২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শিক্ষকের ছোড়া কলমের আঘাতে বগুড়ায় দৃষ্টি হারাল দুই শিক্ষার্থী

- নয়া দিগন্ত

লেখাপড়ায় অমনোযোগী ও দুষ্টুমি করার অপরাধে বগুড়া শাজাহানপুরে মালীপাড়া গ্রামীণ একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীর দিকে কলম ছুড়ে মারায় ওই কলমের আঘাতে দৃষ্টি হারিয়েছে দুই শিশু শিক্ষার্থী। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় হলেও স্কুল কর্তৃপক্ষের চাপে বিচার চাইতে সাহস পাচ্ছে না ভুক্তভোগী পরিবার। শিশু দু’টি হলো- উপজেলা মালীপাড়া গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র শাহ আলম (৯) এবং রামচন্দ্রপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র সোহান (১৩)।

শাহ আলমের মা-বাবা জানান, গত ১৪ জানুয়ারি শাহ আলম কোচিং করাকালে লিখতে ভুল করায় ও দুষ্টুমি করার অপরাধে শিক্ষক রীমা খাতুন তার হাতের কলমটি ছুড়ে মারেন। এতে কলমটি শাহ আলমের চোখে লাগে এবং সে কান্নাকাটি করতে থাকে। পরে কিছুটা শান্ত করে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় এবং বিষয়টি মা-বাবাকে বলতে নিষেধ করে; কিন্তু চোখের ব্যথা বেশি হওয়ায় কান্নাকাটি শুরু করলে বাড়ির আশপাশের সহপাঠীরা তার মা-বাবাকে বিষয়টি জানিয়ে দেয়। পরদিন মা-বাবা বিচার নিয়ে বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষিকা লুৎফা জাহান ও পরিচালক আবু সাঈদ বাদশা বিদ্যালয়ের সুনাম রক্ষার্থে চুপ থাকতে বলেন এবং চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় বহন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিশু শাহ আলমকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন; কিন্তু চোখের চিকিৎসায় টাকার পরিমাণ বেশি জানতে পেরে পরদিন ডাক্তারকে বলে ছাড়পত্র নেয়া হয়। এরপর টাকা সংগ্রহ ও গড়িমসি করে তারা সময় ক্ষেপণ করেন।

এভাবে মাস পেরিয়ে যাওয়ায় শাহ আলমের মা-বাবা বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হলে চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে অস্বীকার করে বিদ্যালয়ের পরিচালক আবু সাঈদ বাদশা ও প্রধান শিক্ষক লুৎফা জাহান। পরে তারা বগুড়া চক্ষু ডাক্তারের কাছে গেলে ওই চোখ আর ঠিক হবে না বলে ডাক্তার জানিয়ে দেন। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মা-বাবা।

একই ধরনের কথা জানান, শিশু সোহানের মা আনজুয়ারা বেগম। তিনি জানান, ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কলমের আঘাতে তার ছেলে সোহানের এক চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। অনেক দিন চিকিৎসা করেও ভালো হয়নি। পরে তাকে ভান্ডারপাইকা গ্রামে হাফেজিয়া মাদরাসায় ভর্তি করেছি।

শিশু সোহান জানায়, জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিল; কিন্তু শিক্ষক চোখে কলম ছুড়ে মারায় সে আশা আজ ধুলোয় মিশে গেল। শিশু শাহ আলম জানায়, আমি লিখতে ভুল করায় ম্যাডাম আমার দিকে কলম ছুড়ে মেরেছিল। সাথে সাথে চোখ দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। এর পর থেকে আর চোখ দিয়ে দেখতে পারছি না।

এ বিষয়ে গ্রামীণ একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক আবু সাঈদ বাদশা ও প্রধান শিক্ষক লুৎফা জাহান, শিক্ষকের ছুড়ে মারা কলমে শিশু দু’টির চোখে আঘাত লাগার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এসব তো পুরনো কথা। নতুন করে বলার কী আছে। তা ছাড়া দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। তাই বলে এসবের দায় প্রতিষ্ঠান নিতে পারে না।’

শাজাহানপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তৌফিক আজিজ বলেন, বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো উপজেলা শিক্ষা অফিসের কাছে দায়বদ্ধ না। তাই ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া এ বিষয়ে জানানো হয়নি। তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ওই শিক্ষককে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা জরুরি। একই ধরনের মন্তব্য করেন শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা পারভিন।


আরো সংবাদ



premium cement