২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্ত্রীকে হত্যা করে ডাকাতির গল্প সাজিয়েছেন স্বামী

স্ত্রীকে হত্যা করে ডাকাতির গল্প সাজিয়েছেন স্বামী - ছবি : নয়া দিগন্ত

নওগাঁর সাপাহারে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ডাকাতির ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করছে চতুর স্বামী নজরুল ইসলাম। শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার বিদ্যানন্দী বাহাপুর গ্রামে নিশৃংস ঘটনাটি ঘটেছে। চতুর নজরুল ওই গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ছেলে।

ঘটনা স্থলে গিয়ে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে তার বাবা-মা বাড়ীতে ছিল না। নজরুল বাড়ীতে তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে একই থাকত। ঘটনার দিন রাত ২টার দিকে উক্ত গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ছেলে নজরুল(৩২) বাড়ী থেকে বের হয়ে গ্রামের অন্যলোকের দরজায় আঘাত করলে, কয়েকজন বেরিয়ে আসে এবং তাকে তার মুখে কসটেপ আটানো ও হাত দু’টি পিছনের দিকে গামছা দিয়ে বাধাঁনো অবস্থায় দেখতে পায়। তার মুখের টেপ ও বাধঁন খুললে সে বলে, আমার বাড়ীতে ডাকাত দল প্রবেশ করেছে, তারা আমার ছেলেকে কুপের মধ্যে ফেলে দিতে চায়, আপনারা আমার ছেলেকে বাঁচান বলে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

গ্রামের লোকজন তার বাসায় ছুটে এসে দেখতে পায়, বিছানায় তার স্ত্রী (রুমী) (২৫) অচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছে ও সন্তান রাফি (২) ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে। লোকজন তৎক্ষনাত তাকে ও তার স্বামী নজরুল ইসলামকে সেখান থেকে উদ্ধার করে রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক রুমীকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত রুমীর গলায় শ্বাস রোধ করে হত্যাকরার স্পষ্ট চিহৃ রয়েছে।

মৃত গৃহবধু রুমীর স্বামী নজরুল ইসলামের সাথে হাসপাতালে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, রাত দেড়টার দিকে সে বাড়ীর বাথরুম থেকে বেরুনোর সময় তাকে অপরিচিত ৩জন লোক ঝাপটে ধরে এবং তাকে ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে বাইরের দরজার চাবি আদায় করে।

বাড়ীর দরজায় তালা ছিল, তারা কি করে বাসায় প্রবেশ করল? এ প্রশ্নের জবাবে সে কিছুই বলতে পারেনা। এর পর ডাকাতরা চাবি দিয়ে বাড়ীর সদর দরজা খুললে আরো ৬জন লোক বাহির থেকে বাসায় প্রবেশ করে এবং তাকে তার শয়ন ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে গামছা দিয়ে দু;হাত বেধেঁ ফেলে ও মুখে কসটেপ এঁটে দেয়। এর পর আবারো তাকে ঘর হতে বের করে নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় যায়। ওই সময় সে ডাকাত দলের হাত থেকে ফসকে সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে প্রতিবেশীদের ডাক দেয়। এর মধ্যে ঘরে ডাকাতদল কি করল এবং কি সম্পদ লুট করল তা স্বামী নজরুলের জানা নেই বলে জানান এবং এ পর্যন্ত তার স্ত্রী ও সন্তান ঘুমেই ছিল বলে তিনি জানান।

বিষয়টি নিয়ে বড় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে, কোনো পরকীয়া কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সৃষ্ট কোনো মন মালিন্যের কারণে সে তার স্ত্রীকে ঘুমের ঘোরে শ্বাস রোধ করে হত্যা করতে পারে এ নিয়ে এলাকায় খুব জোরালো গুঞ্জন চলছে। পুলিশ ও বলছে এটি কোনো চুরি কিংবা ডাকাতির ঘটনা নয়, চুরি বা ডাকাতি হলে তারা ঘরের মধ্যে থাকা নগদ টাকা পয়সা, গহনা কিছুই নেয়নি সবই ঠিক মত অবস্থায় রয়েছে।

একটি জিনিসপত্র ও খোয়া যায়নি কিংবা কোনো দরজা জানালাতেও কোনো চিহৃ নেই সবই অক্ষত রয়েছে। তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো ঘনটা থাকতে পারে বলেও পুলিশ ধারণা করছে। নিহত গৃহবধুর পিতা রমজান আলী ও বড় আব্বা নুরমোহাম্মাদ দাবী করে বলেছেন, তাদের মেয়েকে জামাই নজরুল হত্যা করে ডাকাতির নাটক সাজিয়েছে। তাদের বাড়ী ধামইর হাট উপজেলার ফতেপুর গ্রামে। ঘটনার পর রাত সাড়ে ৩টা হতে সাপাহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাই এক দল পুলিশ নিয়ে ঘটনা স্থলে রয়েছে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত, কোনো মামলা দায়ের না হলেও হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, এটি চুরি কিংবা ডাকাতির কোন ঘটনা নয়। স্বামীর দ্বারাই ঘটনাটি ঘটতে পারে, তবে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উম্মোচিত হবে বলে তিনি মনে করেন। নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার মো: রাশেদুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement