা চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

রাজশাহীর মেয়রকে আপত্তিকর চিঠি, ব্যাখ্যা চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় -

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: হাবিবুর রহমানের নামে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের দফতরে একটি আপত্তিকর চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠির বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে ২২ সেপ্টেম্বর রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে নোটিস দেয়। এতে ১০ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের উদ্দেশে চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘আপনার সাথে আমাকে দেখা করার জন্য গেটে অপেক্ষা করতে হবে, আপনার কাছে সময় চাইতে হবে? বিষয়টি কল্পনা করা আমার জন্য দুরূহ। আপনি জানেন কী আমার জা-শাশুড়ি এমপি। আমার আওয়ামী পরিবারে জন্ম। ভবিষ্যতে আমিও এমপি বা মন্ত্রী হতে পারি। গাজীপুরের ও কাটাখালীর মেয়রের দিকে তাকান। বর্তমানে তাদের কী অবস্থা?’

রাসিক ও শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই ওই চিঠিটি মেয়রের দফতরে পৌঁছে। এরপর সিটি করপোরেশন থেকে চিঠিটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম গত ২৪ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি পাঠান। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলাবিষয়ক শাখার উপ-সচিব মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ ২২ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে এ বিষয়ে ১০ দিনের মধ্যে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের কাছে ব্যাখ্যা চান।

শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান এরই মধ্যে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। এর আগে চিঠির বিষয়টি জানতে পেরে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনকেও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যান।

শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের দফতর থেকে পাঠানো ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের অনুরূপ (জাল/স্ক্যান) স্বাক্ষরে একটি আপত্তিকর পত্র রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কোনো স্বারক নম্বর ব্যবহার করা হয়নি। চিঠিটি উপ-শহর পোস্ট অফিস থেকে পোস্ট করা হয়েছে। যা মেয়রের দফতর থেকে বোর্ড চেয়ারম্যান জেনেছেন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সব দাফতরিক চিঠি বোর্ডসংলগ্ন জিপিও-৬০০০ থেকে পোস্ট করা হয়। চিঠিতে যে ধরনের প্যাড ও ফরমেট ব্যবহার করা হয়েছে, তা রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কোনো দাফতরিক পত্রে ব্যবহার করা হয় না। মেয়রের কাছে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান সম্পর্কে বিভ্রান্তি তৈরির জন্য কে বা কারা এই স্মারকবিহীন পত্রটি উপ-শহর ডাকঘরে পোস্ট করেছে। বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড বিব্রত এবং তা তদন্তের দাবি রাখে। ওই চিঠির সাথে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

বিষয়টি জানতে এ প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে মোবাইলে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য জানা যায়নি।

তবে অন্য গণমাধ্যমকে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, এটি একটি উড়োচিঠি। বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য কেউ এই চিঠি দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, বিষয়টি অবগত হওয়ার পর মেয়রের সাথে কথা বলে তিনি বিষয়টি পরিস্কার করে নিয়েছেন, চিঠিও দিয়েছেন। তবে আপত্তিকর চিঠিটি তিনি লেখেননি। একজন সরকারি কর্মকর্তা কখনো মেয়রের উদ্দেশে এমন চিঠি দিতে পারেন না।

বিষয়টি জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন নয়া দিগন্তকে বলেন, আপত্তিকর চিঠির বিষয়টি দু’মাস আগের। চিঠিটি পাওয়ার পর তখন শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসানকে অবহিত করা হয়েছিল। তিনি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি বিষয়টি হালকাভাবে নেন। পরে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চিঠিটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।

মেয়র লিটন বলেন, বোর্ড চেয়ারম্যান আমার কাছে স্বীকার করেছেন, ওই চিঠিতে যে স্বাক্ষর রয়েছে সেটি তার।


আরো সংবাদ



premium cement