২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাণীনগরে ৪ পরিবারকে সাত মাস ধরে ‘একঘরে’ করার অভিযোগ

রাণীনগরে ৪ পরিবারকে সাত মাস ধরে ‘একঘরে’ করার অভিযোগ - ছবি : নয়া দিগন্ত

নওগাঁর রাণীনগরে জায়গা-জমির মালিকানা বিরোধের জ্বের ধরে সাত মাস ধরে চারটি পরিবারকে এক ঘরে রাখার অভিযোগ ওঠেছে। এছাড়া চলাচলের রাস্তা ইটের প্রাচীর দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেও গত তিন মাসে প্রতিকার মেলেনি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন।

উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের বড়খোল গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য বড়খোল গ্রামের আকবর দেওয়ানের ছেলে ছামছুর দেওয়ানসহ পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের জানান, বড়খোল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথে ছামছুর দেওয়ান পরিবারের জায়গার মালিকানা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। গ্রামের মাতব্বর প্রধান ও প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন জায়গা ছেড়ে দিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে পাশের খাস জমিতে বসতি স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাব নাকচ করার কারণে গত সাত মাস আগে গ্রামের মাতবর আব্দুল করিম, রিয়াজুল ইসলাম, বেলাল ও প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনসহ লোকজন নিয়ে ছামছুর দেওয়ানের পরিবারের সদস্য মোমেনা বিবির ঢোক দোকান ঘর ভেঙ্গে দেয়।

এরপর মাতব্বররা ছামছুর দেওয়ান, ভাই উজ্জ্বল দেওয়ান, শরিকান রমজান দেওয়ান ও মোমেনা বিবিসহ চার পরিবারকে একঘরে করে রাখে। এরপর আমরা জায়গার মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা দিয়েছি।

ছামছুর দেওয়ান আরো জানান, মাতব্বর রিয়াজ দেওয়ান নিজে এসে ছামছুর দেওয়ানসহ চার পরিবারের লোকজনকে একঘরে করে রাখার বিষয়টি জানায়। এছাড়া সমাজের কোনো লোকজন ওই চার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলতে, ছামছুর দেওয়ানের ভ্যান গাড়িতে যাতায়াত করতে, দোকান থেকে কোনো জিনিস ক্রয় করতে এবং মসজিদে নামাজ পড়তে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। নির্দেশনা ভঙ্গ করলে তার এক হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলেও তারা ঘোষণা দেয়।

এমন নির্দেশনার পর থেকে গ্রামের কোনো লোকজন তাদের সাথে কথা বলে না এবং দোকান থেকে কোনো জিনিসপত্র বা ওষুধও বিক্রি করে না এবং ভ্যান গাড়িতেও কেউ যাতায়াত করে না। এছাড়া বিদ্যালয়ের জায়গা দাবি করে ছামছুর দেওয়ানসহ চার পরিবারের লোকজনের চলাচলের রাস্তা ইটের প্রাচীর দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে করে প্রাচীর টপকে বাড়ি থেকে বের হতে হচ্ছে। ফলে পরিবারের ২১ জন সদস্য নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ওই চার পরিবার।

ওই গ্রামের শাহিন হোসেন, ইকবাল হোসেন, খায়রুল ইসলাম প্রামাণিক জানান, স্কুলের সাথে জায়গা নিয়ে বিরোধ চলছে। কয়েকবার বসেও সমাধান হয়নি তাই মাতব্বরদের নির্দেশে সমাজ থেকে তাদেরকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। যে কারণে আমরাও কথা বলি না।

এ ঘটনার সুষ্ঠু প্রতিকার চেয়ে ছামছুর দেওয়ান নওগাঁ জেলা প্রসাশক বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে গতবছর ২৭ অক্টোবর জেলা প্রসাশক রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ‘ব্যক্তিগতভাবে দেখে অবহিত’ করার নির্দেশ দেন। এরপর নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেন। কিন্তু গত তিন মাসেও কোনো সুষ্ঠু প্রতিকার মেলেনি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

গ্রামের প্রধান মাতব্বর আব্দুল করিম, রিয়াজ উদ্দীন ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন একঘরে করে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ছামছুর দেওয়ানরা খারাপ মানুষ। যে কারণে ঘৃণা করে গ্রামের লোকজন ওদের সাথে কথা বলে না। এ ছাড়া ওরা নিজেরাই নিজেদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করেছে। আমরা তাদেরকে বন্ধ করিনি।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং উভয় পক্ষকে আমার দফতরে ডেকেছি। আশা করছি তারা আসবেন এবং দ্রুতই বিষয়টির সমাধান হবে।


আরো সংবাদ



premium cement