২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বৃক্ষ প্রেমিক ভ্যানচালক আজগর আলী, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত

- ছবি : নয়া দিগন্ত

নাটোরের বড়াইগ্রামের মাঝগাঁও ইউনিয়নের মাধাইমুড়ি গ্রামের আজগর আলী (৪২)। পেশায় একজন ভ্যানচালক। লেখাপড়া বলতে শুধু অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন। দুই ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন করেন তা দিয়ে কোনো রকমে দিন চলে তার।

কিন্তু এই অল্প আয়ের ছোট সংসারেও আজগর আলী তার শখকে মরতে দেননি। তার শখ গাছ লাগানো। তার এই শখকে তিনি রুপ দিয়েছেন মহৎ কাজে। ব্যস্ততার ফাঁকে মহাসড়কের ধারে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে নিঃস্বার্থভাবে গাছের চারা রোপণ করেন তিনি। এ কারণে মানুষ এখন তাকে বৃক্ষপ্রেমিক আজগর নামে চেনে।

এলাকাবাসী জানান, আজগর আলীর নিজের সম্পত্তি বলতে সোয়া তিন কাঠার বসতভিটা। একটি রিকশা-ভ্যান থেকে পাওয়া সামান্য আয়ে ভরণপোষণ ও ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চলে তার। অথচ এই মানুষটির রোপণ ও পরিচর্যায় এ পর্যন্ত প্রায় ১০০টি বট গাছ, ১০টি পাকুর গাছসহ আরো শতাধিক তাল গাছ বেড়ে উঠেছে।

শুধু তাই নয়, উদার মনের এ মানুষটির আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলেও আছে মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা। তাই মাধাইমুড়ি ও বেলগাছি বিলে নিজের কোনো জমি না থাকলেও কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের পানি পান, ওজু ও হাত মুখ ধোয়ার জন্য তিনি দুটি টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছেন।

ঈদে হতদরিদ্র প্রতিবেশীদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ ও গ্রামের বিধবা নারীদের সাধ্যমত ইফতার করিয়ে মানসিক তৃপ্তি খুঁজে পান তিনি। আর তিনি এসব কাজের খরচ মেটাতে প্রতিদিন তার সীমিত আয় থেকে একটি অংশ আলাদা করে জমিয়ে রাখেন।

আজগর আলী জানান, ছোটবেলা থেকে গাছ লাগানোটা তার শখ। কিন্তু তার নিজের জমি নেই। আবার বিনা লাভে শ্রম দিতে পারলেও নার্সারি থেকে চারা কিনে রোপণের ক্ষমতা নেই তার। কিন্তু দেশের জন্য কাজ করাতো থেমে থাকতে পারে না। তাই ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বট গাছের চারা রোপণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ

জন্য ভ্যান চালানোর সময় আশেপাশে খেয়াল করে যেখানে বটের চারা দেখেন সেটা তুলে এনে নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় লাগিয়ে রাখেন। এক সময় চারাগুলো বেড়ে যখন রোপণের উপযোগী হয়, তখন সেগুলো তুলে সড়ক-মহাসড়ক, মসজিদ, মাদরাসা ও স্কুল মাঠের কিনারায় রোপণ করে দেন।

শুধু তাই নয়, গাছগুলো যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য কখনো বেড়া দিয়ে বা খুঁটি পুঁতে গাছটির সুরক্ষা দেন। রাস্তায় চলতে ফিরতে গাছগুলোর খেয়াল রাখাসহ প্রয়োজনীয় পরিচর্যাও করেন তিনি। এভাবে নাটোর-পাবনা মহাসড়কের রাজাপুর-আহম্মেদপুর পর্যন্ত তার লাগানো প্রায় ১০০টি বটগাছ মাথা উঁচু করে নিজের অবস্থান জানান দেয়ার পাশাপাশি রোদে ক্লান্ত পথিকদের শীতল ছায়া দিয়ে যাচ্ছে।

তাছাড়া বজ্রপাত রোধে তাল গাছ ভূমিকা রাখে বলে টিভির খবরে জেনে তিনি এর মধ্যে শতাধিক তাল বীজ রোপণ করেছেন। সেগুলো থেকে চারা বের হয়ে এখন বেড়ে উঠছে। তাছাড়া এ বছরও রাস্তার পাশ দিয়ে রোপণ করার জন্য নানা স্থানে ঘুরে ঘুরে প্রায় ৫০০ তালবীজ সংগ্রহ করেছেন তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, তিনি স্বেচ্ছায় গাছের চারা রোপণ করে দেশপ্রেমের অনন্য নজির রেখেছেন। বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। তাকে বনবিভাগের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব রকম সহায়তা দেয়া হবে।

মাঝগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম জানান, ভ্যানচালক আজগর আলী আর্থিকভাবে দরিদ্র হলেও মনের দিক থেকে ধনী। তিনি আমাদের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলে আমি মনে করি। এ ব্যাপারে তাকে আমি সার্বিক সহযোগিতা করব ইনশাল্লাহ।


আরো সংবাদ



premium cement
শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কারাগারে কয়েদির মৃত্যু উজ্জ্বল হত্যার বিচার দাবিতে সরিষাবাড়ীতে মানববন্ধন পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ২১ খাবারের সন্ধানে বসতবাড়িতে হরিণ, মহামায়ায় অবমুক্ত সিঙ্গাপুর প্রবাসী ফিরোজ মাহমুদের লাশ দেশে ফিরেছে ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের মৃত্যু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সব ধর্মের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে: ড. সুকোমল বড়ুয়া

সকল