কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত প্রসঙ্গে
- ১২ জুলাই ২০২৪, ০০:০৫
বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার সমুদ্রসৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম। তার পরও বর্তমানে এর বেহাল অবস্থা দেখে হতাশ হতে হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত এই সমুদ্রসৈকত। এর আগে রয়েছে মিয়ানমার ও ভারত সীমান্ত, দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগর। কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ সমুদ্রসৈকতের পরিবেশ এখন পর্যন্ত বিদেশী পর্যটকদের তেমন আকর্ষণ করতে পারছে না। গোটা সমুদ্রসৈকতের অনেক এলাকা মনে হয় ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যত্রতত্র আবর্জনায় ক্রমেই নষ্ট হচ্ছে সমুদ্রসৈকতের পরিবেশ, যা দেখার কেউ নেই। ফলে বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্রসৈকতটি ধীরে ধীরে হারাচ্ছে তার অপরূপ সৌন্দর্য। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
সমুদ্রসৈকতটি এত নোংরা, অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর যে, ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সৈকতের বালিকা মাদরাসা পয়েন্ট থেকে মারমেড বিচ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ডাবের খোসা, ময়লা ও খালি পানির বোতল, চিপসের খালি প্যাকেট, চীনাবাদামের খোসা, আজেবাজে ময়লার স্তূপ দেখে মন বিষিয়ে ওঠে। তার ওপর সমুদ্রসৈকতের কাছে ভাতের হোটেল ও ঝুপড়ি দোকানের ময়লা পড়ে থাকতে দেখা যায়। বোধহয় এসব পৌরসভা বা জেলা প্রশাসনের চোখে পড়ে না। হকার, ভিক্ষুক, ফেরিওয়ালাদের দৌরাত্ম্যে সৈকতে পর্যটকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা বা সুন্দরভাবে সমুদ্র বিনোদন উপভোগ করতে পারেন না। এতে স্বজনদের নিয়ে অনেককেই চরম অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়।
জানা যায়, সৈকতের উন্নয়ন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ভিক্ষুক-হকারমুক্ত রাখার দায়িত্ব জেলা প্রশাসন, বিচ ম্যানেজমেন্ট ও ট্যুরিস্ট পুলিশের ওপর ন্যস্ত। কিন্তু বাস্তব অবস্থা দেখে কারো কোনো দায়িত্ব আছে বলে মনে হয় না। এসব কারণে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত কোনোভাবেই বিদেশী সি-বিচের মতো গড়ে উঠতে এবং বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারছে না।
অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন এই সমুদ্রসৈকতে শত শত কুকুরের উৎপাত। নোংরা ও গন্ধে ভরা ঘোড়া, হকার ও বাইকের দৌরাত্ম্যে পর্যটকরা অতিষ্ঠ ও ক্ষুব্ধ। ট্যুরিস্ট পুলিশের অবেহলা, উদাসীনতা ও জেলা প্রশাসনের নজরদারির অভাবে গোটা সমুদ্রসৈকত তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। অথচ প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এ সৈকতে আসেন।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে উড়ন্ত বালুর জন্য বসা যায় না। তার পরও পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত অনেক হোটেল-মোটেল ছাড়াও সৈকতের কাছেই কয়েকটি পাঁচতারকা হোটেল রয়েছে। সেবা প্রদানে যথেষ্ট অবহেলার জন্য বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হেটেল-মোটেলগুলোর অবস্থা বেহাল। তবে কক্সবাজার শহরটি দারুণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখে পর্যটকসহ সবাই বেশ খুশি।
পর্যটন নগরী কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে যেমন সমস্যা আছে, ঠিক তেমনি রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনাও। কিন্তু সঠিক নির্দেশনা বা সৈকত নীতিমালা না থাকায় বছরের পর বছর অনেকটাই অবহেলিত হয়ে আছে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সৈকতসহ এ অঞ্চলের পর্যটন স্পষ্টগুলো। পরিবেশ দূষণের কারণেও দিন দিন বিনষ্ট হচ্ছে সৈকতের সৌন্দর্য।
কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সি-বিচ এলাকার সৌন্দর্য বর্ধন, উন্নয়ন ও পরিচ্ছন্নতা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো থাকায় বড় ধরনের তেমন দুর্ঘটনা ঘটেনি। কক্সবাজার শহরে রোহিঙ্গাদের বিবিধ কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে মাদক ব্যবসায়ের অভিযোগ আছে। তবে প্রশাসন সচেতন। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কক্সবাজার সেনানিবাস বা ক্যান্টনমেন্টকে আরো আধুনিক ও শক্তিশালী করার দরকার বলে অনেকে মনে করেন।
নিজেরা সৈকতের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজনে আগামী ১০ বছরের জন্য থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত বা জাপানের কাছে কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকত লিজ দেয়া যেতে পারে। তারা সি-বিচটিকে একটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে উন্নত সেবা দিতে কার্পণ্য করবে না। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। আরো বাড়বে দেশীয় মুদ্রার পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনাও। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত সার্ফিংয়ের জন্য খুবই উপযোগী। সমুদ্রের কোনো একটি পয়েন্টে যদি সার্ফার জোন প্রতিষ্ঠিত করা যায় এবং তা সার্বক্ষণিক তদারকি করা হয় তাহলে এ খাত থেকেও প্রতি বছর যথেষ্ট পরিমাণে রাজস্ব আয় করা সম্ভব। এতে করে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটতে পারে। বাড়তে পারে দেশী-বিদেশী পর্যটক।
মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা