ভাতার কার্ড ফেরত দিয়ে নজির স্থাপন করলেন লাজিনা
- মো: সামছুল আলম, আদমদীঘি (বগুড়া)
- ২৮ জুলাই ২০২১, ১৭:৪৭, আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২১, ১৭:৪৯
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ধুলাতৈর গ্রামের লাজিনা বেওয়া (৫৬)। তার ইচ্ছা অনুযায়ী সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসায় তিনি আদমদীঘি সমাজসেবা অফিসে বিধবা ভাতার কার্ড ফেরত দিয়ে নজির স্থাপন করেছেন। এরকম ঘটনা সত্যিই বিরল। তার উদারতায় অনেকেই মুগ্ধ।
বুধবার সকালে লাজিনা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, তার বাবার বাড়ি উপজেলার কাল্লাগাড়ি গ্রামে। বাবার নাম আসাব আলী। পাশের ধুলাতৈর গ্রামের লেদু প্রামানিকের ছেলে হাদিস প্রামানিকের প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তার সাথে লাজিনার বিয়ে হয়। হাদিস জয়পুরহাট জেলার একটি ইটভাটায় কাজ করে জীবিকা চালাতেন। অনুমান ১৬ বছর বয়সে লাজিনার বিয়ে হয়। হাদিসের সাথে দাম্পত্য জীবনে তার গর্ভে দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান জন্ম নেয়।
১৯৮২ সালে ছেলে মামুনের বয়স যখন ছয় মাস, তখন স্বামী হাদিস রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান। পুরো সংসারের দায়িত্ব লাজিনার কাঁধে পড়ে।
সংসারের অভাব অনটনের কারণে কখনো তরকারির অভাবে লাজিনা শুধু চাল সিদ্ধ করে খেয়েছেন। কখনো শাক কচু খেয়ে দিন কাটিয়েছেন।
১৯৯৮ সালে ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন জহরুল মেম্বারের সহায়তায় তিনি বিধবা ভাতার তালিকাভুক্ত হন। তখন তিনি ১০০ টাকা করে ভাতা পেতেন। যেদিন তিনি আদমদীঘিতে ভাতা নেয়ার জন্য যেতেন, তখন অপেক্ষার প্রহর গুণতে হতো। কোনো কোনো দিন সন্ধ্যা হয়ে যেত। তখন তিনি ভাবতেন বিধবা ভাতা তুলতে গিয়ে যে পরিমাণ কষ্ট হয়, তার চেয়ে অন্যের কাজ করাই ভালো। তখন তিনি নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দেয়া করতেন, যদি কোনোদিন আল্লাহ তাকে সচ্ছলতা দান করেন তিনি অন্য বিধবার উপকারের জন্য তার কার্ডটি ফিরিয়ে দেবেন।
লাজিনা পুরুষের মতো অন্যের জমিতে কাজ করে ও ছাগল-হাস-মুরগি পুষে সংসারের খরচ চালিয়ে মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলে মামুনুর রশিদকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। মামুন বরাবরই ভালো ছাত্র ছিলেন। মামুন ২০০৭ সালে তিলোকপুর নূর নগর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন নেন।
ইতোমধ্যে ছেলে মামুন ২০১২ সালে রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্যানেল শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছিলেন। নিয়োগ জটিলতার করণে তিনি ২০১৪ সালে (জি টু জি) পদ্ধতিতে সরকারিভাবে মালোয়েশিয়ায় চলে যান। ২০১৬ সালে ছুটিতে দেশে ফিরে আসেন। তখন মামুন নিয়োগপত্র পান ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরিতে যোগদান করেন। মামুন বর্তমানে কোমারভোগ চকসোনার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
লাজিনা জানান, ছেলের চাকরির কারণে সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। তাই তিনি তার পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের ৭ জুন ছেলে মামুনের মাধ্যমে আদমদীঘি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে বিধবা ভাতার কার্ডটি ফেরত দেন। বিষয়টি সম্প্রতি এলাকায় জানাজানির পাশপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। অনেকেই এই মায়ের সাহসিকতা ও উদরতার প্রশংসা করছেন।
এলাকাবাসী বলছে, যখন সমাজের কিছু ব্যক্তি অবৈধভাবে অর্থ আয়ের জন্য প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে, ঠিক তখন লাজিনা তার বিধবা ভাতার কর্ডটি ফেরত দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এমন ঘটনা সমাজে বিরল।
এ ব্যাপারে সমাজসেবা অফিসার শরীফ উদ্দিন জানান, লাজিনার কার্ড ফেরত দেয়ার ঘটনা সত্যিই বিরল। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার জন্য ব্যাংকে চিঠি দেয়া হবে। উপজেলার সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে তার পরিবর্তে অন্য কোনো বিধবাকে ভাতা দেয়ার জন্য কার্ডটি দিয়ে তালিকাভুক্ত করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা