২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শিক্ষককে উলঙ্গ করে মারপিট : অভিযুক্ত গ্রেফতার

-

নওগাঁর মান্দায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে উলঙ্গ করে মারপিট ও মানহানির দায়ে অভিযুক্ত এরশাদ আলীকে (৩৭) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি কাঁশোপাড়া ইউনিয়নের পাঁজরভাঙ্গা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিলশাদের ছেলে। ঘটনার তিন দিন পর সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এক ঝটিকা অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ভুক্তভোগী নাছিম উদ্দিন আত্রাই উপজেলার বড়ইহুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক।

তিনি শনিবার রাতে পাঁজরভাঙ্গা বাজারের ভাই ভাই ছ’মিল মালিক এরশাদ আলীসহ চারজনকে আসামি করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ মামলা নথিভূক্ত করতে গড়িমসি করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, এ ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হওয়ার পর প্রশাসন বিষয়টি আমলে নেয়। ওই শিক্ষককে উলঙ্গ করে মারপিট করার ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ হলে মান্দা থানার পরিদর্শক শাহিনুর রহমান সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

নাছিম উদ্দিনের মেয়ে জামাই পাঁজরভাঙ্গা বাজারের রেজাউল ইসলাম দৈনিক নয়া দিগন্ত প্রতিবেদককে জানান, এলাকায় বাড়ির পাশে ভাই ভাই ছ’মিলটি থেকে সারাক্ষণ বিকট আওয়াজে কাঠ ফাড়াইয়ের কারণে শব্দ দূষণ হয়। ফলে এলাকাবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ব্যাহত হয়।

তিনি ও তার ভাই এনামুল হক মিলে বসতবাড়ির পাশ থেকে সেটি সরিয়ে অন্য কোথাও ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুরোধ করে আসলেও ছ’মিলের মালিকপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় তারা কোনো কথা কর্ণপাত করত না। উল্টো মারপিটের ভয়-ভীতি দেখিয়ে নানা হুমকি দিত। পরে তারা পরিবেশ অধিদফতরে অভিযোগ করেন। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতর তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি।

পরে গত ১২ জুলাই নওগাঁ জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ করা হয়। জেলা প্রশাসক অভিযোগ পেয়ে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তপূর্বক ওই ছ’মিল বন্ধ করে অন্যস্থানে সরিয়ে নিতে নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত ছ’মিলটি বন্ধ করা তো দূরের কথা, আরো জোরদারভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকপক্ষের সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকেরা।

পরে ঘটনার দিন শনিবার বেলা ৩টার দিকে বিষয়টি জানতে সাংবাকিদরা ঘটনাস্থলে গেলে ভিড় দেখে আমার শ্বশুড় নাছিম উদ্দিন সেখানে যান। এ সময় পাঁজরভাঙ্গা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিলশাদের ছেলে এরশাদ আলী, আবদুর রাজ্জাক, এরশাদ আলীর চাচা চকবালু গ্রামের আবজাল হোসেন, মৃত মনির উদ্দিনের ছেলে কালুসহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেকে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার শ্বশুরকে লাঞ্ছিত করেন। তার লুঙ্গি টেনে খুলে তাকে উলঙ্গ করে সাংবাদিকদের সামনে বেধড়ক মারপিট করেন। ওই ঘটনায় আমার শ্বশুর শনিবার রাতে এরশাদ আলীসহ চারজনকে আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ থানায় দাখিল করেন। পরে সোমবার রাতে আবারো নতুন করে একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়।

পাঁজরভাঙ্গা বাজার বনিক সমিতির সভাপতি একরামূল হক দৈনিক নয়া দিগন্ত প্রতিবেদককে জানান, ‘পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো ছ’মিল তো চলতে পারে না। যদি ছাড়পত্র না থাকে, তাহলে চলে কিসের জোরে। বসত বাড়ির পাশে শব্দ দূষণের কারণে এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিন ধরে সমস্যা হচ্ছে। তিনি এর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হালিম সাংবাদিকদের জানান, জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ স্যারের নির্দেশ পেয়ে তিনি ওই ছ’মিলের মালিককে পরপর দু’বার নোটিস দিয়েছেন। এছাড়া মৌখিকভাবে এটি বন্ধের জন্য অনুরোধ পূর্বক অন্যত্র সরিয়ে নিতেও নির্দেশ দিয়েছিলেন।

মান্দা থানার পরিদর্শক শাহিনুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনার তদন্তপূর্বক মামলা নথিভূক্ত করা হচ্ছে। ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে মূল আসামি এরশাদ আলীকে গ্রেফতার করেছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।


আরো সংবাদ



premium cement