২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিএনপির সমাবেশে দেয়া নিজ বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ মিনুর

বিএনপির সমাবেশে দেয়া নিজ বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ মিনুর - ছবি : নয়া দিগন্ত

সদ্য সমাপ্ত বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে দেয়া নিজ বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ দুঃখ প্রকাশ করেন। মিনুর পক্ষ থেকে রাজশাহী মহানগর বিএনপির দফতর সম্পাদক নাজমুল হক ডিকেন বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন।

এর আগে মিজানুর রহমান মিনুকে মাফ চাইতে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের বেঁধে দেয়া ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ হয় গত শনিবার সন্ধ্যায়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাফ না চাইলেও পরদিন তিনি দুঃখ প্রকাশ করলেন। বিবৃতিতে মিনু উল্লেখ করেন, ‘আমার বক্তব্যের জন্য যারা ব্যথিত হয়েছেন, মর্মাহত হয়েছেন, আমি তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

মিনু আরো বলেন, ‘আমি এ মহানগরীতে জন্মগ্রহণ করে দীর্ঘ দিন রাজশাহীবাসীকে নিয়ে নিষ্ঠার সাথে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করে আসছি। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনসহ সকল আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে পাশে পেয়েছি। সুতরাং, কোনো ব্যক্তি বিশেষ বা গোষ্ঠী বিশেষকে উদ্দেশ্য করে আক্রোশমূলক বক্তব্য দেয়া আমার স্বভাববহির্ভূত। তাই সকলকে আমার বক্তব্যে ষড়যন্ত্র না খোঁজার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

এর আগে গত ২ মার্চ বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে মিজানুর রহমান মিনু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবজ্ঞা ও তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হত্যার’ ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন বলে মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়। এর প্রতিবাদে পরদিনই বিক্ষোভ-সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। সে সমাবেশ থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন মিনুকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। লিটন ঘোষণা দেন, ‘এ সময়ের মধ্যে মিনু মাফ না চাইলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’

আর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা এক প্রতিবাদলিপিতে মিনুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। এ ছাড়া মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে মিনুকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।

মিনু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবজ্ঞা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হত্যার’ ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। গত শুক্র ও শনিবার বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলেন। মিনু এত সাহস কোথায় পেলেন সে প্রশ্নও তোলেন ওবায়দুল কাদের। অবশেষে মিজানুর রহমান মিনু রোববার গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে নিজ বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন।

এর আগে ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর রাজশাহী মহানগর বিএনপির এক বিক্ষোভ সমাবেশে মিনু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সাথে তুলনা করে কটূক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন বলে সে সময় অভিযোগ তুলেছিল মহানগর আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে তখন রাজশাহীতে বিক্ষোভ করে ক্ষমতাসীন এ দলটি। প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করে বক্তব্য দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মিনুকে মাফ চাইতে বলা হয়। এরপর ফেসবুক লাইভে এসে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু।

এ দিকে মিনু বিবৃতি পাঠানোর আগে ও আল্টিমেটামের সময় শেষ হওয়ায় মহানগর আওয়ামী লীগ মিনুর বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। রোববার ৭ মার্চের আলোচনা অনুষ্ঠানেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন উপস্থিত ছিলেন। সে আলোচনা সভায় মিনুর বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়।

সভা শেষে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনুর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের আইনজীবীদের বলা হয়েছে। কেমন ধারায় মামলা করা যায় সেটা তারা দেখবেন। সোমবার আদালতে মামলা করা হবে। এ ছাড়া ৯ মার্চ রাজশাহীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে। সেখানে আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল ও রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনও উপস্থিত থাকবেন।’

এসব সিদ্ধান্তের পর মিনুর দুঃখ প্রকাশ নিয়ে আওয়ামী লীগ কী ভাবছে জানতে চাইলে ডাবলু সরকার বলেন, ‘সেটা আবার আলোচনার বিষয়। আমরা আবার একটু আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাব।’

আর মিনুর বিবৃতি প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, ‘এটা মিজানুর রহমান মিনুর একান্তই ব্যক্তিগত বক্তব্য। এ ব্যাপারে বিএনপি কী বলছে আমরা সেটা শুনতে চাই।’


আরো সংবাদ



premium cement