২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নাটোরে চাষিদের হাহাকার, ক্ষেতেই পুড়িয়ে ফেলছেন ফসল

নাটোরে চাষিদের হাহাকার, ক্ষেতেই পুড়িয়ে ফেলছেন ফসল - ছবি: নয়া দিগন্ত

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় দানা ভালো না হওয়ায় পাকা গম ক্ষেতেই পুড়িয়ে ফেলছেন কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, গমের ফলনে কাটার শ্রমিকের মজুরি খরচই উঠছে না। ফলে তারা গম না কেটে ক্ষেতেই আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে স্থানীয় কৃষিবিভাগের দাবি, এবছর গমের ফলন ভালো হয়েছে। মওসুমের শেষে দেরিতে বপনকারীদের গমের ফলন খারাপ হয়ে থাকতে পারে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, কয়েকদিন আগে মাঠজুড়ে গম চাষ দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলেও হঠাৎ অজানা কারণে গমে দানা না হওয়ায় এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গম চাষিরা। মাড়াইয়ের পর তা বিক্রি করে কাটার শ্রমিকের মজুরির মূল্যই উঠছে না। ফলে পাকা গম পুড়িয়ে ফেলতে তারা বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষভাবে উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের সাইলকোনা এলাকার বেশ কিছু কৃষকরা তাদের গম ক্ষেতেই পুড়িয়ে ফেলেছেন।

জানা যায়, চলতি মওসুমের  শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাঠে মাঠে জমি চাষ করে সার ও গম বীজবপন করেছিলেন কৃষকরা। নিয়মিত সার ও সেচ পরিচর্যায় সবুজে সবুজে ভরে উঠেছিলো পুরো মাঠ। সেইসাথে রঙিন হয়ে উঠেছিলো প্রান্তিক কৃষকদের স্বপ্ন।

কিন্তু গম যখন শীষ নিয়ে দাঁড়িয়েছে ঠিক তখনই অজানা এক সমস্যায় যেন কৃষকদের সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেছে। একবুক আশা নিয়ে যত্ন আর পরিচর্যা করেছেন যে কৃষক, তারাই এখন নিজের হাতে ক্ষেতেই সেই পাকা গম পুড়িয়ে ফেলছেন। 

উপজেলার সাইলকোনা গ্রামের আবুল কালাম, আলমগীর হোসেন , আলাউদ্দিন, সেলিম রেজা, জালাল উদ্দিন ও ভাটুপাড়া গ্রামের ছাকাত আলীর গমের দানা না থাকায় জমিতে থাকা গম গাছ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

অপরদিকে সাইলকোনা গ্রামের নজরুল ইসলাম , আব্দুল লতিফ, বাজিতপুর গ্রামের হাবিবুল্লা, আফাজ উদ্দিন, বিরাজ মোল্ল, কাঁকফো গ্রামের আবুল কালাম, আব্দুল লতিফ, কোয়ালিগাড়া গ্রামের রুহুল আলী, সাদেক আলী, রুবেল আলী, ক্ষিদ্রমালঞ্চি গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন, আ: ছাত্তার, তকিনগর গ্রামের নিজাম উদ্দিন, মাফেজ উদ্দিন, আতাহার আলী, আস্তিক পাড়া গ্রামের সালামসহ বেশ কিছু কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় হয়, এ বছর শুরুতে তেমন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটায় গমের কাঁচা গাছে মাঠ ভরে উঠেছিলো। কিন্তু শীষ নিয়ে দাঁড়ানোর সময় কৃষকরা লক্ষ্য করেন গম গাছের মাজা ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে। সেসময় দোকানী ও বিভিন্ন কোম্পানির লোকজনের পরামর্শে এই রোগ থেকে প্রতিকার পেতে কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো কাজে আসেনি। ফলে ওই সব জমিতে বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে দেড় থেকে তিন মন।

দানা খারাপ হওয়ায় যার বর্তমান বাজার মূল্য ১৫শ' টাকা থেকে দুই হাজার টাকা। এদিকে গম কাটা ও মাড়াই খরচ দুই হাজার টাকা। আর গমের বীজ বপন থেকে কাটার পূর্ব পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। এতে বিঘা প্রতি জমিতে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।

এছাড়াও স্বরুপপুর, যোগিপাড়া, মহজমপুর, ডাকরমারিয়া, জামনগর, ফাগুয়াড়দিয়াড়,  মাধোববাড়িয়া, কালিকাপুর, দিয়াড়, রহিমানপুর ও দেবনগর গ্রামসহ বেশ কিছু গ্রামের কৃষকরা এই সমস্যা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে যারা আগাম গম বীজ বপন করেছিলেন তাদের ফলন কিছুটা ভালো হয়েছে বলে জানা গেছে।

সাইলকোনা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। এই বছর এক বিঘা জমিতে গম বীজ বপন করেছিলাম। বপন থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু গমের দানা না হওয়ায় জমিতেই পুড়িয়ে ফেলেছি। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে কাজ বন্ধ থাকায় পরিবারের সকলকে নিয়ে কিভাবে চলব তা ভেবে পাচ্ছি না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী বলেন, এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাগাতিপাড়ায় গমের ফলন ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। তবে যেসব চাষিরা নির্দিষ্ট সময়ের থেকেও অনেক দেরিতে বীজবপন করেছেন তাদের গমের ফলন ভালো হয়নি। প্রত্যেকটি ফসলের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে সেই সময়ের পরে চাষ করলে সেই ফসল হয় না। এই সকল কৃষকদের ক্ষেত্রে সেই ঘটনাটাই হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement