২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বগুড়ায় আলু নিয়ে প্রশাসন ও হিমাগার মালিক মুখোমুখি

বগুড়ায় আলু নিয়ে প্রশাসন ও হিমাগার মালিক মুখোমুখি - নয়া দিগন্ত

বগুড়ায় সরকার নির্ধারিত আলুর দাম কার্যকর নিয়ে জেলা প্রশাসন ও হিমাগার মালিক সমিতি (কোল্ড ষ্টোরেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন) মুখোমুখী অবস্থান নিয়েছে। সরকারী নির্দেশ কার্যকর করতে জেলা প্রশাসন হিমাগার ও বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে একের পর এক জরিমানা আদায় করায় চরম অসন্তোশ প্রকাশ করেছে হিমাগার মালিকরা। সংগঠনের এক সভায় মোবাইল কোর্টের প্রতিবাদ করে জেলা প্রশাসকের সমালোজনাও করা হয়।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, দেশের সর্বোচ্চ আলু উৎপাদনকারী জেলাগুলোর একটি বগুড়া। গত মওসুমে জেলায় ৫৫ হাজার ৪৫৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন জাতের আলু উৎপাদন হয়। তবে কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের তথ্য মোতাবেক গত মওসুমে বগুড়া জেলায় আলু উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৮৩ হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন এবং জেলায় এক বছরের চাহিদা গড়ে ১ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন। অর্থ্যাৎ চাহিদার চেয়ে বেশী উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন। গত মওসুমে আলুর দাম ছিল ১৩-১৪ টাকা কেজি। ওই সময় আলু ব্যবসায়ীরা ১৩-১৪ টাকা কেজি দরে আলু কিনে হিমাগারে মজুদ করেন। হিমাগার ভাড়াসহ অন্যান্য বাবদ ব্যয় পড়েছে কেজিতে ১৮-১৯ টাকা।

বাংলাদেশ কোল্ড ষ্টোরেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বগুড়া জেলা শাখা সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলায় ছোট বড় ৩৩টি হিমাগার রয়েছে। প্রতিটির ধারণ ক্ষমতা গড়ে ১ লাখ বস্তা (প্রতি বস্তায় ৬০ কেজি) থেকে ২ লাখ বস্তা। এ ছাড়া আলু চাষীরা নিজ-নিজ ব্যবস্থাপনায় বীজ আলু সংরক্ষণ করেন। ফলে এ মুহুর্তে বগুড়া জেলায় পর্যাপ্ত আলু হিমাগারে মজুদ রয়েছে। তাই আলুর কোন সংকট নেই। বগুড়া জেলার বিভিন্ন হিমাগার থেকে গত এক মাস আগেও ২৪-২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে। সেই আলু খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ২৮-৩০ টাকা। এ অবস্থায় সম্প্রতি টানা বৃষ্টিপাতের কারণে জমিতে পানি জমে গেছে। হিমাগার মালিকরা কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, বেগুনসহ অন্যান্য সবজির দাম বৃদ্ধি দেখে হঠাৎ করে আলুর দামও বৃদ্ধি করে। তারা এখন প্রতি কেজি হিমাগার গেটে বিক্রি করছেন ৩৪-৩৫ টাকা। কিন্তু সরকারী দাম ২৭ টাকা হওয়ায় তারা বিক্রির কোন রশিদ বা মেমো দিচ্ছেন না। সরকার একই সাথে আলুর দাম পাইকারী ৩০ টাকা ও খুচরা বাজারে ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়ছে। ফলে পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরাও আলু বিক্রির রশিদ দিচ্ছেন না। ফলে বগুড়ার বাজারে বিভিন্ন জাতের আলু পাইকারী ৩৮-৪০ টাকা এবং খুচরা ৪০- ৪৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।

এ অবস্থায় সরকারী দামে আলু বিক্রি না করে অতিরিক্ত দামে বিক্রির সত্যতা পেয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন গত দুই সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫টি হিমাগারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রায় ৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বাজারে একইভাবে খুচরা বিক্রেতারা বেশি দামে আলু বিক্রির দায়ে জরিমানা আদায় করে। মোবাইল কোর্ট যতক্ষণ যে বাজারে অবস্থান করে ততক্ষণ সরকারী দামে বেচাকেনা হয়। যখনই মোবাইল কোর্ট চলে যায় তখনই অতিরিক্ত দামে বেচাকেনা শুরু হয়।

শহরের রাজাবাজারের খুচরা বিক্রেতা লাল মিয়া জানান, আড়ত থেকে তারা যে দামে আলু কিনছেন, সেই আলু কেজি প্রতি দুই টাকা লাভে খুচরা বিক্রি করছেন। পাইকারী ব্যবসায়ীরা আলু কেনার কোন মেমো দেয় না। তারা বলে, মেমো ছাড়া আলু না নিলেও না নাও।

একই বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান জানান, ‘হিমাগার থেকে সরকারি মূল্যে আমরা আলু কিনতে পারছি না। এ কারণে আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করতেও পারছি না। বগুড়ার এএইচজেড কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যবসায়ী হিমাগারে আলু মজুদ করেন। এখান থেকে তারাই আলু বিক্রি করেন। সরকার আলুর মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার পর আমরা নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু কেউ নোটিশ মানেন না।

এদিকে জেলা প্রশাসনের এ পদক্ষেপে বগুড়া জেলা কোল্ড ষ্টোরেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার সদরের নওদাপাড়াস্থ হোটেল মম ইন এ অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন কোল্ড ষ্টোরেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম, সহ-সভাপতি যথাক্রমে আলহাজ্ব আবুল কালাম আজাদ, আলহাজ্ব আব্দুল গফুর ও আলহাজ্ব তোফাজ্জল হোসেন প্রমূখ।

সভায় বক্তারা বলেন, সরকার তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বিএডিসি‘র বীজ আলুর দাম নির্ধারণ করেছে ৪৮ টাকা। সে ক্ষেত্রে কৃষকের বীজ আলু কিভাবে সময়ের পূর্বেই ৩০-৩৫ টাকা কেজি মূল্যে বিক্রি করার জন্য জেলা প্রশাসক কোল্ড ষ্টোরেজ সমূহকে চাপ দেন এবং কৃষকের বীজ আলু কোল্ড ষ্টেরেজ থেকে বের করে দিতে বলেন। তিনি তার ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন কোল্ড ষ্টোরেজে গিয়ে কৃষকের বীজ আলু রাখার অপরাধে জরিমানা করেছেন। এভাবে জরিমানা করতে থাকলে কোল্ড ষ্টোরেজগুলো বীজ আলু সংরক্ষণের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ফলে বীজ আলু রোপনের সময় সংকট তৈরী হবে।


আরো সংবাদ



premium cement