২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এক সতিনকে জেতাতে ভোটের মাঠে ২ সতিন

তিন সতিনের প্রচারণা - ছবি : নয়া দিগন্ত

গল্প-উপন্যাসে ‘সতিন’ মানেই খল চরিত্র, ঝগড়াটে বা খারাপ কিছুই সাধারণত বোঝানো হয়। কিন্তু বাস্তবে এর ব্যতিক্রমও আছে।

বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মাজেদা বেগম। আর তার জয়ের জন্য মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তার অপর দুই সতিন।

তিন সতিন একই সাথে ভোটারের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়ায় বিষয়টি ভোটারদের মধ্যেও আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকজন ভোটার বলেছেন, বর্তমান সময়ে যখন সতিনদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত হয় না, তখন এক সতিনের জয়ের জন্য আরো দুই সতিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভোট চাওয়ার বিষয়টি একটি ভালো দৃষ্টান্ত।

মাজেদা বেগমের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই পৌর এলাকার বন্তেঘরী মহল্লার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুস সামাদ তার স্ত্রীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। যেকোনো এক স্ত্রীকে সংরক্ষিত নারী আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তাব তোলেন। পরে সিদ্ধান্ত হয় তৃতীয় স্ত্রী মাজেদা বেগমই হবেন সেই প্রার্থী। সেই সাথে এ সিদ্ধান্তও হয়, জয় ছিনিয়ে নিতে তিন সতিন একসাথে ভোটারের কাছে গিয়ে ভোট চাইবেন। আর সিদ্ধান্ত মোতাবেকই কাজ এগোচ্ছে তাদের।

চার-পাঁচজন ভোটারের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাজেদা বেগম ২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে ‘আনারস’ প্রতীক নিয়ে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদিন ভোরে তারা তিন সতিন মিনু বেগম, রেনু বেগম ও মাজেদা বেগম স্বামী আব্দুস সামাদকে সাথে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন। গভীর রাত পর্যন্ত জয়ের আশায় ওয়ার্ডের এ-বাড়ি থেকে ও-বাড়ি ক্লান্তিহীনভাবে ছুটে বেড়াচ্ছেন।

বন্তেঘরী গ্রামের ভোটার ফজলুর রহমান (৪৫) বলেন, ‘সতিন মানেই যে খারাপ কিছু নয় তা আব্দুস সামাদের স্ত্রীরা প্রমাণ করেছেন। তাদের এই তিন সতিনের প্রচারণা ভোটারদের মধ্যে আলাদা একটা উৎসাহ নিয়ে এসেছে। মাজেদা বেগম এখন এ পৌরসভার আলোচিত প্রার্থী।’

মিনু বেগম বলেন, ‘আমাদের আলাদা আলাদা হাঁড়ি। কিন্তু সবাই আপন বোনের মতো। শুধু ভোট নয়, সকল সুখে-দুঃখে আমরা একে অন্যের পাশে দাঁড়াই।’

মাজেদা বেগম বলেন, ‘সতিন মানেই মনে করা হয় শত্রু। কিন্তু আমি ভাগ্যবান। সতিনরা আমার কাছে বোনের মতো। অতি আপনজন। আমি নির্বাচিত হতে পারলে এলাকায় নারী নির্যাতন ও বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবো।’

আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আমার স্ত্রীদের নিয়ে আমি খুশি। তারা সব সমস্যাকে মিলেমিশে মানিয়ে নিতে পারে। আর তাদের এই মধুর সম্পর্কের কথা ভোটারেরা জানতে পেরে সকলেই অনেক খুশি।’

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আব্দুস সামাদের চার স্ত্রী। এরমধ্যে বড় স্ত্রী সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করার জন্য নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারছেন না। তবে এতে তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তিনি টাকা-পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। মাজেদা বেগম বর্তমানেও ওই সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন। গতবারেও একইভাবে প্রচারণা চালিয়ে তারা ভোটারদের মন জয় করেছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement