২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাজধানীতে চলছে ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা

ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা উদ্বোধন শেষে ওয়ালটন প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করছেন সজীব ওয়াজেদ জয় -

দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে তিন দিনব্যাপী ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা’। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এ মেলা উদ্বোধন করেন। তিন দিনের এই মেলায় বিভিন্ন বিষয়ে ১৩টি আলোচনা সভা হবে। এসব সভায় মন্ত্রী ও দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত থাকবেন।
মেলায় প্রযুক্তির বিস্ময়কর সংস্করণ ‘ফাইভ জি’ প্রদর্শন করা হয়। ডিজিটাল প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উপযোগী মানবসম্পদ সৃষ্টি, ডিজিটাল প্রযুক্তির আধুনিক সংস্করণের সাথে জনগণের সেতুবন্ধন তৈরি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন অগ্রগতি তুলে ধরাই ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার অন্যতম মূল লক্ষ্য। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উদ্যোগে ডিজিটাল প্রযুক্তি খাতের সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের নিয়ে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ বছরের এই মেলার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার প্রযুক্তির মহাসড়ক’।
ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা উদ্বোধনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দ্রুত সম্প্রসারিত হওয়ায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই গার্মেন্টস খাতের আয়কে ছাড়িয়ে যাবে। বেশির ভাগ আইটি সেবা ইন্টারনেটভিত্তিক ও ইন্টারনেটের মাধ্যমেই এ খাতে রফতানি হচ্ছে। তাই প্রকৃতপক্ষে কী পরিমাণ রফতানি হচ্ছে তা জানা সম্ভব নয়। আইটি খাত থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আন-অফিসিয়ালি আরো অন্তত ১০০ থেকে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার রফতানি হচ্ছে বলে আমরা ধারণা করছি। কিন্তু তা জানা যাচ্ছে না। তবে আমাদের আইটি সেবা গার্মেন্টস শিল্পের রফতানি আয়কে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথেই এগোচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের দেশেও ৫জি প্রযুক্তি চালু হবে।
ফাইভ-জির নানাবিদ সেবা ও প্রযুক্তি প্রদর্শন চলছে ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলায়। এ প্রযুক্তি কিভাবে ব্যবহার করা যাবে তাও দেখানো হচ্ছে মেলায়। হুয়াওয়ে, জেডটিই, এরিকসন ফাইভ-জি প্রযুক্তির প্রদর্শন করছে। মেলায় দেখানো হচ্ছে, কিভাবে ফাইভ-জির সেবার মাধ্যমে মানুষ ছাড়াই ড্রোনের মাধ্যমে সব ধরনের কঠিন কাজ সহজে করা যায়। কিভাবে চালক ছাড়া গাড়ি সিগন্যাল মেনে চলাচল করছে। কিভাবে ঢাকা শহরে থেকে আমেরিকান চিকিৎসকের সেবা নেয়া যায় ইত্যাদি।
ফাইভ-জি অভিজ্ঞতা
ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলায় প্রথমবারের মতো ফাইভ-জি অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। এ অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দিয়েছে হুয়াওয়ে। এর আগে ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই বাংলাদেশে ফাইভ-জি সেবা পরীক্ষায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেড। তখন ৮০০ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম ব্যবহার করে প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ ৪ জিবি পর্যন্ত ইন্টারনেট গতি পাওয়া গিয়েছিল।
সেখানে এখন মাত্র ১০০ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম (গতবারের ৮ ভাগের এক ভাগ) ব্যবহার করেই প্রতি সেকেন্ডে ১.৪ জিবি থেকে ১.৭ জিবি পর্যন্ত গতিতে ডেটা ট্রান্সফার করা সম্ভব হবে। দর্শনার্থীরা মেলার উদ্বোধনী দিনেই সেকেন্ডে ১.৬ জিবি গতিতে ডেটা ট্রান্সফারের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
ফাইভ-জির উন্নয়ন ও গবেষণায় হুয়াওয়ের দীর্ঘ দিনের অবিরাম প্রচেষ্টার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ফাইভ-জির অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও গবেষণায় গত ১০ বছর কাজ করছে হুয়াওয়ে। আর এর মধ্যেই ব্যয় করা হয়েছে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিইও ঝাং ঝেংজুন বলেন, প্রযুক্তিগত সুবিধাকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ২১ বছর ধরে এ দেশের আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি, টেলিকম অপারেটর ও স্থানীয় সহযোগীদের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে হুয়াওয়ে। এখন ফাইভ-জি চালু হয়েছে এবং হুয়াওয়েও প্রস্তুত। ফাইভ-জির গবেষণা ও উন্নয়নে আমরা এক দশক ধরে কাজ করছি। যেখানে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফাইভ-জি গবেষণা ও উন্নয়নে আমরাই শীর্ষস্থানীয় এবং ২১ হাজারেরও বেশি থ্রিজিপিপি ফাইভ-জি এনআর সমেত ফাইভ-জি পেটেন্টও আমাদেরই সবচেয়ে বেশি।
মেলা চলাকালে আগত দর্শনার্থীরা হুয়াওয়ের প্যাভিলিয়নে সরাসরি ফাইভ-জি স্পিড ও লো- ল্যাটেন্সি অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন। এ ছাড়া এখানে আকর্ষণ হিসেবে থাকছে, বিশেষ একটি রোবট। যাকে হাতের ইশারায় পরিচালনা করে ফুটবল খেলা যাবে। ফাইভ-জি প্রযুক্তিতে কত দ্রুত হিউম্যান টু মেশিন কিংবা মেশিন টু মেশিন কমিউনিকেশন সম্ভব, তা তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই এই আয়োজন তাদের।
এর পাশাপাশি আরো একটি প্লে-জোন থাকছে, যেখানে সবাই ফাইভ-জি প্রযুক্তির মাধ্যমে রিয়েল-টাইম ভি-আর উপভোগ করতে পারবেন। ফাইভ-জি ভি-আর পরার সাথে সাথেই অংশগ্রহণকারী নিজেকে খুঁজে পাবেন স্কিইরত অবস্থায়। উন্নত প্রযুক্তি এবং অডিও কিংবা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সরাসরি অভিজ্ঞতা দিতেই হুয়াওয়ের এই আয়োজন। থাকছে হুয়াওয়ের ফাইভ-জি স্মার্টফোনের অভিজ্ঞতা নেয়ার সুযোগ। এ ছাড়া দর্শনার্থীরা চাইলে কিনতে পারবেন বাজারে বর্তমান হুয়াওয়ের ফোনগুলোও।
ওয়ালটনের প্রযুক্তিপণ্যের প্রশংসায় জয়
ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা উদ্বোধন শেষে ওয়ালটন প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। এ সময় তিনি ওয়ালটনের তৈরি ল্যাপটপ, মাদারবোর্ড, র্যাম ইত্যাদি প্রযুক্তিপণ্য হাতে নিয়ে দেখেন। ওয়ালটন কম্পিউটার বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী জানান, ওয়ালটনের তৈরি বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য দেখে দারুণ উচ্ছ্বসিত হন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এসব প্রযুক্তিপণ্যের রফতানি আরো বাড়ানোর ব্যাপারে তিনি জোর দেন। এ ক্ষেত্রে সরকার সব ধরনের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি। মেলা চলাকালে ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে সব পণ্যে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট পাবেন ক্রেতারা।
মেলায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কার্যকর ভূমিকার জন্য ১৪টি ক্যাটাগরিতে সম্মাননা দেয়া হবে। মেলায় ২৫টি স্টল, ২৯টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ২৮টি প্যাভিলিয়ন আছে। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা উন্মুক্ত।

 


আরো সংবাদ



premium cement