ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙ্গছে ঐতিহ্যবাহী সড়ক, বাঁশের খুঁটি-কচুরিপানা দিয়ে রক্ষার চেষ্টা

বড় বড় ঢেউয়ের আঘাতে প্রতিদিনই ভাঙ্গছে নওগাঁ সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী হাঁসাইগাড়ী বিলের (গুটার বিল) নান্দনিক আস্তান মোল্লা সড়ক। সড়কটি বন্যার পানির ঢেউয়ের আঘাতে প্রতি বছরই ভাঙ্গনের শিকার হয়ে আসছে। এ বছরের অতি বন্যায় ইতোমধ্যে সড়কের একাংশ ভেঙ্গে বিলের সাথে বিলীন হয়ে গেছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। ঐতিহ্যবাহী সড়কটিকে ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় জনগণ ব্যক্তি উদ্যোগে বাঁশের খুঁটি ও কচুরিপানা দিয়ে সড়কটি রক্ষার চেষ্টা করছেন যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ইতোমধ্যেই স্থানীয় সাংসদ নিজাম উদ্দিন জলিল জনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাস্তার ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পরিদর্শন করেছেন এবং ওই রাস্তায় সকল প্রকার ভারী যানবাহন চলাচল সাময়িক ভাবে স্থগিত করা হয়েছে।

সরেজমিনে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, প্রায় এক দশক আগে পরলোকগত জননেতা আব্দুল জলিল এমপির উদ্যোগে হাঁসাইগাড়ী অথৈজলের মাঝে নির্মাণ করা হয় সড়কটি। এটি হাঁসাইগাড়ী, শিকারপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামের সাথে জেলা সদরের একমাত্র যোগাযোগের রাস্তা হলেও হাঁসাইগাড়ী বিশাল জলরাশীর মধ্যদিয়ে নির্মিত দীর্ঘ প্রায় ২০কি.মি. এই সড়ক এখন নওগাঁ জেলার অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। বিশাল এ বিলের বুক চিরে নির্মিত দৃষ্টি নন্দন সড়ক এবং বিশাল জলরাশির খেলা দেখতে প্রায় ৭ কি.মি. অংশে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীরা ভীর জমাচ্ছেন। দর্শনার্থীদের এই সংখ্যা এতোটাই বেড়েছে যে, বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দীর্ঘ এপথ দর্শনার্থীদের ভীড়ে পাড়ি দেয়া একেবারে অসম্ভব।

সড়কটি নির্মাণের পর থেকে বিলের অথৈজলের ঢেউ প্রতিরোধে নেয়া হয়নি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা। ফলে বর্ষায় ঢেউয়ের আঘাতে ক্রমাগত ভাঙ্গছে সড়কটির এক পাশ। যেসব স্থানে ব্লক দেয়া ছিলো তা অনেক পুরাতন হওয়ায় নষ্ট হয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে রাস্তার মাটি। ইতোমধ্যেই ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে রাস্তার পাশের স্টিট লাইটগুলো। বিলের পানি কমার পর যদি রাস্তাটি উঁচু করে দুই পাশ দিয়ে মেট্টিসিন ও ব্লক দেয়া না হয় তাহলে আগামীবছর এ রাস্তাটির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা।

ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাঁশ এবং কচুরিপানা দিয়ে সড়ক রক্ষার কাজে ব্যাস্ত স্থানীয় হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়ন আ'লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নওগাঁর ভীমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অহিদুল ইসলাম বলেন, পরলোকগত জননেতা আব্দুল জলিল এমপির সপ্নের সড়ক এটি। প্রতি বছর ঢেউ আর বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হুমকির মুখে এই সড়কটি। দীর্ঘদিন যাবত এলজিইডি থেকে সিসি ব্লক বা মেট্টিসিনসহ সড়ক প্রশস্থ ও মেরামতের কোনো কাজ না করায় সড়কটি ভেঙ্গে যাচ্ছে। তিনি সড়কটি সংস্কারে স্থানীয় সাংসদ ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। স্থানীয় হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়ন আলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল সড়কটি প্রশস্ত করাসহ সিসি ব্লক দিয়ে নির্মাণ করে পর্যটনবান্ধব করার দাবি জানান।

নাটোর থেকে আসা পর্যটক আব্দুল হালিম, জয়পুরহাট থেকে আসা গোলাম রাব্বানী, বগুড়া থেকে আসা আব্দুস সালাম বাবুসহ অনেকেই বলেন বিলের সৌন্দর্য বর্ধনসহ রাস্তাটি উচু করে পাশ দিয়ে পর্যটকদের বসার ব্যবস্থা, ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য ছাউনি স্থাপনসহ আধুনিক পর্যটক কেন্দ্র পরিণত করার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। কারণ এখানে আসা পর্যটকদের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে স্থানীয় শত শত মানুষ। স্থানীয় মানুষরা কর্ম খুঁজে পেয়েছেন। তাই স্থানটিকে আরো উন্নত করা প্রয়োজন।

এলজিইডি নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাকসুদুল আলম বলেন ভাঙ্গনের বিষয়টি সরেজমিনে দেখার জন্য স্থানীয় সাংসদ ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিলসহ আমরা সড়কটির ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো পরিদর্শন করেছি। এটি সংস্কারে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে পানি কমে যাওয়ার খুব অল্প সময়ের মধ্যে এর সংস্কার কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।