১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বগুড়ায় বাউলবেশী ‘সিরিয়াল কিলার’ হেলাল : ১২ বছর পর পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ

হেলালকে শুক্রবার বগুড়া সদর থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব-১২। - ছবি : নয়া দিগন্ত

বগুড়ার একাধিক হত্যা মামলার আসামি হেলাল হোসেন ওরফে বাউল হেলালকে ১২ বছর পর দেখল তার পরিবারের সদস্যরা। র‌্যাব-১২ বগুড়া শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় হেলালকে বগুড়া সদর থানায় হস্তান্তর করে। পরে বগুড়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিস্কৃতি হাগিদকের আদালতে হাজির করা হয়।

বগুড়ার কোর্ট ইন্সপেক্টর সুব্রত কুমার জানান, আদালত তাকে কাস্টডি পরোয়ানা মূলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপরই তাকে ওই আদালতের দোতলায় হাজতখানায় পাঠানো হয়। সেখানে তার সাথে দেখা করেন হেলালের ছেলে হেদায়েতুল ইসলাম শিমুল, মা বিলকিস বেওয়াসহ নিকট আত্মীয়রা।

বগুড়া সদর থানার ওসি সেলিম রেজা জানান, আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

বাবাকে দেখতে আসা হেলালের ছেলে শিমুল বলেন, তার জন্ম ২০০২ সালের এপ্রিলে। তার বয়স যখন ৮-৯ বছর তখন শেষবার তার বাবাকে দেখেছিলেন। তারপর আর দেখেননি। তবে ক’দিন ধরে তার বাবাকে টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে বলে তাকে জানানো হয়।

কারাগারে পাঠানোর আগে বাবাকে দেখার জন্য হাজতখানার বারান্দায় অপেক্ষমাণ শিমুল বলেন, ‘আব্বাকে এখনো সরাসরি দেখনি। এ ক’দিন শুধু টেলিভিশনেই তাকে দেখেছি।

শহরের ফুলবাড়ী কারিগরপাড়া বাসিন্দা হেলাল। হেলালের মা বিলকিস বেওয়া জানান, বহু বছর হলো তার ছেলের সাথে তার কোনো দেখা নেই। সর্বশেষ কবে দেখা হয়েছে সেটিও মনে নেই। তিনি জানান, তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে হেলাল দ্বিতীয়।

বগুড়া শহরে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে তিনটি হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে বাউল সেলিম (৪৫) নিজেকে আড়াল করতে ২০ বছর ধরে বাউল ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। বুধবার কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন থেকে হেলালকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

র‌্যাব তখন জানায়, ‘হেলালের বিরুদ্ধে যে তিনটি হত্যা মামলা রয়েছে, সবগুলোই বগুড়ায়। তিনি বগুড়ায় একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে বগুড়ায় বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০১ সালে বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তিনি। এছাড়াও ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলার আসামি হেলাল। ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় দায়ের করা একটি চুরির মামলায় ২০১৫ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ২০০০ সালে বগুড়া শহরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে বামহাতে জখম হন হেলাল। এতে তার বামহাত পঙ্গু হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি এলাকায় লুলা হেলাল নামেও পরিচিত ছিলেন।’

চুরির মামলায় ২০১৫ সালে জামিন পেয়ে কৌশলে ঢাকায় চলে যান। এরপর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম যান। সেখানে কয়েকদিন থাকার পর ছদ্মবেশ ধারণ করে সিলেটে কিছুদিন অবস্থান করেন। বিভিন্ন সময় তিনি তার নাম-পরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করতেন। প্রায় সাত বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারি জীবনযাপন করেন। সর্বশেষ গত চার বছর ধরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে এক নারীর সাথে সংসার করে আসছেন হেলাল। রেলস্টেশনে বাউল গান গেয়ে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement