২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভাঙা হচ্ছে কাটাখালীর সেই মেয়রের মার্কেট, এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করছে আ’লীগ নেতারা

ভাঙা হচ্ছে কাটাখালীর সেই মেয়রের মার্কেট, এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করছে আ’লীগ নেতারা - ছবি : নয়া দিগন্ত

রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর অবৈধভাবে নির্মিত দোতলা মার্কেট ভেঙে ফেলা হচ্ছে। কাটাখালী বাজারের বাস স্ট্যান্ডের পাশে সরকারি খালের নির্মাণ করা হয়েছিল মার্কেটটি। শুধু মেয়র আব্বাসের ভবনই নয়, একই সাথে ভাঙা হবে ওই এলাকার সব অবৈধ স্থাপনা। শনিবার সকাল ৯টা থেকে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় কাটাখালীতে মেয়র আব্বাসের নির্মাণাধীন দোতলা মার্কেটি ভাঙার কাজ শুরু হয়।

এ দিকে মেয়র আব্বাসের অবৈধভাবে নির্মিত মার্কেট ভাঙার কাজ শুরুর ঘণ্টাখানেক পর সেখানে মিষ্টি বিতরণ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অবৈধ মার্কেটটির নিচ তলায় সাতটি দোকান ছিল। দোকানগুলোর ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছিল। এছাড়া দোতলার ওপরের শুধু ছাদ ঢালায়ের কাজ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই মার্কেট ভাঙার পর কাটাখালী বাজারের উত্তরে মসজিদের সামনে অবৈধ যেসব দোকানপাট রয়েছে সেগুলোও উচ্ছেদ করা হবে।

পবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ক্ষমতার অপব্যবহার করে মেয়র আব্বাসসহ অনেকেই কাটাখালী পৌরসভার সরকারি খালের বেশকিছু জায়গায় অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এর ফলে আশপাশের বেলঘড়িয়া, শ্যামপুরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হন। অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের ফলে খালের পানি চলাচল স্বাভাবিক হবে।

তিনি জানান, সম্প্রতি এই খালটি পদ্মা নদী থেকে হরিয়ান বাইপাস এলাকা পর্যন্ত পুনঃসংস্কার করা হয়। যদিও খালটি ফলিয়ার বিলে গিয়ে মিশেছে। তবে সংস্কারের এক বছরের মাথায় কাটাখালী পয়েন্টে মেয়র আব্বাস খালের জায়গাটিতে মাটি ও বালু দিয়ে ভরাট করে সরু আরসিসি ঢালায় দিয়ে দোতলা মার্কেট নির্মাণ করেন। এতে খালে পানি চলাচলের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়ে পড়ে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে কিছু দিনের জন্য ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। তবে এর কয়েকদিন পর আবার মেয়র আব্বাস স্থানীয় প্রশাসনের কথা অমান্য করে আবারো কাজ শুরু করেন।

মেয়র আব্বাসের ভবন ভাঙার সময় উপস্থিত ছিলেন কাটাখালী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মঞ্জুর রহমান। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, মেয়র আব্বাসের ৪টি অবৈধ স্থাপনা আমরা চোখে দেখেছি। এই ৪টি স্থাপনা ভাঙার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত আজ কাটাখালীতে এসেছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মেয়র আব্বাসের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজ শুরু হয়েছে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মেয়র আব্বাসের এই মার্কেটটি সরকারি খালের ওপরে অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছিল। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর আমরা জানতে পারি। এরপর এটি অপসারণের জন্য তাকে নোটিশ দেয়া হয়। তবে তিনি প্রেরণকৃত নোটিশের কোনো জবাব দেননি। এখন আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

মেয়র আব্বাসের অবৈধ মার্কেট ভাঙায় মিষ্টি বিতরণ

কাটাখালীর মেয়র আব্বাসে অবৈধভাবে নির্মিত মার্কেট ভাঙার কাজ শুরুর ঘণ্টাখানেক পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্থানীয় লোকজন মিষ্টি বিতরণ করেন। কাটাখালী বাজার বাসস্ট্যান্ডে এ মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, দীর্ঘ দিন ধরে কাটাখালী বাসস্ট্যান্ড বাজারের পাশে ৭ থেকে ৮টি দোকান ছিল কিছু গরীব মানুষের। মেয়র আব্বাস তা উচ্ছেদ করে সেখানে ভবন গড়ে তোলেন। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ভবনটির কয়েকটি দোকানও বরাদ্দ দেন তিনি। তারা জানান, মেয়র আব্বাসের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারতেন না। তবে আজ অবৈধ মার্কেট ভাঙা শুরু হওয়ায় আমরা মিষ্টি বিতরণ করছি।

এ ব্যাপারে কাটাখালী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মঞ্জুর রহমান জানান, এত দিন মেয়রের ভয়ে কাটাখালী পৌরসভায় কেউ কথা বলতে পারতেন না। আজ তার অবৈধ ভবন ভাঙার কারণে এলাকার বেশকিছু লোক খুশিতে মিষ্টি বিলি করছে। তিনি বলেন, আমি ডায়াবেটিসের রোগী। মিষ্টি খাওয়া নিষেধ। তারপরও তারা আমাকে জোর করে মিষ্টি খাইয়ে দিয়েছে। তাদের খুশিতে আমিও শরীক হয়েছি।

উল্লেখ্য, রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় মেয়র আব্বাস আলী বর্তমানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন। গত বুধবার সকালে রাজধানী ঢাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব। পরদিন বৃহস্পতিবার রাজশাহীর আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে ২৩ নভেম্বর রাতে বোয়ালিয়া মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার এজাহার দেয়া হয়। পরে পুলিশ সদর দফতরের অনুমোদনের পর ২৪ নভেম্বর মামলাটি গ্রহণ করা হয়। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি রেকর্ড করে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহাবুল আলমকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে টিকটক করতে গিয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু তানজানিয়ায় বন্যায় ১৫৫ জনের মৃত্যু বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৩ দেশে কাতার আমিরের সফরে কী লাভ ও উদ্দেশ্য? মধুখালীর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি হেফাজতের ফর্মে ফিরলেন শান্ত

সকল