২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঘোড়ার গাড়িতেই ভরসা যমুনার চরবাসীর

- ছবি : নয়া দিগন্ত

যমুনার চরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ঘোড়ার গাড়ি। বর্ষায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। শুষ্ক মৌসুমে ঘোড়ার গাড়ির বিকল্প হিসেবে হেঁটেই নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটাতে হয় চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের। হেঁটে যাতায়াত করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন দিন দিন বাড়ছে।

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চলে একসময় যাতায়াতে ব্যবহৃত হতো গরু ও মহিষের গাড়ি। ঘোড়ার গাড়ি ছিল সে সময়ে রাজা-বাদশাহ ও জমিদারদের পরিবহন। ঘোড়ার গাড়িতে ওঠার শখ সাধারণ মানুষের কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কালের পরিক্রমায় সেই ঘোড়ার গাড়ি এখন প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মানুষের পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাড়িয়েছে।

পানি শুকিয়ে চর জাগলেই শুরু হয় কৃষকদের কাজ। এ সময় কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করেন বালুর চরে ফসল ফলানোর স্বপ্ন নিয়ে। চরে সাধারণত বাদাম, ভুট্টা, মসুর ডাল, খেসারি ডাল, কাউন, বোরো ধান, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ফসল চাষ করেন কৃষকরা। এ ছাড়া জ্বালানির কাজে ব্যবহার করার জন্য কাশফুলের শুকনো খড় সংগ্রহ করেন চরের বাসিন্দারা।

উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলার জন্য ঘোড়ার গাড়িই তাদের একমাত্র ভরসা। ঘোড়ার গাড়ির চালক হিসেবে রয়েছে বেশির ভাগ ২০ থেকে ২২ বছর বয়সের ছেলেরা। পরিবারে অভাব-অনটনের কারণে সংসারের হাল ধরতেই এ কাজ বেছে নিয়েছে বলে জানায় তারা।

চরনাটিপাড়া গ্রামের ঘোড়ার গাড়ি চালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিন ভাই, দুই বোন ও মা-বাবা নিয়েই তাদের সংসার। বাবা একক আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। সংসারে সহযোগিতার জন্য একটি ঘোড়া কিনে দেন জাহাঙ্গীর আলমকে। নিজেদের ফসল ঘরে তোলার ফাঁকে গাড়িতে অন্যদের ফসল এনে দিয়ে বাড়তি আয় শুরু করে জাহাঙ্গীর আলম। এভাবে সংসারে অভাব কমতে থাকে। পরে আরো দুটি ঘোড়া কিনে ভাড়ায় খাটাতে শুরু করেন জাহাঙ্গীর আলমের বাবা। এতে আরো দুইজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। সব মিলিয়ে ভালো দিন কাটছে তাদের।

ঘোড়ার গাড়ি তৈরিতে খরচ কম। ঘোড়ার দামও হাতের নাগালে। ৩০-৫০ হাজার টাকা হলেই মিলছে একটি ঘোড়া। কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে বেশ কয়েক বছর গাড়ি টানতে পারে ঘোড়াগুলো। তবে নিয়মিত ঘোড়াকে প্রয়োজনীয় খাবার খাওয়াতে হবে। তা না হলে শক্তি হারিয়ে ফেলবে ঘোড়া। খাদ্য হিসেবে ধানের কুঁড়া, সরিষার খৈল, ছোলা, খেসারী কালাই, ভূষি ও চালের খুদ পছন্দ ঘোড়ার। সব মিলিয়ে ঘোড়া পালনে খরচও কম। অনুকূল পরিবেশের কারণে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।


আরো সংবাদ



premium cement