২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ধুনটের মানব দরদী স্কুল শিক্ষিকা বীথি আপা

গাছের চারা বিতরণ করছেন স্কুল শিক্ষিকা ফৌজিয়া বীথি - নয়া দিগন্ত

স্কুল শিক্ষিকা ফৌজিয়া বীথি। বাড়ি বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলা সদরে। তিনি পেশায় ধুনটের বেলকুচি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক। কিন্তু শুধু শিক্ষকতা ও সংসার নিয়েই তিনি সময় পার করেন না। তিনি স্কুল ডিউটির পরের সময়টা কাটান মানববতার কল্যাণে। তাই তাকে এলাকার মানুষ স্কুলের ম্যাডাম পরিচয়ের চেয়ে এখন মানবদরদী বীথি আপা হিসেবেই বেশি চেনেন।

স্থানীয়রা জানান, বীথির পিতা তৎকালীন ধুনট এনইউ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (বর্তমান ধুনট সরকারি এনইউ পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়) বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: মোজাম্মেল হক এবং স্বামী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাজ্জাকুল কবির বিদ্যুত। স্বামী ও স্ত্রী দুজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

জানা গেছে, বীথি সবসময় সমাজের অবহেলিত সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কথা চিন্তা করেন। তাই যেকোন বিপদে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান তিনি। গত কয়েক বছর আগে থেকে মানবতার কল্যাণে কাজ করলেও তার প্রচার ছিলো না। কিন্তু সম্প্রতি তার কর্মকাণ্ড এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে করোনাকালে বেশকিছু সামাজিক কর্মকাণ্ডে অসহায় লোকজন খুশি।

করোনা সংক্রমনের শুরুতে নিজ হাতে মাস্ক তৈরি করে সমাজের গরিবসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে বিতরণ শুরু করেন। এ যাবত তিনি প্রায় ৮ হাজার মাস্ক তৈরি করে বিতরণ করেছেন। এসময় নিজের বেতন ও বোনাসের টাকা দিয়ে চাল, ডাল তেল, আলু কিনে কর্মহীন নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে বিতরণ করেছেন। ঈদের আগে কর্মহীন মানুষের শিশুদের মাঝে নতুন জামা কাপড় ও ঈদ উপহার দিয়েছেন। নিজের বাড়ির পালিত ছাগল জবাই করে পঙ্গু ও গরিবদের মাঝে গোশত বিতরণ করেছেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ধুনট সদরের চান্দারপাড়া ও বেলকুচি গ্রামের শতাধিক পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা বিতরণ করেন এই মানব দরদী বীথি আপা। এসব চারা গাছের মধ্যে আম, থাই পেয়ারা ও লেবু রয়েছে।

এছাড়া বীথি বিভিন্ন সময় যে যার প্রয়োজনে সহায়তা চায় তা করে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে, গরিব শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফরম ফিলাপে আর্থিক সহায়তা প্রদান, শিক্ষা উপকরণ খাতা, কলম, বই ক্রয়ে সহায়তা প্রদান, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান ছাড়াও নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে অনেকের জীবন বাঁচাতে এবং অসুস্থ্য মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসায় সহায়তা করেছেন বীথি। এজন্য ধুনট হাসপাতালের স্টাফরা তাকে রসিকতার ছলে বলে থাকেন, জনস্বার্থে ব্র্যাক নয় জনস্বার্থে বীথি। গরীব অসহায় মানুষের ভরসাস্থলে পরিণত হওয়ায় জনপ্রতিনিধির চেয়ে মানুষ আগে তার কাছেই ছুটে যান।

নিজের জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে ফৌজিয়া বীথি বলেন, মানুষের ক্যলাণে কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত। তাই জীবনে নিজের জন্য কিছুই করিনি। সবসময় পরোপকারের চেষ্টা করি। এজন্য মানুষ আমাকে ভালবাসেন। এতেই আমি খুশি। আমি ইহজগতের জন্য কিছু না করে পরজগতের জন্য কিছু জমা রাখার চেষ্টা করছি। আমি সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়াতে সকলের সহায়তা ও দোয়া চাই।


আরো সংবাদ



premium cement